আদর্শ সন্তান মানবজীবনের অনন্য সৌন্দর্য। একজন নেক সন্তানই পারে মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে এবং তাদের প্রকৃত সুখ উপহার দিতে। একইভাবে নেক সন্তান ভবিষ্যৎ সমাজের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তাই নেক সন্তান লাভ করা প্রত্যেক বাবা-মায়েরই আজন্ম স্বপ্ন। নেক সন্তান লাভ করতে মা-বাবার জন্যও কিছু করণীয় নির্ধারণ করেছে ইসলাম। সেগুলোর একটি হলো, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর তার ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দেওয়া।
ছেলে বা মেয়ে যেই হোক– সদ্যভূমিষ্ট সন্তানকে পরিষ্কার করার পর আজান-ইকামতের আনুষ্ঠানিকতা সারতে হয়। এটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত সুন্নাত। রাসুল (সা.) নিজেও তার নাতি হাসান (রা.) এর কানে আজান দিয়েছিলেন।
উবাইদুল্লাহ ইবনে আবু রাফি (রা.) বলেন, ফাতিমা (রা.) যখন আলী (রা.) এর ছেলে হাসানকে (রা.) প্রসব করলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তার কানে নামাজের আজানের ন্যায় আজান দিয়েছিলেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ৫১০৫)।
নবজাতকের কানে কেন দেওয়া হয় আজান-ইকামত?
এ বিষয়ে হজরত মাওলানা আশরাফ আলি থানভি (রহ.) বলেন, ‘আজান-ইকামতের মাধ্যমে শিশুর কানে প্রথমেই আল্লাহর পবিত্র নাম পৌঁছে দেওয়া হয়। যেন এর প্রভাবে শিশুর ঈমানের ভিত্তি মজবুত হয়ে যায় এবং শয়তান দূরে সরে যায়। এই দুটি হিকমতেরই সারমর্ম হলো, দুনিয়াতে আসার পর তুমি আল্লাহকে ভুলে গাফেল হয়ে থেকো না।’ (তরবিয়তে আওলাদ, হজরত থানভি রহ.)
এ প্রসঙ্গে সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.) বলেন, ‘আজান ও ইকামত শুধু নামাজের জন্য নির্দিষ্ট। আর শিশুর ওপর নামাজ ফরজ না হওয়া সত্ত্বেও আজান-ইকামতের উদ্দেশ্য সম্ভবত এই যে, কোনও কিছু পৌঁছবার আগে তার কানে যেন সর্বপ্রথম আল্লাহর নামাজ ও তার ইবাদতের আহ্বান পৌঁছে যায়।’
নবজাতকের কানে আজান-ইকামত দেওয়ার পদ্ধতি
এ ক্ষেত্রে আজান ও ইকামত দেওয়ার পদ্ধতি হলো, যিনি আজান দেবেন তিনি কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন এবং তিনি নিজেই নবজাতককে কোলে নেবেন অথবা যদি অন্য কেউ কোলে নেন, তাহলে তিনি আজান দানকারী ব্যক্তির মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াবেন। এভাবেও সম্ভব না হলে নবজাতককে শুইয়ে দিতে হবে এবং এরপর আজান দানকারী তার সামনে দাঁড়াবেন। আজান দেওয়ার সময় নবজাতকের মাথা দক্ষিণ দিকে থাকবে। আর ইকামতের সময় উত্তর দিকে থাকবে। এতে ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দেওয়া হয়ে যাবে। (তাকরিরাতে রাফিয়ি আলা হাশিয়াতি ইবনি আবিদিন: ২/৪৫)
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষক, মারকাযুল হুদা মাদ্রাসা ঢাকা