X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘বিলুপ্ত ঘোষণা’ করলেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে জামায়াতকে

উদিসা ইসলাম
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:০১আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:৪৯

জামায়াতে ইসলামী জামায়াতে ইসলামী নিজেদের নাম পরিবর্তন করলে কিংবা নিজেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করলেও সংগঠন হিসেবে তাদের বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা, প্রসিকিউটর ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরা। তারা বলছেন, বিচারের হাত থেকে বাঁচতে নাম পরিবর্তন বা অন্য যেকোনওকৌশল অবলম্বন করুক না কেন বিদ্যমান আইনেই তাদের বিচার সম্পন্ন হবে। আইনমন্ত্রী বলছেন, ‘তারা কোন কৌশল নিচ্ছে দেখা যাক, বিলুপ্ত হলে সেটি আমাদেরই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হবে।’

২০১৪ সালে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। ওই প্রতিবেদনের ওপর এখন পর্যন্ত ফরমাল চার্জ গঠন হয়নি। দল হিসেবে বিচারের মুখোমুখি হয়ে শাস্তি কী নির্ধারণ হবে সেটি আইনে স্পষ্ট না থাকায় বিচারকাজ স্থগিত ছিল। আইনটি সংশোধনের সব কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন। একাত্তরে স্বাধীনতা সংগ্রামে যুদ্ধাপরাধ সংগঠনের দায়ে এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাজা কার্যকর হয়েছে। বেশ কয়েকটি রায়ে ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে অপরাধী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল নানা পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ভূমিকা পালনের জন্য জামায়াতে ইসলামীর ক্ষমা চাওয়া উচিত উল্লেখ করে দলের সহকারী সাধারণ সম্পাদক ব্যরিস্টার আব্দুর রাজ্জাক পদত্যাগ করেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে জামায়াতের নেতাদের প্রধান আইনজীবী ছিলেন তিনি। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক তার পদত্যাগপত্রে জানিয়েছেন, তিনি কয়েক দফায় জামায়াতকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপরপরই জামায়াতের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগের কথা সামনে আসতে থাকে। অতীতে কয়েক দফায় সংস্কারের আলোচনা হলেও প্রথমবারের মতো জামায়াতে ইসলামীকে নতুন অবয়বে আনার প্রস্তাবও করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্যরা। প্রশ্ন উঠেছে জামায়াতে ইসলামী তাদের নাম যদি বদলে ফেলে তাহলে যুদ্ধাপরাধ করা দল হিসেবে তাদের বিচারের কী হবে?

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা নিজেদের বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিচার এড়ানোর কৌশল নিতে চায়। যে কৌশলই নিক তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এটা বিদ্যমান আইনে সম্ভব। সিকোয়েন্সিয়াল ব্যানিং এর মধ্যে তাদের আনা জরুরি।’ সেটা কীরকম প্রশ্নে তুরিন বলেন, ‘তারা যখন জামায়াত বিলুপ্তের মাধ্যমে বিচার এড়ানোর কৌশল করছে তখন সুনির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত যারা জামায়াতে জড়িত তারা এই দায় এড়াতে পারবে না; আইনে এমনটা জুড়ে দিতে হবে। জামায়াত যে সন্ত্রাসী সংগঠন সেটি ট্রাইব্যুনাল তার অবজারভেশনে অনেকবারই বলেছেন। আমরা তদন্ত শেষ করে আনার পর শাস্তির বিষয়টি কী নির্ধারণ হবে সেটি নির্ধারণ আইনে না থাকায় বিচারকাজটি থেমে আছে। আমরা সংশোধিত আইনের অপেক্ষায় আছি।’

দ্রুত বিচার সম্পন্নের দাবি জানিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মো. আব্দুল হান্নান খান বলেন, ‘২০১৪ সালে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে দাখিল করেছি। ওই প্রতিবেদনের ওপর এখন পর্যন্ত ফরমাল চার্জ গঠন হয়নি। আবার আমাদের কাছে ফেরতও পাঠানো হয়নি। কিন্তু এই দলটির একাত্তরের যে ভূমিকা তার বিচার হওয়া উচিত এবং বিদ্যমান আইনেই সেটি সম্ভব।’

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বিদ্যমান আইনেই বিচার সম্ভব এবং জামায়াত বিচার এড়াতেই এই কৌশল নিয়েছে। কিন্তু কোনও লাভ হবে না। বিচারের মুখোমুখি তাদের হতেই হবে। কেননা ট্রাইব্যুনাল বিচার করছেন একাত্তরে সংঘটিত অপরাধের। জামায়াতের সেসময়ের যে অপরাধ সেই অপরাধের বিচার হবে। এখন প্রশ্ন হলো, দায়ী হিসেবে কাঠগড়ায় কাদের তোলা হবে।’

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিচারটি জামায়াতের হবে। তবে তারা কী করে দেখেন। বিলুপ্ত তো আর করবে না।’ বিলুপ্ত হলে কী হবে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেটি করলে আমাদেরই উদ্দেশ্য সাধন হয়ে যাবে। তারপরও যারা অপরাধ করেছে, জামায়াত ইসলামের একাত্তরের যে অপরাধ, সেইঅপরাধ আমলে নিয়ে বিচার করা যাবে। যারা জামায়াতে আগে ছিলেন, জামায়াতের মধ্যে ছিলেন, সংগঠনের ভেতরের যারা তাদের নিয়েই জামায়াতের বিচার বিদ্যমান আইনে সম্ভব।’

/ইউআই/এফএস/
সম্পর্কিত
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
নীলফামারীতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারিসহ ৩ জন গ্রেফতার
বগুড়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনআ.লীগের একাধিক প্রার্থী, ভোটে অংশ নিচ্ছে জামায়াত
সর্বশেষ খবর
কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের মৃত্যু
কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের মৃত্যু
সরকারের ১০০ দিনে নানা চ্যালেঞ্জ
সরকারের ১০০ দিনে নানা চ্যালেঞ্জ
নৌকা নিয়ে দ্বিমত থাকলে তাদের নিয়ে কাজ করবো না: গণপূর্তমন্ত্রী
নৌকা নিয়ে দ্বিমত থাকলে তাদের নিয়ে কাজ করবো না: গণপূর্তমন্ত্রী
কেরানীগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের চার সদস্য গ্রেফতার
কেরানীগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের চার সদস্য গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই