বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দু’টি বিষয়কে সামনে রেখে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসা করেছেন দুদক কর্মকর্তারা। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল পৌনে নয়টা থেকে শুরু করে দুপুর পৌনে দু’টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়।
তদারক কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক জায়েদ হোসেন খান ও সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে ৯ জন কর্মকর্তা আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসা করেন।
কী কী বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে জানতে চাইলে তদারক কর্মকর্তা সৈয়দ ইকবাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকের ঋণের বিষয়ে আমরা যে মামলাগুলো করেছি, সেগুলোর বিষয়ে কথা বলেছি। কারণ, ঋণগুলো যে তারা বোর্ডে অনুমোদন করেছেন,অনুমোদনের অথরিটি হিসেবে কিসের ভিত্তিতে তারা সেগুলো দিয়েছেন তা জানতে চেয়েছি। কোন বিবেচনায় তারা সেগুলো দিয়েছেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘ঋণের নামে টাকাগুলো নেওয়া হয়েছিল। লোন অ্যাকাউন্ট থেকে এসব টাকা আবার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে। পরে সেখান থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেই টাকা কোথায় কোথায় গেছে, কোন অ্যাকাউন্টে গেছে এসব আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি।’
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘যেভাবে টাকা লেয়ারিং হয়েছে, তা বুঝতে দেরি হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদে বেশি সময় লেগেছে।’
এর মধ্যেই কিছু টাকা রি-শিডিউল ও ফেরত এসেছে বলে জানান ইকবাল মাহমুদ। তবে টাকা ফেরত বা রি-শিডিউলের সঙ্গে ক্রিমিনাল লায়াবিলিটির কোনও সম্পর্ক নেই বলেও জানান দুদক চেয়ারম্যান ।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও এর তিনটি শাখায় প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। গুলশান শাখায় এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখায় ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান কার্যালয়ে প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা ও দিলকুশা শাখায় ১৩০ কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ শনাক্ত করা হয়। এছাড়া, বেসিক ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তে আরও একহাজার কোটি টাকার জালিয়াতি প্রকাশ পায়। এখন পর্যন্ত ব্যাংকটির প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে।
এর মধ্যে দুই হাজার ৩৬ কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৫৬টি মামলা করেছে দুদক। এসব মামলায় ক্রমান্বয়ে সংশ্লিষ্টদের ডেকে জিজ্ঞাসা করেছে দুদক। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ব্যাংকির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসা করেন দুদক কর্মকর্তারা।
জিজ্ঞাসা শেষে আবদুল হাই বাচ্চু সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুদকের কর্মকর্তারা অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত করছেন। এ বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসাবা করা হয়েছে। আমার পক্ষে যেটুকু বলা সম্ভব ছিল, আমি তার জবাব দিয়েছি। প্রয়োজনে আরও সহযোগিতা করবো। মামলার অভিযোগ তদন্তাধীন। এখনও স্টাবলিশ হয়নি।’
অভিযোগে তিনি দোষী নাকি নির্দোষ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাচ্চু বলেন, ‘এখনও তদন্ত চলছে। অভিযোগ স্টাবলিশ হয়নি। কাজেই এখনই এটি বলা মুশকিল।’ চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় টাকা লোপাট হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাচ্চু বলেন, ‘তদন্ত চলছে, দেখা যাক কী হয়।’
এর আগে দুদক কার্যালয়ে প্রবেশের সময় তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী মনে করি না।’
এদিকে বাচ্চুকে মামলার আসামি করা হবে কিনা জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্ত কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেবেন- কে আসামি হবেন, কে হবেন না।’
মামলার ব্যাপারে একই কথা বলেন তদারক কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল। তিনি বলেন, ‘এখনও তদন্ত চলছে। যখন প্রয়োজন হবে, তখন আবারও তাকে ডাকা হবে। ফলে কখন মামলা হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
আরও পড়ুন:
দুদককে যা বলা সম্ভব ছিল সব বলেছি: আবদুল হাই বাচ্চু