X
বুধবার, ০৭ মে ২০২৫
২৪ বৈশাখ ১৪৩২
পড়ে আছে খালি তোষক

বাড়িওয়ালা বলতেন, ‘ওরা ভদ্র ছেলে’

আমানুর রহমান রনি
১৭ জুলাই ২০১৬, ১৯:৩১আপডেট : ১৮ জুলাই ২০১৬, ১৩:৩১

শেওড়াপাড়ায় নুরুল ইসলামের বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার মেঝে শেওড়াপাড়ার যে ফ্ল্যাটে জঙ্গি আস্তানা গেড়েছিল জঙ্গিরা, সেখানে তিনটি কক্ষ রয়েছে। কোনও কক্ষে কোনও ধরনের  আসবাব নেই। সামনের কক্ষটির খালি মেঝেতে একটি তোষক পড়ে আছে। প্রতিবেশীদের দাবি, গত এপ্রিলে শিক্ষার্থী পরিচয়ে এক তরুণ ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই বাসায় থাকত। তবে তাদের বাসার সামনে তেমন দেখা যেত না। ঈদের আগে কয়েকজন বাসা থেকে চলে যায়, ঈদের পরদিনও একজনকে দেখা গেছে। এরপর আর কাউকে দেখা যায়নি কেউ।
রবিবার পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ৪৪১/৮ নম্বর নির্মাণাধীন বাসাটির চারতলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি তলায় তিনটি করে ফ্ল্যাট। বাড়িওয়ালা নুরুল ইসলাম নাহিদ (৬০) পেশায় শিক্ষক ছিলেন। তার দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ে দেশের বাইরে থাকেন। স্ত্রী, ছেলে এবং ছেলের স্ত্রী নিয়ে বাড়ির দ্বিতীয় তলার বাম পাশের ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি। বাড়িটির প্রধান গেইট দিয়ে ‍ঢুকেই ডানপাশে গ্যারেজ। বামপাশে একটি ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটটির দরজার পাশেই কলাপসিবল গেইট। ওই গেইট দিয়ে ভেতরের ওপরের ফ্ল্যাটে উঠতে হয়। নিচতলায় কলাপসিবল গেইটের বাইরে একটি এবং ভেতরে দুটি ফ্ল্যাট। বাইরের ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা।

নিচতলার ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া সজীব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি পোশাক কারখানায় কাজ করি। আগে বাইরের ফ্ল্যাটটিতে ভাড়া ছিলাম। চারমাস আগে ভেতরের ফ্ল্যাটে আসি। এরপর বাইরের ফ্ল্যাটটি বাড়িওয়ালা মেস ভাড়া দেন। তবে ওই ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে আমাদের তেমন কথা হতো না।’ তিনি বলেন, ‘মাঝেমাঝে একজনকে দেখতাম। তার বয়স ২৩/২৪ হবে। তবে কথা হয়নি কখনও। আমরা সবাই ব্যস্ত। সকালে যাই রাতে বাসায় ফিরি। কে থাকত, তাও জানি না। তবে ঈদের আগে সবাইকে একবার দেখছি। এরপর ঈদের পরদিন একজনকে দেখেছিলাম। তারপর আর তাদের দেখিনি।’ শেওড়াপাড়ায় নুরুল ইসলামের বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার দরজা (বন্ধ)

নিচতলার অন্য এক ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া ইস্রাফিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি গাড়ি চালক। আমরা গত মে মাসে এখানে ভাড়া আসি। আমার মা, বোন ও স্ত্রী এই বাসায় থাকেন। সবাই কাজ করেন। মাঝেমাঝে ওই বাসার ছেলেদের দেখেছি। তবে কথা হয়নি।’ তিনি  আরও বলেন, ‘বাড়িওয়ালা আমাদের বলেছিলেন, ওরা সবাই ছাত্র। ওরা খুব ভদ্র ছেলে। প্রত্যেকের বয়স ২২ থেকে ২৪ বছর হবে। দেখতে ছাত্রের মতোই মনে হতো।’

ইস্রাফিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বুধবার রাত ৪টার দিকে একবার পুলিশ আসে। তারা সেদিন ওই ফ্ল্যাটে তালা দেখতে পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর শনিবার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে আবার আসে। তবে পুলিশ কী করেছে  তা আমি জানি না।’ তিনি বলেন, ‘বাড়িওয়ালা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় থাকেন। তাকে পুলিশ নিয়ে গেছে বলে শুনেছি। এরপর কী হয়েছে, জানি না।’

বাড়ির তৃতীয় তলার ডানপাশের ফ্ল্যাটে থাকেন মাসুম ও লাইজু দম্পতি। মাসুমের মা, বোন ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেও তাদের সঙ্গে থাকে। তারা আটমাস ধরে ওই বাসায় ভাড়া থাকেন। বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় লাইজু’র।তিনি বলেন, ‘বুধবার ভোর রাতে ছয়রোজা রাখার জন্য আমরা সেহেরি খাওয়ার জন্য উঠি। এসময় পুলিশ হেলমেট পরা এক ব্যক্তিকে নিয়ে ওই বাড়িতে আসে। তারা বাড়িওয়ালার সঙ্গেও কথা বলে। নিচতলার ফ্ল্যাটের ওই বাসায় অভিযান চালায়। তবে তারা কী পেয়েছে জানি না। এরপর শনিবার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ফের পুলিশ আসে। বাড়িওয়ালাকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি বাড়িওয়ালা নিচতলার ওই ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়াদের তথ্যফরম রাখেননি। পুলিশের কাছে কোনও ফরম জমা দেননি। একজনের একটি ফরম রেখেছিলেন। সেটা পুলিশ নিয়ে গেছে বলে শুনেছি।’

বাড়িওয়ালা নুরুল ইসলাম শেওড়াপাড়া এলাকায় ৩৫ থেকে ৪০ বছর ধরে থাকেন বলে জানান স্থানীয় যুবক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাড়িওয়ালার দুটি বাড়ি আছে। একটি বাড়ি ডেপেলপার কোম্পানিকে দিয়েছেন। আর এই ৪৪১/৮ নম্বর বাড়িটি তিনি ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে তৈরি করেছেন।     

শেওড়াপাড়ায় নুরুল ইসলামের বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় পাওয়া ওষুদের শিশি

উল্লেখ্য, গুলশানে হলি আর্টিজান হোটেলে হামলার পর রাজধানীর ভাটারা থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর রোডের, ই-ব্লকের টেনামেন্ট-৩ এর ফ্ল্যাট -এ/৬ এ একত্রিত হয়েছিল। হামলার পর জঙ্গিদের সহযোগী সদস্যরা পালিয়ে যায়। তারা গত মে মাসের ১৬ তারিখে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিল। এছাড়া ফ্ল্যাট মালিক ও নর্থ সাউথের প্রো-ভিসি গিয়াস উদ্দিন আহসান বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। এই ঘটনার একদিন পর শেওড়াপাড়ার ওই বাসাটির সন্ধান পায় পুলিশ। পুলিশের ধারণা গুলশানে হামলার আগে এসব বাসায় অবস্থান নিয়েছিল জঙ্গিরা। এছাড়া, গুলশানে জঙ্গি হামলায় জড়িত কয়েকজন ঝিনাইদহের একটি মেসে ছিল বলেও তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এসব বিষয়ে বর্তমানে তদন্ত করছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট।

পুলিশ জানিয়েছে, ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী ভাড়াটিয়াদের নাম, ঠিকানা ও পরিচয়সহ নির্ধারিত ফরম পূরণ করে থানায় জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও শেওড়াপাড়া ও বসুন্ধরার দুই বাড়ির মালিক তা করেননি।

ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, শেওড়াপাড়ার ফ্ল্যাট থেকে হাতে তৈরি গ্রেনেড ও কালো পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে।

 আরও পড়তে পারেন: নর্থ সাউথের উপ-উপাচার্যসহ ৪ জন ৮দিনের রিমান্ডে

/এআরআর/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কলাপাড়ায় খাল থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার
কলাপাড়ায় খাল থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার
পাকিস্তানে ভারতের হামলা: দরপতনের ঝুঁকিতে ভারতীয় রূপি
পাকিস্তানে ভারতের হামলা: দরপতনের ঝুঁকিতে ভারতীয় রূপি
ইন্টারের কোচ হয়ে আমি ভীষণ আনন্দিত: ইনজাগি 
ইন্টারের কোচ হয়ে আমি ভীষণ আনন্দিত: ইনজাগি 
শিল্প খাতে বাড়ছে সংকট, ঘুরে দাঁড়ানোর কৌশল কী
শিল্প খাতে বাড়ছে সংকট, ঘুরে দাঁড়ানোর কৌশল কী
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে নতুন আইন
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে নতুন আইন
ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন, দুই শনিবার খোলা থাকবে অফিস
ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন, দুই শনিবার খোলা থাকবে অফিস
৩০ পেরোনোর পর বলিরেখা আটকাতে এই ৫ টিপস মেনে চলা জরুরি
৩০ পেরোনোর পর বলিরেখা আটকাতে এই ৫ টিপস মেনে চলা জরুরি
শব্দচয়ন ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’, হেফাজতের দুঃখপ্রকাশ
শব্দচয়ন ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’, হেফাজতের দুঃখপ্রকাশ
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর খবরদারি না করার আহ্বান ইউজিসির
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর খবরদারি না করার আহ্বান ইউজিসির