X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১
কলাবাগানে জোড়া খুন

খুনি শনাক্তে আশাবাদী পুলিশ, আটক ১

আমানুর রহমান রনি
২৬ এপ্রিল ২০১৬, ০৫:৩৫আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০১৬, ০৬:৫৬

হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের  তৎপরতা কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনায় হত্যাকারীদের কাছ থেকে জব্দ করা আলামতের মাধ্যমে শিগগিরই খুনিদের শনাক্ত করতে সক্ষম হবে বলে আশা করছে পুলিশ। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে আনোয়ার হোসেন লিংকন (১৮) নামে এক কলেজছাত্রকে আটক করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনায় খুনিদের সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হত্যাকারীরা ধোঁকা দেওয়ার জন্য একই রঙের টি-শার্ট পরেছিল। মানুষ যাতে তাদের পরিচয় বিশ্বাস করে সেজন্য তারা দুটি কার্টন নিয়ে এসেছিল। প্রত্যেকের কাঁধে ছিল ব্যাগ।
এর আগে, সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কলাবাগানে খুন হন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাবেক প্রটোকল অফিসার জুলহাজ মান্নান (৩৫) ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয় (২৮)। নিহত জুলহাজ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির খালাতো ভাই। জুলহাজ বাংলাদেশে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতেন। ‘রূপবান’ নামে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করতেন তিনি। অন্যদিকে তনয় আশা ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করতেন। লোকনাট্য নামক একটি থিয়েটারের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন।
এদিকে, এ ঘটনায় আনোয়ার হোসেন লিংকন (১৮) নামে এক কলেজছাত্রকে আটক করা হয়েছে। লিংকনের মা আনোয়ারা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, লিংকন হত্যাকারীদের ধরার চেষ্টা করেছিল, এসময় তার মাথায় আঘাত করে হত্যাকারীরা। সে গুরুতর আহত হয়। তাকে মেডিএইড জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে।
কলাবাগান থানার এএসআই হাবিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  কলাবাগানের তেঁতুলতলা গলির ৩৫ নম্বরের আছিয়া নিবাসের দ্বিতীয় তলায় মা সখিনা খাতুন (৯০) ও এক গৃহপরিচারিকা নিয়ে জুলহাজ থাকতেন। হামলাকারীরা সংখ্যায় ছিলেন পাঁচজন। গায়ে নেভি ব্লু টি-শার্ট ও প্রত্যেকের কাঁধে ছিল ব্যাগ। বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে এ খুনের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী রাকিব হাওলাদার নামে কলাবাগানের এক বাসিন্দা বলেন, হামলাকারীরা যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবর স্লোগান দিয়ে বের হয়। তাদের মধ্যে তিনজনের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছর। অন্য দু’জনের বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। সবার সামনে যে ছিল তার হাতে পিস্তল ছিল, বাকিদের কাঁধে ব্যাগ। বাসার ভেতর থেকে চিৎকার শুনে মাঠে খেলতে থাকা কিশোররা তাদের ধাওয়া দেয়। এসময় লেক সাকার্স সড়কের মসজিদের পাশে পুলিশের টহল গাড়ির সামনে পুলিশ তাদের আটকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশকে আঘাত করে তারা চলে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী স্বাধীন নামে এক কিশোর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিকাল ৫টার দিকে ওই বাসার সামনে চার-পাঁচজন লোককে নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্গে কথা বলতে শুনেছিলাম। তাদের হাতে দুটি বাক্স ছিল। তারা কুরিয়ার সার্ভিসের পরিচয়ে ভেতরে যেতে চাইছিল। তার কিছুক্ষণ পরই এ ঘটনা শুনতে পাই। আমরা মাঠে ক্রিকেট খেলছিলাম।
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে জুলহাজ মান্নান ভবনের নিরাপত্তা কর্মী পারভেজ মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কয়েকজন লোক কুরিয়ারের পার্সেল আছে বলে জুলহাজ স্যারের ফ্ল্যাটে যেতে চায়। আমি তাদের বিষয়ে অনুমতি নিতে দোতলায় যাই। তখন আমার পেছনে তাদের তিনজন উপরে ওঠে। জুলহাজ দরজা খুলে তাদের চেনেন না বলে দরজা লাগানোর চেষ্টা করেন। এসময় ওই তিনজন আমাকে আঘাত করে সিঁড়িতে ফেলে দিয়ে স্যারকে আঘাত করে। তারা কখন বের হয়ে গেল তাও টের পেলাম না।
কলাবাগান থানার এস আই আনসার আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাসার নিরাপত্তাকর্মীকে গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে। জুলহাজ ডাইনিং ও বেডরুমের দরজার মাঝামাঝি জায়গায় পড়েছিলেন, আর তনয় বেডরুমের ভেতরে। ঘটনার সময় জুলহাজের মা সখিনা বেগম ঘুমে ছিলেন। আর গৃহকর্মী রান্নাঘরে ছিলেন।
তিনি আরও জানান, সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে ডলফিন গলিতে টহল পুলিশ খুনিদের আটকানোর চেষ্টা করে। সে সময় এএসআই মমতাজ হোসেনকে চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে  খুনিরা সহজেই পালিয়ে যায়। ধস্তাধস্তির সময়ে হত্যাকারীদের একটি ব্যাগ রেখে দেয় পুলিশ। ব্যাগের ভেতরে মোবাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তা যাচাইবাছাই করা হচ্ছে।
হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম, উপ-কমিশনার আবদুল বাতেনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। এছাড়াও র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয় হত্যাকাণ্ড একটি টার্গেট কিলিং। খুনিরা তাদের হত্যা করে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় কলাবাগান থানার টহল পুলিশ ধরার চেষ্টা করেছিল। তখন তাদের হামলায় এক পুলিশ সদস্য আহত হন। আমরা ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করেছি। আশা করছি দ্রুত হত্যাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে পারব।
রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনার তদন্তে র‌্যাব পুলিশকে সহযোগিতা করবে। সব হত্যার ধরণ এক কী না তা তদন্ত করে দেখা হবে। সম্প্রতি যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির জন্য কোনও সমন্বিত মহলের অপচেষ্টা কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে। আমাদের ওপর আস্থা রাখুন, আমরা খুনীদের বিচারের মুখোমুখি করব।
এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ও পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (পিবিআই) আলামত সংগ্রহ করেছেন। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্যাটার্ন দেখে মনে হচ্ছে আগে যারা এসব ঘটিয়েছে তারাই এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। তবে তদন্তের আগে কোনও মন্তব্য করা যাবে না।
/এআরআর/এমও/এমএসএম /

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
ওপারের গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ
ওপারের গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন