নির্বাচনি ইশতেহারে নারীবান্ধব ও ইন্টেলিজেন্ট শহর গড়ার কথা বলেছেন ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) গুলশানে ১৯ দফা নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘ঢাকাকে নারীবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। নারীদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস চালু করা হবে। আধুনিক ডে-কেয়ার সেন্টার ও বিশেষ নারী সেল গঠন করা হবে। প্রতিবন্ধীবান্ধব আইন প্রয়োগ ও রাত্রীকালীন আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। নারীদের মাতৃত্বকালীন ও পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের বিনা খরচে চিকিৎসা দেওয়া হবে। নারী ও শিশুদের জন্য মানসিক পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। নারী শ্রমিকদের জন্য আবাসন ও যাতায়াত ব্যবস্থা করা হবে।’
তাবিথ আওয়াল বলেন, ‘প্রযুক্তির ব্যবহার সারা দুনিয়ায় বেড়েছে। ঢাকাকেও ইন্টেলিজেন্ট শহর হতে হবে। বিশ্বে ইন্টেলিজেন্ট শহর হচ্ছে, এটা নতুন ট্রেন্ড। আর্টিফিশয়াল ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলজি আছে, ড্রোন, ইন্টারনেটসহ আধুনিক প্রযুক্তি আছে, এগুলো সব কাজে লাগালেই ইন্টেলিজেন্ট শহর করা যাবে। সব ট্রাফিক ব্যবস্থা ইন্টেলিজেন্ট প্রসেসে চলে গেছে, রাস্তায় গাড়ির চাপ, গতিবিধি দেখে অটোমেটিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা করা হয়। ঢাকাতে অবশ্যই ইন্টেলিজেন্ট ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। শুধু ট্রাফিক নয়, অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রেও ইন্টেলিজেন্ট ব্যবস্থা আমার নিতে পারি।’
তাবিথ বলেন, ‘নগর প্রশাসন করে নাগরিক সেবা ওয়ার্ড পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। নগর সরকার গঠন করে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। ঢাকা সিটিতে মশার উপদ্রব একটি অন্যতম সমস্যা। বর্তমান সরকার ও মেয়রেরা মশা নিধনে ব্যর্থ হয়েছেন। আমি নির্বাচিত হলে মশা নিধনে বছরব্যাপী কার্যক্রম গ্রহণ করবো। যানজট নিরসনে কাজ করবো। বায়ু দূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেবো।
বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের রাজধানী হওয়া সত্ত্বেও ঢাকা আজ কোন দশায় পৌঁছেছে। সময়ের ব্যবধানে এখানে দুর্যোগ নামে, দুর্বিপাক আসে, অনেক কিছু তছনছ করে দিয়ে যায়। কিন্তু বিপর্যয়ই শেষ কথা নয়। প্রতিটি দুর্যোগ শেষেই আমাদের সাহসী-সংগ্রামী মানুষেরা মিলিতভাবে উঠে দাঁড়ায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার চায় আমরা মাঠ ছেড়ে চলে যাই। সেজন্য সবাইকে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি। হুমকি ও ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে ভোটাররা যেন কেন্দ্রে না যায়।’
নির্ভয়ে সবাইকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাবিথ বলেন, ‘বিশ্বাসের জায়গাটা হারাবেন না। নির্বাচিত হলে ৬০ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। বাসা ভাড়া নির্ধারণ ও আবাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যাচেলর স্টুডেন্টস হাউজিং, চাকরিজীবী নারীদের আবাসনের জন্য সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনগণের ক্ষমতা ব্যবহার করে বিদ্যমান সংকট সমাধান করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সততা-সদিচ্ছা দিয়ে ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।’
সরকারবিরোধী অবস্থানে থেকে ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে পারবেন কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘জনগণ পাশে থাকলে আমার দেওয়া ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে পারবো।’
ইশতেহার ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব , বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মাদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টির মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, মো. শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী ত্র্যানী, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, ক্রীড়া বিষয়ক আমিনুল হক, নির্বাহী কমিটির নিপুণ রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, গণফোরামের নিবার্হী সদস্য সব্রত চৌধুরী, এলডিপির মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দফতর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, জিয়া পরিষদের মহাসচিব ড. এমতাজ হোসেন, যুবদল উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম মিল্টন প্রমুখ।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম