সারাদেশ কার্যত লকডাউন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নাগরিকদের ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আর এই সময়ে যারা ঘর থেকে বের না হয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য-ওষুধ কিনতে চাচ্ছেন তাদের সহায়তা করছে পুলিশ। হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ও সেচ্ছায় ঘরে থাকা সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী কাঁচা বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বা ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পুলিশ সদস্যরা। সাধারণ মানুষদের ঘরে থাকার উৎসাহ দিতে ‘অন ডিমান্ড’ এই সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা।
সবার ঘরে থাকা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ঘরে থাকা জনসাধারণদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। ‘আপনি ঘরে থাকুন, দোকানই যাবে আপনার কাছে’ শিরোনামে চাহিদা অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধ সংগ্রহ করে মানুষের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে পুলিশ। কাউকে যেন ঘর থেকে বের হতে না হয়, সেজন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।।
সিএমপির প্রত্যেকটি থানায় বিভিন্ন সহযোগিতা চেয়ে দিনে অন্তত ২০ জন ফোন করছেন। চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ সেবা দিচ্ছে বলে জানান, সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এই উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। প্রতি থানা এলাকায় দিনে ২০ টার মতো কল আসছে। তাদের কেউ ওষুধ কিনতে চাচ্ছে, আবার কোনও ডাক্তার লিফট চাচ্ছেন। কাজে বের হবেন গাড়ি নেই। আমরা নিজেদের গাড়িতে করে কর্মস্থলে পৌঁছে দিচ্ছি। খাবার-দাবার পাচ্ছে না, দোকান বন্ধ। জরুরি খাদ্য পণ্যের জন্য আমাদের ফোন করছে। আমরা দোকান থেকে পণ্য বা ওষুধ কিনে বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছি।’
সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেবা দেওয়ার পাশপাশি করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ঘরে থাকার ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের এই সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো- জনমানুষের কাছে সচেতনতার বার্তাটা পৌঁছে দেওয়া। জরুরি কিছুর প্রয়োজন হলে আমাদের বলুন। আমরা পুলিশ সদস্যরা ব্যবস্থা করে আপনার কাছে পৌঁছে দেবো। এরপরও আপনারা কেউ ঘর থেকে বের হবেন না। সরকারের নির্দেশনা মেনে ঘরে থাকুন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।’
পুলিশের পক্ষ থেকে এই সহযোগিতা পেয়ে কৃতজ্ঞ চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দারা। কোতোয়ালি থানাধীন লাভলেন সংলগ্ন রাবেয়া লেনের একটি ফ্ল্যাট বাসায় থাকেন মহসিন কাজী। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘লকডাউনের কারণে ঘরবন্দি। মা ও শিশুদের জন্য জিংক, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন সমৃদ্ধ খাবার দরকার। বের হওয়াও কঠিন। পরে মাথায় এলো পুলিশের সহযোগিতা নেওয়ার। এরপর কোতোয়ালি থানার হট লাইনে কল দিলাম। এর কিছুক্ষণ পরই কোতোয়ালি থানার জয়নাল আবেদিন নামে এক পুলিশ সদস্য কিনে এনে দিলেন খেজুর, কিসমিসসহ প্রয়োজনীয় খাবার। মানবতার এই দুর্দিনে পুলিশের এই সহযোগিতা সারা জীবন মনে থাকবে।’
ঘরে থাকা মানুষদের কাছে ‘অন ডিমান্ড’ সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশেষ করে যারা সরকারের নির্দেশ মেনে হোম কোয়ারেন্টিনে আছে, এদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। আমাদের অফিসাররা তাদের বাসায় গিয়ে জিজ্ঞেস করছে, কিছু লাগবে কিনা যেটার জন্য তাদের বের হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। আমরা বলছি, আপনার কিছু প্রয়োজন হলে আমরা এনে দেবো। আপনি ঘরে থাকুন। তখন যারা মনে করছে আমাদের সাহায্য নেবে, তারা আমাদের বলছে। আমরা অন ডিমান্ড সেগুলো সরবরাহ করছি।’
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির জানান, এই সময়ে বিদেশ থেকে যারা এসেছেন তাদের অধিকাংশ ইউরোপ থেকে। বাকি কিছু আছেন যারা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে এসেছেন। খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, ‘বিদেশফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। আমাদের হটলাইন নাম্বার দেওয়া আছে তাদের কাছে। ওই ধরনের কোনও প্রয়োজন তাদের এখনও হয়নি। তবে আমরা বলে দিয়েছি, যখনই প্রয়োজন হবে আমাদের লোকজন তা ঘরে পৌঁছে দেবে।’
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে জনগণের সেবায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট যেসব ভালো উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলোকে স্বাগত জানাচ্ছে পুলিশ সদর দফতর। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুলিশ সদর দফতর সে উদ্যোগগুলো সম্পর্কে অবগত হচ্ছে এবং বাকি ইউনিটগুলোও যেন সামর্থ্য অনুযায়ী ভালো উদ্যোগগুলো অনুসরণ করে সে ব্যাপারে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী নির্দেশনা দিয়েছেন।’
আরও পড়ুন-
ছিন্নমূল মানুষদের প্রতিদিন খাবার দেবে ডিএমপি
‘বাসায় থাকুন, আপনার বাজার পৌঁছে দেবে পুলিশ’