ব্রিটেনের বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চল টাওয়ার হ্যামলেটস বারা। এখানকার রাজনীতিতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশিরা। নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের প্রধান ফ্যাক্টরও তারা। আগামী বছর (২০২৬) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচন। ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, তত আলোচনা বাড়ছে আসন্ন নির্বাচনের সমীকরণ নিয়ে।
ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের ভূমিকা
টাওয়ার হ্যামলেটসের ভোটারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটি। তাদের ভোট দেওয়ার ধরন নির্বাচনের ফলাফলকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে, অতীতের ফলাফলগুলোতে সেটি স্পষ্ট। লন্ডনের গুরুত্বপূর্ণ এই কাউন্সিলের প্রথম নির্বাচিত মেয়র লুৎফুর রহমান নিজেও একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি।
প্রার্থীরাও বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোতে মনোনিবেশ করে থাকেন। যার মধ্যে রয়েছে, আবাসন, শিক্ষা, সম্প্রদায় পরিষেবা, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব। এই বারাতে ভোটারদের একত্রিত করার জন্য কমিউনিটির সঙ্গে শক্তিশালী বন্ধন এবং নেটওয়ার্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচনের ইতিহাস এবং বিতর্ক
টাওয়ার হ্যামলেটস বারবার নির্বাচনি অনিয়মের অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে, বিশেষ করে ভোটার নিবন্ধন এবং পোস্টাল ভোটের ক্ষেত্রে। ২০১৪-২০১৫ সালের নির্বাচনি আদালতের মামলা, যা লুৎফুর রহমানের বিজয়কে বাতিল করে দেয়, নির্বাচনি অখণ্ডতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
বিগত তিনটি মেয়র নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকালে এখানকার রাজনীতির ধারা অনেকটাই বোঝা যায়। ২০১৪-২০১৫ সালের নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে জয় লাভ করেন লুৎফুর রহমান। তবে পরে আদালতের রায়ে বাতিল ঘোষণা করা হয় সেই ফলাফল। আবারও উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয় লাভ করেন জন বিগস ও ২০২২ সালে লুৎফুর রহমানের অ্যাস্পায়ার পার্টি ক্ষমতায় ফিরে আসে।
এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, নির্বাচনি আইনের পরিবর্তনের কারণে পরবর্তী নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ‘পাস্ট দ্য পোস্ট’ সিস্টেম ব্যবহার করা হবে এবং এটি নির্বাচনের ফলাফলে ভূমিকা রাখবে।
২০২৬ সালের দিকে তাকিয়ে
২০২৬ সালের নির্বাচনে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশিরা বড় ভূমিকা রাখবেন। ব্রিটিশ বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের আস্থা তৈরি এবং নির্দিষ্ট চাহিদা পূরণে প্রার্থীদের দক্ষতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে। নির্বাচনি আইনের পরিবর্তনের প্রভাব খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে খুব সম্ভবত ধারণা করা হচ্ছে।
সরকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল পুনর্গঠনে ৬ মিলিয়ন পাউন্ডের হস্তক্ষেপ- টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের অভ্যন্তরে ‘বিষাক্ত’ রাজনৈতিক পরিবেশ এবং গুরুতর শাসন ব্যর্থতা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে তা সরাসরি মোকাবিলা করার জন্য যুক্তরাজ্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। সৃষ্ট এই হস্তক্ষেপ কাউন্সিলের কার্যকরভাবে পরিচালনা করার ক্ষমতার উপর আস্থার উল্লেখযোগ্য ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়।
চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য, কিম ব্রমলি-ডেরির নেতৃত্বে মন্ত্রী পর্যায়ের দূতদের একটি দল গঠন করা হয়েছে। ব্রমলি-ডেরি, সহকারী দূত পাম পার্কেস এবং শোকত লালের সঙ্গে, কাউন্সিলের শাসনব্যবস্থা, নেতৃত্ব, অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতি এবং বহিরাগত অংশীদারত্বের একটি ব্যাপক পুনর্গঠনের দায়িত্বে রয়েছেন।
দূতদের দায়িত্ব হলো কাউন্সিল একটি কঠোর ধারাবাহিক উন্নতি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, যার লক্ষ্য টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দাদের জন্য আরও ভালো ফলাফল প্রদান করা।
তবে এজন্য তাদের সম্মানী নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে, কিম ব্রমলি-ডেরি ১২০ দিনের জন্য প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ পাউন্ড করে সম্মানী পাবেন। যেখানে সহকারী দূতদের প্রত্যেককে প্রতিদিন ১ হাজার পাউন্ড করে দেওয়া হবে, মোট ১২০ দিন।
নির্বাচিত রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি বন্ধে এমন লাখ লাখ পাউন্ড ব্যয় নিয়ে ভোটাররা উদ্বিগ্ন, যাদের ভোটে নির্বাচন করেছিল জনগণ। কাউন্সিল কর্তারা রেকর্ড বেতন পাচ্ছেন, অন্যদিকে বাসিন্দারা কাউন্সিল ট্যাক্স বৃদ্ধির শিকার হচ্ছেন। বেশ কয়েকজন বাসিন্দা এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। আসন্ন নির্বাচনে এই বিষয়টিও বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। নির্বাচিত কর্মকর্তাদের প্রতি জনসাধারণের আস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং সেই আস্থার যে কোনও অনুভূত লঙ্ঘন ভোটারদের মনোভাবকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। দুর্নীতির অভিযোগ বা প্রমাণিত ঘটনা ভোটারদের একত্রিত করার সম্ভাবনা রাখে।
কাউন্সিলের বাজেটে এই হস্তক্ষেপের খরচ এবং সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য ৬ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ করা হয়েছে। এই ব্যাপক হস্তক্ষেপ ২০২৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে, যা চিহ্নিত সমস্যাগুলোর তীব্রতা প্রতিফলিত করে। সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এটি কোনও নিষ্ক্রিয় তদারকি নয় এবং কাউন্সিল যদি উল্লেখযোগ্য এবং টেকসই অগ্রগতি প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয় তবে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দূতরা গৃহায়ন, সম্প্রদায় এবং স্থানীয় সরকার বিষয়ক সচিবের কাছে নিয়মিত প্রতিবেদন জমা দেবেন, যা কাউন্সিলের কর্মক্ষমতা এবং জবাবদিহিতার উপর নিবিড় পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেবে।