ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার মজনু (৩০) মাদকাসক্ত, ছিনতাইকারী এবং সিরিয়াল রেপিস্ট। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) কাওরানবাজারে র্যাব কার্যালয়ে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সারোয়ার বিন কাসেম সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘মজনু সিরিয়াল রেপিস্ট। এরআগে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সে এ ধরনের অপরাধ করেছে। প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুকসহ বিভিন্ন নারীকে সে আটকে রেখে ধর্ষণ করতো। তাদের হত্যার হুমকিও দিতো। মজনু স্বীকার করেছে সে একাই ছিল, ভিকটিমও তেমনই বলেছে। ঘটনার দিন মজনু কুর্মিটোলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার পর মেয়েটিকে দেখতে পায়। এরপরই সে আলোড়িত হয়। পরে মেয়েটিকে অনুসরণ করে তার পিছু নেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছবি দেখিয়ে ভিকটিমের কাছ থেকে আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে। ভিকটিম বলেছে, সব চেহারা ভুলে গেলেও এই চেহারা তিনি কোনোদিনও ভুলবেন না।’
জিজ্ঞাসাবাদে মজনু র্যাবকে জানিয়েছে, সে নিরক্ষর। ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে তার সামনের দুটি দাঁত ভেঙে যায়। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে সে আর বিয়ে করতে পারেনি। তাই সে এধরনের কাজ করতো।
এর আগে র্যাব আরও এক নারী ও পুরুষকে গ্রেফতার করে। তাদের সূত্র ধরেই গ্রেফতার করা হয় মজনুকে। সারোয়ার বিন কাসেম বলেন, ‘গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুরাতলা এলাকা থেকে ভিকটিমের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। ভিকটিমের মোবাইলটি খায়রুল ইসলাম (৩৮) নামে এক রিকশাচালকের কাছ থেকে উদ্ধার হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, সে মোবাইলটি অরুণা বিশ্বাস (৪৫) নামে শ্যাওড়ার এক নারীর কাছ থেকে পেয়েছে। মোবাইলটির ডিসপ্লে ভাঙা থাকায় অরুণা খায়রুলের কাছে মেরামতের জন্য দিয়েছিল। এরপর অরুণাকে এবং তারপর মজনুকে শ্যাওড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়।’
বুধবার (৮ জানুয়ারি) ভোর রাতে অভিযান চালিয়ে শ্যাওড়া রেলক্রসিং থেকে মজনুকে গ্রেফতার করে র্যাব। বুধবার সকাল ৯টার দিকে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে মঙ্গলবার র্যাবের একটি সূত্র জানায়, তিনজন নজরদারিতে রয়েছে। তাদের মধ্যে একজন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। সে-ই প্রধান ক্রিমিনাল।
ক্যান্টনমেন্ট থানায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ধর্ষকের উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চির মতো। গায়ের রঙ শ্যামলা, গড়ন মাঝারি। পরনে জিন্সের পুরনো ফুলপ্যান্ট ও ময়লা কালচে ফুলহাতা জ্যাকেট, পায়ে স্যান্ডেল এবং মাথার চুল ছোট করে ছাঁটা।
প্রসঙ্গত, রবিবার (৫ জানুয়ারি) বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষণিকা বাসে করে ওই ছাত্রী বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কুর্মিটোলা বাসস্টপেজে নামার পর তাকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি অনুসরণ করতে থাকে। একপর্যায়ে তাকে ফুটপাতের ঝোপে নিয়ে ধর্ষণ করে। রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফিরলে ওই শিক্ষার্থী রিকশায় করে বান্ধবীর বাসায় যান। সেখান থেকে বান্ধবীসহ অন্য সহপাঠীরা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকালে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে ওই ছাত্রীর বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে।
আরও পড়ুন:
ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার ১
ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণ: নজরদারিতে অটোচালক, যেকোনও সময় গ্রেফতার
ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলা ডিবিতে
ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর জবানবন্দি
ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণ: আগেই ‘বাস স্টপেজ’ পরিবর্তনের দাবি ছিল শিক্ষার্থীদের
নিজেকে রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী
‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সে আমাদের মেয়ে, তার মনোবল শক্ত থাকবে: ঢাবি ভিসি
ধর্ষণের বিচার দাবিতে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ
শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে ধর্ষণের বিচার দাবি