X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

সম্পাদকরা ‘পাওয়ার ব্রোকার’ হতে চান: রওশন জামিল চৌধুরী

উদিসা ইসলাম
২৫ মার্চ ২০১৬, ১৫:২৩আপডেট : ২৫ মার্চ ২০১৬, ১৫:২৮

সাংবাদিক রওশন জামিল চৌধুরী বাংলাদেশের মিডিয়ার মালিকানা সব বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের। গণমাধ্যম এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। এদের উদ্দেশ্য জনগণকে ক্ষমতায়িত করা নয়। ক্ষমতার মানুষেরা খুব সহজেই বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে মালিক সম্পাদকদের টাইট দিতে পারেন। এতে করে সাংবাদিকতার ঠাঁই হয় পেছনের আসনে। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া বা জহুর হোসেন চৌধুরীরা পাকিস্তানী জেনারেলদের লালচোখ উপেক্ষা করেননি? তাদের একটা নৈতিক অবস্থান ছিল। মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পেরেছেন। এখন দিনকাল পাল্টেছে। সব জায়গায় কালো টাকার ছড়াছড়ি। সম্পাদকরা পাওয়ার ব্রোকার হতে চান। ফলে তাদের পক্ষে ভিন্ন অবস্থান নেওয়া মনে হয় কঠিনই। সেনা সমর্থিত রাষ্ট্রে সংবাদপত্রের অবস্থান এবং এখনকার সাংবাদিকতার ধরণ নিয়ে এসব মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক রওশন জামিল চৌধুরী।

রওশন জামিল চৌধুরীর সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হাই স্কুল বয়সে, বাবা আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরীর হাতে। একেবারে শুরুর দিককার যারা, সাংবাদিক রওশন জামিলের বাবা ছিলেন তাদের একজন। বাবা হাতে ধরে শেখাতেন রিপোর্ট কীভাবে লিখতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে দৈনিক বার্তায় কিছুদিন সম্পাদকীয় সহকারী। তারপর দৈনিক নিউ নেশনে সহসম্পাদক। সংবাদে স্পোর্টস রিপোর্টার। কিছুদিন ইউএস ইনফরমেশন সার্ভিস এবং কানাডিয়ান হাই কমিশনের তথ্য বিভাগে কাজ করেন তিনি। এখন নিউ ইয়র্ক শিক্ষা বিভাগের অনুবাদ শাখায় কাজ রওশন জামিল চৌধুরী। সম্প্রতি বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

সেনাসমর্থিত সরকার বা সেনাশাসনের সময় সাংবাদিকতা কেন গুটিয়ে যায়? সেসময় যদি কোন পত্রিকা সম্পাদক বা মালিক ভিন্ন অবস্থান নিতে চান সেটা সম্ভব কিনা?

সেনা-সমর্থিত বা সেনাশাসনের সময়ে শাসনতন্ত্র স্থগিত থাকে। ফলে সক্রিয়ভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতাও সংকুচিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় স্বাধীন মতামত দিতে হলে মিডিয়াকে যে ঝুঁকিগ্রহণ করতে হয়, মালিক-সম্পাদকেরা তা করতে সাহস পান না, বা করতে চান না। সেক্ষেত্রে গণমাধ্যমের কাজটা কী? জনগণকে স্বাধীন ও স্বশাসিত হওয়ার জন্য ক্ষমতায়িত করা। এই তো? এখন বাংলাদেশের মিডিয়ার মালিকানা কাদের দেখুন। সব বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের। গণমাধ্যম এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। এদের উদ্দেশ্য জনগণকে ক্ষমতায়িত করা নয়। অন্তত আমার তাই ধারণা। এখন, ব্যবসায় সবকিছুই সাদা-কালো নয়, ধূসরই বোধকরি বেশি। ফলে ক্ষমতার মানুষেরা খুব সহজেই বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে মালিক সম্পাদকদের টাইট দিতে পারেন। এতে করে সাংবাদিকতার ঠাঁই হয় পেছনের আসনে।

এখন আপনি বলছেন পত্রিকা মালিক বা সম্পাদক ভিন্ন অবস্থান নিতে চাইলে সেটা সম্ভব কিনা। আলবত সম্ভব। আবদুস সালাম, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া বা জহুর হোসেন চৌধুরীরা পাকিস্তানী জেনারেলদের লালচোখ উপেক্ষা করেননি? তাদের একটা নৈতিক অবস্থান ছিল। মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পেরেছেন। অবজারভারে হামিদুল হক চৌধুরী সম্পাদকীয় নীতিমালার ব্যাপারে সেভাবে কিছু চাপিয়ে দিতেন না বলে বড়দের কাছে শুনেছি। বা সে সময়ের পত্রিকা পড়লেও বোঝা যায়। কিন্তু এখন দিনকাল পাল্টেছে। সব জায়গায় কালো টাকার ছড়াছড়ি। সম্পাদকরা পাওয়ার ব্রোকার হতে চান। ফলে তাদের পক্ষে ভিন্ন অবস্থান নেওয়া মনে হয় কঠিনই। ১/১১-র সময়ে এক নূরুল কবির ছাড়া আর কাউকে তো সাহসী হতে দেখলাম না।

বাংলাদেশের এসময়ের সাংবাদিকতা প্রেসরিলিজ জাতীয় (কারণ কে কি বললেন সেটাকে তুলে ধরার প্রতিবেদনের পরিমাণই বেশি) সাংবাদিকতা মনে হয়, নাকি সম্ভাবনা দেখেন। যদি দেখেন তাহলে কী ধরনের সম্ভাবনা আছে?

গড়পড়তা সাংবাদিকতার কথা যদি বলেন, তাহলে খারাপ শোনাতে পারে কথাটা, আমার মনে হয় ওই প্রেস রিলিজ সাংবাদিকতায় (আমি যাকে ঠাট্টাচ্ছলে বলি গল্পসাংবাদিকতা) আটকে গেছে। খবর তৈরির জন্য কাউকে কিছু না কিছু বলতে বা ঘটাতে হয়, মানুষকে সেটা জানাবারও দরকার আছে। কিন্তু ওটুকুই তো সব না। আপনি বললেন অমুকে তমুক কথা বলেছে। ভালো। কিন্তু আমাকে সেটা জানাতে হবে কেন, বা আমি কেনও তা জানতে চাইব। কোনো ব্যাপারে আমার স্বাধীন অভিমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ওই খবরটা আমাকে কীভাবে ক্ষমতায়িত করছে- তার ফলোআপ মনে হয় থাকা দরকার।

রওশন জামিল চৌধুরী এই প্রসঙ্গে আপনার একটা রিপোর্টের কথা উল্লেখ করি। জেনোসাইড ডিনায়ালের উপর রিপোর্ট করেছেন আপনি। এটার কথা অনেকদিন থেকেই শোনা যাচ্ছিল। এবং আইনটা করার ব্যাপারে একধরনের জনদাবিও আছে। কিন্তু আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, এই যে একটা একক ন্যারেটিভে স্বাধীনতার ইতিহাসটা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে, বা হয়েছে, এটা হলে এই কাঠামোর বাইরে থেকে যাচ্ছেন কারা, বা কারা লাভবান হচ্ছেন। এর আর্থ-রাজনৈতিক তাৎপর্য কী? এ বিষয়ে সুন্দর ইন-ডেপথ স্টোরি হতে পারে। তবে আমি আশাবাদী মানুষ। সম্ভাবনা না থেকে পারে না। যেহেতু আমার জানাশোনাটা অত ব্যাপক নয়, চট করে সুনির্দিষ্ট দৃষ্টান্ত টানতে পারছি না। তবে নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে যদ্দুর মনে পড়ছে কিছু কাজ দেখেছি। ট্রিবিউনে শিশু মনস্তত্ত্বের উপর যে প্রতিবেদনটা বেরিয়েছে—আপনারই তো করা মনে হয়, না? ছোটো পরিসরে হলেও আমাদের ইনফর্মড হতে সাহায্য করছে বৈকি। তবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এটা বেশি করে দরকার। তবে বর্তমানের এই দলাদলির সময়ে সেটা কতটা সম্ভব জানি না। দুঃখজনক।

বাংলাদেশের যারা ফার্স্ট জেনারেশন সম্পাদক তাদের ভূমিকা নিয়ে কিছু বলতে চান? তারা বাংলাদেশের ইতিহাসকে সঠিক পথে পরিচালনায় আদৌ কোন ভূমিকা রেখেছেন কিনা?

বাংলাদেশের প্রথম জেনারেশনের সম্পাদক বলতে আপনি যদি পঞ্চাশের, ষাটের দশকের সম্পাদকদের বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই যাদের কথা আগে বলেছি- আব্দুস সালাম, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরী, এদের নাম নিতেই হবে। এরা সাহসের সঙ্গে খবর প্রকাশ করতেন, সম্পাদকীয় স্তম্ভ লিখে জনগণকে সচেতন করার কাজটা করেছেন। যা স্বাধীনতার পর আর এগোতে পারেনি সরকারি হস্তক্ষেপে, যার প্রথম শিকার আব্দুস সালাম। “সুপ্রিম টেস্ট” এর মতো একটি অসামান্য সম্পাদকীয় লেখায় তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। বা পরে হাসান হাফিজুর রহমান এবং তোয়াব খানকে দৈনিক বাংলা থেকে।

আপনি অনেকদিন দেশের বাইরে। কেমন বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন, কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান?

কেমন বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলাম বা কেমন বাংলাদশে দেখতে চাই! সবাই একভাবে, সুন্দরভাবে বাঁচবো এমন একটা স্বপ্ন ছিল। যা যুদ্ধ-পরবর্তী অব্যবহিত সময়ে দারুণভাবে হোঁচট খায়। স্বপ্নটা এখনও আছে। তবে স্থানিক ও বৈশ্বিক বাস্তবতায় তা কতটা পূরণ হবে বা আদৌ হবে কিনা জানি না।

এপিএইচ/

সম্পর্কিত
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
বাংলা ট্রিবিউনকে ওয়াসিকা আয়শা খান‘নারীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন, এর নেপথ্যে শেখ হাসিনা’
সর্বশেষ খবর
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন