X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

বিব্রত কারা কর্তৃপক্ষ, ঢেলে সাজানো হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা

নুরুজ্জামান লাবু
০২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৪:০১আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৪:০১

কারা অধিদফতর এক মাসে নিরাপত্তা হেফাজত থেকে পালিয়েছেন দুই বন্দি। একজন নিরাপত্তা দেয়াল টপকে খোদ কারাগারের ভেতর থেকে পালিয়ে গেছেন। আরেকজন পালিয়েছিলেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে। যদিও হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া বন্দিকে ফের ধরা হয়েছে। এখনও খোঁজ মেলেনি কাশিমপুর কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত সেই কয়েদির। কারা অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতায় বিব্রত কারা কর্তৃপক্ষ। একারণে নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।  এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কারা সদর দফতর থেকে আটটি বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে দেশের ৬৮টি কারাগারে। নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আইজি প্রিজনস বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা স্বাক্ষরিত একটি চিঠি (স্মারক নম্বর: ৫৮.০৪.০০০০.০২২.০৩.০২৩.২০২০.৪১২ (১০৫)) দেশের ৬৮টি কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কারা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কোনও কোনও কারাগারে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, এমনকি বন্দি পালিয়ে যাওয়ার  ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে— যা চরম প্রশাসনিক দুর্বলতার নামান্তর এবং মোটেই তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারাগার একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান। বন্দি পলায়নসহ যে কোনও দুর্ঘটনা রোধকল্পে কারা কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করা আবশ্যক।’

ওই চিঠিতে আরও  বলা হয়, ‘কারা কর্মকর্তা/কর্মচারীরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সক্রিয় না হওয়ায় বন্দি পলায়নসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে— যা সুষ্ঠু কারা প্রশাসনের অন্তরায় এবং কারা বিভাগের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। অতএব বন্দি পলায়নসহ যে কোনও দুর্ঘটনা রোধপূর্বক কারা নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য সবকারা কর্মকর্তা/কর্মচারীকে সর্বোচ্চ অধিক সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’

আইজি প্রিজনসের পাঠানো  চিঠিতে ৮টি করণীয় বিষয় উল্লেখ করে বলা হয়, ‘কারা বিধি যথাযথভাবে অনুসরণপূর্বক নিয়মিত কেস টেবিল কার্যক্রম পরিচালনা করা, ফাইলে নিয়মিত অংশগ্রহণ, নৈশ পরিক্রমা, বন্দি দরবার সম্পন্ন করা, কারাগারে নিষিদ্ধ দ্রব্যের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা, কারা অভ্যন্তরে গমনকারী পিআইইউ এর সদস্য এবং সিভিল কর্মচারীসহ সবাইকে যথানিয়মে তল্লাশিকরণ  এবং সিসিটিভি মনিটরিং ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করে কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হলো।’ কোনও কারা কর্মকর্তা/কর্মচারীর দায়িত্ব পালনে ন্যূনতম ব্যত্যয় বা শৈথিল্যতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করা হয় ওই চিঠিতে। 

কারা সূত্র জানায়,কারা অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক বন্দি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা গরুত্ব দিয়ে দেখছে। একারণে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত জেলা ও কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে জুম মিটিং করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র সচিব (সুরক্ষা) মো. শহিদুজ্জামান এবং আইজি প্রিজনস দুই ঘণ্টাব্যাপী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস), সিনিয়র জেল সুপার ও জেল সুপারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করেন। আগামী বৃহস্পতিবার  রাজশাহী, যশোর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করা হবে।

জানতে চাইলে কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত আইজি প্রিজনস কর্নেল আবরার হোসেন নবাংলা ট্রিবিউনকেবলেন, ‘দুটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এসব স্পর্শকাতর ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেজন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। দেশের সবক’টি কারাগারে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। বন্দি নিরাপত্তার বিষয়ে সবাইকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া যাদের দায়িত্বে অবহেলা পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

সূত্র জানায়, কাশিমপুর কারাগার থেকে বন্দি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি দোষীদের দায়-দায়িত্ব ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনার পাশাপাশি কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে একই কারাগারে দীর্ঘ দিন ধরে একই কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের বিষয়টি জোর দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। কারা সূত্র জানায়, একই কর্মকর্তা একই কারাগারে দীর্ঘ দিন ধরে দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকলে  তার ভেতরে দায়িত্ব পালনের প্রতি এক ধরনের শৈথিল্যতা আসে। এছাড়া কর্মকর্তারা নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। একারণে জেলা কারাগারগুলোতে খুব দ্রুতই রদবল করা হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য,গত ৬ আগস্ট কাশিমপুর-২ কারাগার থেকে মই বেয়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি আবু বক্কর ছিদ্দিক পালিয়ে যান। এ পর্যন্ত তার কোনও হদিস পাওয়া যায়নি। এঘটনায় সিনিয়র  জেল সুপার জাহানারা বেগমসহ ২০ জন কারা সদস্যের দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ ঘটনার এক মাস পার হতে না হতেই গত ২৮ আগস্ট রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিন্টু মিয়া নামের এক বন্দি পালিয়ে যান। তবে পরদিনই তাকে পুনরায় আটক করা হয়েছে। এঘটনায় তিন কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা