X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

লকডাউন পরিস্থিতিতে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারক চক্র

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৭ জুন ২০২০, ১৮:৩০আপডেট : ০৭ জুন ২০২০, ১৮:৩০

লকডাউন পরিস্থিতিতে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারক চক্র করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সারাদেশে লকডাউন পরিস্থিতি চলাকালীন সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করা সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। এই চক্রের ১৩ জনকে ১৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকাসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। রবিবার (৭ মে) দুপুরে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম। নগদ টাকাসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নাজমুল জমাদ্দার (১৯), হাসান মীর, (১৮), ইব্রাহিম মীর (১৮), তৌহিদ হাওলাদার (২৩), মোহন শিকদার (৩০), পারভেজ মীর (১৮), সোহেল মোল্যা (২৬),  দেলায়ার হোসেন (৩৫),  সৈয়দ হাওলাদার (২০),  রাকিব হোসেন (২৪),  আলী মিয়া (২৬),  পলাশ তালুকদার (৩৪), ও ইমন (২৫)। র‌্যাব-৮ ও ২ এর যৌথ অভিযানে  তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযানে তাদের কাছ থেকে ১৪,৮৩,৪৬২ টাকা, ৩১টি মোবাইল ফোন, ২টি ল্যাপটপ, ২টি ট্যাব, ১২০টি সিম, একটি রাউটার এবং একটি টিভি কার্ড উদ্ধার করা হয়।

লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সারাদেশে লকডাউন পরিস্থিতির কারণে অনলাইনে টাকা লেনদেন করেছেন অনেকে। আর সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। আমাদের কঠোর গোয়েন্দা নজরদারির কারণে তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত বাকিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, একজন মাস্টার মাইন্ড পুরো প্রতারক চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। পুরো চক্রের ৩০-৪০ জন সদস্য থাকে। মাস্টার মাইন্ডের অধীনে ৫টি বিভিন্ন গ্রুপ কাজ করে।

হান্টার টিম

এরা মূলত গ্রাহকদের মোবাইল নম্বর ও তথ্য সংগ্রহ করে মাস্টার মাইন্ডকে সরবরাহ করে থাকে।  দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অফিসের কর্মচারী, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাজেন্ট, গার্মেন্টস কর্মী, বিক্রয়কেন্দ্র, অনলাইন কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে নম্বর সংগ্রহ করে থাকে। বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ও পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয় অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে। প্রতারক চক্রটি পেশাজীবী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, গার্মেন্ট কর্মীদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ তৈরির পরিকল্পনা করেছে।

স্পুফিং টিম

এ দলের সদস্যরা তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে মোবাইল নম্বরগুলো স্পুফিং করে থাকে। স্পুফিং এর ফলে গ্রাহক প্রতারিত হয়। প্রতিটি স্পুফিং এর জন্য তারা মাস্টার মাইন্ড এর কাছ থেকে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা করে পায়।  এছাড়াও কল ডিউরেশন অনুযায়ী আলাদা করে টাকা পেয়ে থাকে।

ফেইক কাস্টমার কেয়ার

এরা মূলত ভুয়া কাস্টমার কেয়ার কর্মকর্তা সেজে প্রতারণা করে থাকে। মাস্টার মাইন্ড নিজেই সাধারণত এই দলটি পরিচালনা করে। একজন মাস্টার মাইন্ডের অধীনে তিন থেকে পাঁচজন মূল কর্মী থাকে। প্রত্যেক কর্মীর আবার দুজন করে সহযোগী থাকে। প্রতিটি কাস্টমার কেয়ারের ১৫-২০ জন সদস্য থাকে। সাধারণত মাস্টার মাইন্ড অথবা তাদের মধ্যে হতে একজন কাস্টমার কেয়ার সেজে গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন তথ্য দেওয়া ও নেওয়ার কাজ করে থাকে। কথোপোকথনের সময় কর্মী ও সহযোগীরা কেউ তথ্য লিপিবদ্ধ করে, কেউ অন্য মোবাইলে প্রাপ্ত তথ্য ইনপুট দিয়ে অ্যাকাউন্ট  নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে থাকে। তারা সাধারণত চরের কোনও নির্জন জায়গা বা গাছপালা ঘেরা নিরাপদ স্থান বেছে নেয়। কার্যক্রম পরিচালনার সময় অন্য সহযোগীরা এমনভাবে কথা বলতে থাকে যেন ফোনের অপর প্রান্ত হতে একটি অফিসিয়াল পরিবেশ বলে মনে হয়। সিন্ডিকেট মাস্টার মাইন্ড তার অর্জিত আয়ের ৫০ ভাগ নিজের জন্য; কর্মী ও সহযোগীদের ৩০ ভাগ দেয়। হান্টার টিমকে ২০ শতাংশ, স্পুফিং টিমকে প্রতি নম্বরের জন্য ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা এবং কথা বলা সময়ের মেয়াদ ভিত্তিতে টাকা প্রদান করে থাকে।

টাকা উত্তোলন

গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার হওয়ার পর সিন্ডিকেটের মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের মাধামে টাকা উত্তোলন করা হয়ে থাকে। ভাঙ্গা, ফরিদপুর ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের সমমনা এজেন্ট রয়েছে। এভাবে প্রতারণাকৃত অর্থ কয়েকটি জায়গায় প্রেরণের মাধ্যমে নিরাপদ জায়গা থেকে তুলে নেয়। এ চক্রের কারও কারও আবার নামে/বেনামে এজেন্টশিপ রয়েছে। এজেন্টরা হাজারে দুইশত টাকা কমিশন পেয়ে থাকে।

ওয়াচম্যান দল

পুরো প্রতারণা চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত একদল ওয়াচম্যান থাকে যারা সাধারণত ছোটখাটো ব্যবসা বা দোকান চালানোর কাজে সম্পৃক্ত। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ ওয়াচম্যানও কাজ করে। ওয়াচম্যান দলের কাজ হচ্ছে এলাকার কোনও আগন্তুক বা সন্দেহজনক কাউকে চলাফেরা করতে দেখলে সঙ্গেসঙ্গে জানিয়ে দেওয়া। ওয়াচম্যানরা ঘণ্টা বা চুক্তিভিত্তিক টাকা পেয়ে থাকে।

ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড প্রতারণা

প্রতারক চক্র থেকে প্রথমে নির্ধারিত গ্রাহককে এসএমএস বা কল দেওয়া হলে স্পুফিং এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কাস্টমার কেয়ার এর নাম্বরটি ভেসে উঠে। তবে উল্লেখ্য যে, যদি কাস্টমার কেয়ার নম্বরটি ১৭২৪১ হয়, তবে স্পুফিং বা ক্লোনিং নম্বরটি প্রদর্শিত হবে +১৭২৪১; পার্থক্য শুধু + চিহ্নের। এতে প্রতারকরা ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহকদের বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জন করে। গ্রাহকদেরকে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে লিখে পাঠানো হয় যে আপনার কার্ডটি ডিঅ্যাকটিভেট হয়ে গিয়েছে। আপনি যদি কার্ডটি সচল করতে চান তাহলে ০১****** অথবা ***** ইমেইলে যোগাযোগ করুন। যখন গ্রাহকরা প্রতারকদের কল দেয়, তখন প্রতারক চক্রটি গ্রাহকের কার্ডের উপরের ১৪ ডিজিট নম্বরটি ও পেছনে ৩ ডিজিটের নম্বটিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কৌশলে সংগ্রহ করে নেয়। আবার কখনও কখনও কথা বলে ই-মেইলের মাধ্যমে কার্ডের ডিটেইলস পাঠানোর কথা বলে থাকে। আবার সরাসরি কল করে গোপন সকল তথ্যাদি কৌশলে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।

কার্ডের টাকা উত্তোলনের প্রক্রিয়া 

প্রতারক চক্রটি অনলাইনের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ডের টাকা উত্তোলন করে থাকে। তারা সাধারণত অনলাইন শপিং, ওয়ালেট রিফিল, ডলার ক্রয়, বিটকয়েন ক্রয়, ৩৬০ বিট অনলাইন জুয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে উক্ত টাকা কার্ড থেকে বের করে নেয়। পরবর্তীতে স্ক্রিল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকাগুলো উত্তোলন করে থাকে।

/এনএল/আরজে/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ