X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১
বিবিসি বাংলার খবর

জামায়াতকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগ

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:২৮আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:৩০

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং দল বিলুপ্তির পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগ করেছেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি জামায়াতে ইসলামীর জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল পদে ছিলেন। দলের আমির মকবুল আহমদকে চিঠি পাঠিয়ে পদত্যাগ করেছেন তিনি। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেবের পদত্যাগের বিষয়টি শুনেছি। আগে পুরো বিষয়টি আমি জেনে কথা বলতে পারবো।’ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগ নিয়ে বিবিসি বাংলার খবর

বিবিসি বাংলা জানায়, আব্দুর রাজ্জাক তার পদত্যাগের কারণ হিসেবে মূলত ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের ভূমিকাকেই তুলে ধরেছেন। ব্যারিস্টার রাজ্জাক দাবি করেছেন, একাত্তরের ভূমিকার কারণে দলটি যাতে জাতির কাছ ক্ষমা চায় সেজন্য তিনি দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়েছেন। এই ইস্যুতে তিনি জামায়াতকে বিলুপ্ত করে দেওয়ারও প্রস্তাব করেছিলেন দলীয় ফোরামে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বর্তমানে ব্রিটেনে অবস্থান করছেন। লন্ডনের কাছে এসেক্সের বারকিং থেকে পাঠানো চিঠিতে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের আওতায় ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক দল গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। কিন্তু সে দাবি অনুযায়ী জামায়াত নিজেকে এখন পর্যন্ত সংস্কার করতে পারেনি। তিনি লিখেছেন, ‘স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর আজও দলের নেতৃবৃন্দ ৭১-এর ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইতে পারেনি। এমনকি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ প্রসঙ্গে দলের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেনি। অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় এখন ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামায়াতের ক্ষতিকর ভূমিকা সম্পর্কে ভুল স্বীকার করে জাতির সাথে সে সময়ের নেতাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে পরিষ্কার অবস্থান নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।’ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগপত্র

ব্রিটেনে যাওয়ার আগে ব্যারিস্টার রাজ্জাক ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের প্রধান কৌঁসুলি হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৬ সালে জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি।
পদত্যাগপত্রে ব্যারিস্টার রাজ্জাক দাবি করেন, গত প্রায় দুই দশক তিনি জামায়াতকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে ৭১-এ দলের ভূমিকা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হওয়া উচিত এবং ওই সময়ে জামায়াতের ভূমিকা ও পাকিস্তানকে সমর্থনের কারণ উল্লেখ করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। তার মতে, জামায়াত ৬০-এর দশকে সব সংগ্রামে যেমন অংশ নিয়েছে, তেমনি ৮০-এর দশকে অন্যান্য দলের সঙ্গে মিলে সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। আব্দুর রাজ্জাক তার পদত্যাগপত্রে বলেন, ‘দলটির এসব অসামান্য অবদান ৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার ভুল রাজনৈতিক ভূমিকার কারণে স্বীকৃতি পায়নি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা পরবর্তীকালে জামায়াতের সব সাফল্য ও অর্জন ম্লান করে দিয়েছে।’ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগপত্র

তিনি দাবি করেন, ২০০১ সালে জামায়াতের সে সময়ের আমির এবং সেক্রেটারি জেনারেল মন্ত্রী হওয়ার পর বিজয় দিবসের আগেই ১৯৭১ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন একটি কমিটি এবং বক্তব্যের খসড়াও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া, ২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বৈঠকেও তিনি প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন এবং ২০০৭-০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময়েও তিনি জামায়াতকে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে ২০১১ সালে মজলিসে শুরার সবশেষ প্রকাশ্য অধিবেশনেও তিনি বিষয়টি তুলে ধরেন। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশের অবহেলায় তার প্রস্তাব পরাজিত হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগপত্র

এরপরে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বর্তমান আমির মকবুল আহমদকেও চিঠি পাঠিয়ে ১৯৭১ প্রসঙ্গে বক্তব্য দেওয়ার প্রস্তাব দেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক। মকবুল আহমদ আমির হওয়ার পর ২০১৬ সালের নভেম্বরে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের মতামত চাইলে তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া সংক্রান্ত একটি খসড়া বক্তব্য পাঠান। কিন্তু সেটিও আর বাস্তবায়িত হয়নি।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সবশেষে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর জানুয়ারি মাসে জামায়াতের করণীয় সম্পর্কে আমার মতামত চাওয়া হয়। আমি যুদ্ধকালীন জামায়াতের ভূমিকা সম্পর্কে দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দেই। অন্য কোনও বিকল্প না পেয়ে বলেছিলাম জামায়াত বিলুপ্ত করে দিন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমার তিন দশকের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।’ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগপত্র

পদত্যাগপত্রে তিনি বৈশ্বিক রাজনীতির বাস্তবতা ও একাত্তরে দলের ভূমিকা নিয়ে বর্তমানে যে প্রভাব তা তুলে ধরেছেন দলের আমিরের কাছে। তিনি দাবি করেন, জামায়াতে যোগ দেওয়ার পর তিনি দলের ভেতর থেকে সংস্কারের চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘গত ৩০ বছর আমি সেই চেষ্টাই করেছি। আমি কাঠামোগত সংস্কার ও নারীর কার্যকর অংশগ্রহণের পক্ষে ছিলাম। ২০১৬ সালে চিঠি দিয়ে অভ্যন্তরীণ সংস্কারের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। অন্য মুসলিম দেশগুলোর উদাহরণ দিয়েছি। কিন্তু কোনও ইতিবাচক সাড়া পাইনি।’

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দলের সর্বশেষ পদক্ষেপ তাকে হতাশ করেছে বলেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

 

 

 

/এসটিএস/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
চরমোনাই পীরের ভাইয়ের বাসায় জামায়াতের ৯ নেতা
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
নীলফামারীতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারিসহ ৩ জন গ্রেফতার
সর্বশেষ খবর
মেসির জোড়া গোলে মায়ামির আরেকটি জয় 
মেসির জোড়া গোলে মায়ামির আরেকটি জয় 
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ৫ ইউনিয়নে চলছে ভোট গ্রহণ
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ৫ ইউনিয়নে চলছে ভোট গ্রহণ
যাদের স্যালাইনে বাঁচে প্রাণ, তাদের মজুরি বাড়ে না
১৬ শ্রমিকের উৎপাদিত স্যালাইন দিয়ে চলছে ৯ জেলার হাসপাতালযাদের স্যালাইনে বাঁচে প্রাণ, তাদের মজুরি বাড়ে না
সিলেটে ট্রাকের ধাক্কায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
সিলেটে ট্রাকের ধাক্কায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে