ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যার মামলায় দুই জনের ফাঁসি ও একজনের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। তিনজনের ১০ বছর, একজনের পাঁচ বছর ও একজনের তিন বছরের সাজা হয়েছে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল-৩ এর বিচারক সাঈদ আহম্মেদ বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) এই রায় দেন। দেশে এই প্রথম কোনও ব্লগার হত্যা মামলার রায় দেওয়া হলো।
নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল বিন নাইম ওরফে দিপ ও রেদোয়ানুল আজাদ রানার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রানা পলাতক রয়েছেন।
মাকসুদুল হাসান অনিকের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এহসানুর রেজা রুম্মান, মো. নাঈম সিকদার ওরফে ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজের ১০ বছর করে কারাদণ্ড হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড, দুই হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে তিন বছর কারাদণ্ড, দুই হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও দুই মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত ও নৃশংস ছিল। তবে রাষ্ট্রপক্ষ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে পারেননি।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাসায় ফেরার পথে রাজধানীর পল্লবীর কালশীর পলাশনগরে ৫৬/৩ নম্বর বাড়ির সামনে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন ব্লগার রাজীব। এ ঘটনায় নিহতের বাবা ডাক্তার নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার নম্বর ৪০(২)২০১৩। প্যানাল কোডের ৩০২, ৩৪ ও ১০৯ নম্বর ধারায় এই মামলা করা হয়।
পেশায় স্থপতি রাজীব ‘থাবা বাবা’ নামে ধর্মান্ধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের বিরোধিতাকারীদের বিপক্ষে লেখালেখি করতেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের ইন্সপেক্টর নিবারণ চন্দ্র বর্মণ ঢাকার সিএমএম আদালতে আটজনকে অভিযুক্ত করে প্রায় এক বছর পর ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে আসামি করা হয় নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল বিন নাইম ওরফে দিপ (২২), মাকসুদুল হাসান অনিক (২৬), এহসানুর রেজা রুম্মান (২৩), মো. নাঈম সিকদার ওরফে ইরাদ (১৯), নাফিজ ইমতিয়াজ (২২), সাদমান ইয়াছির মাহমুদ (২০), রেদোয়ানুল আজাদ রানা (৩০) ও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীকে।
আদালত সূত্র জানায়, এ বছরের ১৮ মার্চ ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিকভাবে এ মামলায় বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। বিচার শুরুর পর এ মামলায় ৫৫ জন সাক্ষির মধ্যে ৩৫ জন সাক্ষির সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যদিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টির অভিযুক্ত এ সব ছাত্র আনারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। রেদোয়ানুল আজাদ রানা পলাতক রয়েছেন। গোয়েন্দাদের ধারণা, রাজীব হত্যার পরপরই রানা অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে যান। অন্যরা কারাগারে আটক রয়েছেন।
রাজীব হত্যাকাণ্ডের পর এ পর্যন্ত শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী, ব্লগার, লেখক-প্রকাশক মিলে ছয় জনকে একই পদ্ধতিতে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে ছিলেন বিশেষ পিপি মাহবুবুর রহমান। আর আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন মোশাররফ হোসেন কাজল, অ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক খান, অ্যাডভোকেট ফারুক।
/জেইউ/এফএস/