X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ভূমির ১৩ ধরনের মিশ্র ব্যবহারের প্রস্তাব

ঢাকার ভূমিকে যেভাবে ঢেলে সাজাতে চায় ড্যাপ

শাহেদ শফিক
১৭ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:০০আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২০, ২২:০৪

.
ঢাকার কোন এলাকা আবাসিক, কোনটা বাণিজ্যিক, কোনটা মিশ্র আবার কোনটা বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত হবে—এসব নতুন করে ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব করেছে রাজউকের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ)। আর এ কাজে ঢাকাকে ১৩ ধরনের ‘ভূমি ব্যবহার জোন’-এ ভাগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রণীত পরিকল্পনায় মূলত নিয়ন্ত্রিত মিশ্র ভূমি ব্যবহার জোনের প্রস্তাবনা করা হয়েছে। তবে ড্যাপের এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করলেও একে আরও ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

ড্যাপ সূত্র জানিয়েছে, পুরো মেট্রোপলিটন এলাকার প্রায় ৯৪ হাজার ৫৮ দশমিক ৪২ হেক্টর জমি নগর এলাকা হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। যা মোট পরিকল্পনার ৬১ দশমিক ৬১ শতাংশ। আবাসিক এলাকা হিসেবে ১৯ হাজার ৪৫৭ দশমিক ৬৭ একর ব্যবহার করা হবে (মোট পরিকল্পনার ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ), মিশ্র ব্যবহার এলাকা (আবাসিক প্রধান) হিসেবে ব্যবহার হবে এক লাখ ২৩ হাজার ৯৩১ দশমিক ০৯ একর (৩২ দশমিক ৮৫ শতাংশ)। মিশ্র ব্যবহার এলাকা (আবাসিক-বাণিজ্যিক) হিসেবে এক হাজার ৭৭৮ দশমিক ৯৩ একর ব্যবহার করা যাবে (মোট পরিকল্পনার দশমিক ৪৭ শতাংশ)।

এ ছাড়া বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে ১৪৩ দশমিক ৩৩ একর ব্যবহার করা হবে। যা মোট পরিকল্পনা এলাকার ০ দশমিক ০৪ শতাংশ। মিশ্র ব্যবহার এলাকা (বাণিজ্যিক প্রধান) হিসেবে ৪ হাজার ৯৩৩ দশমিক ৯১ একর (১ দশমিক ৩১ শতাংশ), মিশ্র ব্যবহার এলাকার (শিল্প প্রধান) হিসেবে ২৯ হাজার ৭৩৭ দশমিক ১১ একর (৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ), প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা হিসেবে ১৩ হাজার ৫৪২ দশমিক ৬৫ একর (৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ), ভারী শিল্প এলাকা হিসেবে ৬ হাজার ৪৬৫ দশমিক ৪১ একর ব্যবহার করা হবে (১ দশমিক ৭১ শতাংশ)। পরিবহন ও যোগাযোগ (বিদ্যমান) এলাকা হিসেবে ১৯ হাজার ৮২৩ দশমিক ৫০ একর (৫ দশমিক ১৫ শতাংশ), পরিবহন ও যোগাযোগ (প্রস্তাবিত) হিসেবে ৭ হাজার ৬৬৮ দশমিক ৯২ একর (২ দশমিক ০৩ শতাংশ) ব্যবহার করা যাবে।

কৃষি এলাকা হিসেবে ১ লাখ ১১ হাজার ২০৩ দশমিক ৬৯ একর (২৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ), জলাশয় হিসেবে ২৯ হাজার ৭০৩ দশমিক ৭৭ একর (৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ), বনাঞ্চল ৫ হাজার ৩৪০ দশমিক ৯২ একর (১ দশমিক ৪২ শতাংশ) এবং উন্মুক্ত স্থান হিসেবে ৩ হাজার ৯৩৩ দশমিক ৩২ একর ব্যবহার করা হবে (মোট পরিকল্পনা এলাকার ১ দশমিক ০৪ শতাংশ)। সব মিলিয়ে এই ১৩ ধরনের কাজে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ২৬৪ দশমিক ২২ একর ভূমি ব্যবহার হবে।

এছাড়া ভূমি ব্যবহারে আরও ৮টি নিয়ামককে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এগুলো হচ্ছে, বন্যা ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, মুখ্য জনস্রোত এলাকা, সাধারণ জনস্রোত এলাকা, সাধারণ বন্যা অববাহিকা, দুর্যোগ সংক্রান্ত, ভূ-তাত্ত্বিক ও ভূ-কম্পন সংক্রান্ত, বিশেষ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেডিআই)।

এসব এলাকায় উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক স্থাপনা, স্থাপনার উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ, বিমান উড্ডয়ন সংক্রান্ত উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ এলাকা, জনঘনত্ব বিন্যাস, পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংক্রান্ত, নদীর তীর ব্যবস্থাপনা, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, পরিবেশগত সংবেদনশীল এলাকা, পরিবহন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত, ট্রানজিটভিত্তিক উন্নয়ন, মৌজা সংক্রান্ত, আরএস মৌজা খাল/নদী এবং সিএস মৌজা খাল/ নদী বিবেচনা করা হবে।

মূলত কোনও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা বৈশিষ্ট্য একটি জায়গার বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। ওই স্থাপনা বা বৈশিষ্ট্য ঘিরে নির্দিষ্ট দূরত্বে ভূমির ব্যবহার বদলে যায়। ওই জোনটিকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত জোন বলা হচ্ছে। কোনও এলাকায় যদি বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ব্যবস্থাপনা জোন থাকে, তবে ওই এলাকায় ওভারলে জোনের জন্য যে বিশেষ বিধিমালা থাকবে, তা প্রযোজ্য হবে। বন্যাপ্রবাহ এলাকা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এলাকা, কেপিআই, উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ অঞ্চলসহ ঐতিহাসিক স্থাপনাকে বিশেষ ব্যবস্থাপনা জোনের মধ্যে ড্যাপে বিবেচনা করা হয়েছে।

ড্যাপ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় ভূমি ব্যবহার জোনিং করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভূমি ব্যবহার ও উন্নয়ন সম্পর্কিত অবাঞ্ছিত সমস্যা থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্ত করা যাবে। পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অবাঞ্ছিত জটিলতা এবং অস্পষ্টতা দূর হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঢাকা শহরে নগরায়িত এলাকা ২০০৫ সালে বেড়ে ২০ হাজার ৫৪৯ হেক্টর হয়। ক্রমান্বয়ে চাষযোগ্য জমি ১২ হাজার ০৪০ হেক্টর থেকে ৬ হাজার ২৩৬ হেক্টর কমেছে। একইভাবে, জলাভূমি ও গাছপালা সংবলিত এলাকা ৬ হাজার ২৭ ও ২ হাজার ৮১২ হেক্টর কমেছে। কীভাবে কৃষিভূমি রক্ষা করা যাবে, তার কোনও সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ছিল না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কৃষি জমি বা জলাশয় এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা বা এলাকা রক্ষা করার লক্ষ্যে টিডিআর বা ট্রান্সফার অফ ডেভেলপমেন্ট রাইটস (Transfer of Development Rights) বা উন্নয়ন স্বত্ব বিনিময় পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। ড্যাপেও এই পদ্ধতি অনুসরণ করে কৃষি জমি রক্ষার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ড্যাপের পরিচালক ও রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রণীত পরিকল্পনায় মূলত নিয়ন্ত্রিত মিশ্র ভূমি ব্যবহার জোনের প্রস্তাবনা করা হয়েছে। এসব জোনের ওপর ভিত্তি করে ভূমি ব্যবহার করতে হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ড্যাপের এই প্রস্তাব অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। এখন শুধু প্রস্তাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। বাস্তবায়নও করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় জলের নেটওয়ার্ককে উপেক্ষা করেছি। খালে বক্স-কালভার্ট করে দিয়েছি। খাল ও নদীর যে ঐতিহ্য তা হারিয়ে ফেলেছি। এখন যেটুকু আছে তা দিয়েও অনেক কিছু করা সম্ভব।

ড্যাপের প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানালেও তাতে আরও বেশ কিছু বিষয় সুনির্দিষ্ট করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি স্থপতি জালাল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রস্তাবিত ড্যাপে ঢাকা শহরে আবাসিক এলাকার পরিমাণ মাত্র পাঁচ শতাংশ। বাকি আবাসিক এলাকা আবাসিকসহ বাণিজ্যিক অর্থাৎ মিশ্র এলাকা হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। তাহলে সরকারি বা বেসরকারি আবাসিক এলাকা বাদে পুরো ঢাকা শহর মিশ্র হয়ে যাবে। কিন্তু মিশ্র হিসেবে কোন ধরনের বাণিজ্যিক ব্যবহার যুক্তিসঙ্গত হবে সে বিষয়টি নিয়েও বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ বিধ্বংসী রাসায়নিক গুদাম, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কারখানা স্থানান্তর করে উপযুক্ত শিল্প এলাকায় নিতে হবে। শিল্প এলাকার বিষয় ড্যাপে সংযোজন করতে হবে।

/এফএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
রাজধানীতে রিকশাচালকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার
স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, স্বামীর লাশ উদ্ধার
শহীদ আনোয়ারা উদ্যান ৩০ দিনের মধ্যে ফেরতের দাবি
সর্বশেষ খবর
ধানের বাম্পার ফলনেও ‘অখুশি’ কৃষকেরা
ধানের বাম্পার ফলনেও ‘অখুশি’ কৃষকেরা
সালথা উপজেলায় ওয়াদুদের প্রার্থিতা বহাল, নির্বাচনে বাধা নেই
সালথা উপজেলায় ওয়াদুদের প্রার্থিতা বহাল, নির্বাচনে বাধা নেই
খারকিভে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া: ইউক্রেন
খারকিভে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া: ইউক্রেন
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক