মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসক অধ্যাপক জিলান মিয়া সরকারের নাতির খোঁজ নিয়েছেন কারাবন্দি চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এমন আচরণে খুশি হয়েছেন এ চিকিৎসক। সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে জিলান মিয়া সরকার বলেন, ‘আমি পরশু দিনও পৌনে এক ঘণ্টা ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) দেখেছি। প্রায় আমি উনাকে দেখি। ম্যাডাম খুশি, খুব ইম্প্রেসিভ, তিনি সব সময় হাসিখুশিতে কথা বলেন।’
তখন সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়- আপনারা বলছেন মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসা সেবায় খালেদা জিয়া খুশি। তিনি আপনাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক জিলান মিয়া সরকার বলেন, ‘আমি দুইদিন ছুটিতে ছিলাম, তখন তাকে দেখতে যেতে পারিনি। ছুটিতে যাওয়ার আগে তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলাম। আমার নাতি হয়েছে (ছেলের সন্তান)। ছুটি শেষে যখন তাকে (খালেদা জিয়া) দেখতে গিয়েছিলাম, তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আপনার ছেলের বউয়ের কি সন্তান হয়েছে। তখন আমি তাকে বলি নাতি হয়েছে।’
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক বলেন, ‘রোগীর সঙ্গে কথা বলে একজন মেডিক্যাল পার্সন যে জিনিসটি বুঝতে পারবেন সেটি অন্য কেউ শুনলে তা অতিরঞ্জিত মনে হবে। যারা তার স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলছেন, তারা আমার সঙ্গে অথবা মেডিক্যাল বোর্ডের কোনও চিকিৎসকের সঙ্গে কথা না বলেই অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করছেন।’
তিনি বলেন, ‘রোগীর ব্যাপারে চিকিৎসকদের মনোভাব অনেক আন্তরিক। আমাদের চিকিৎসক বোর্ডের সদস্যরা তাকে (খালেদা জিয়া) যথেষ্ট স্বচ্ছভাবে, যত্ন নিয়ে দেখছেন। চিকিৎসকরা প্রতিদিনই তার খবর নেন।’
বিএসএমএমইউ পরিচালক আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া আমাদের হাসপাতালে সাত মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, বাতজ্বর, দাঁতের সমস্যাসহ কিছু সমস্যা ছিল। ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তার চিকিৎসার জন্য একটি শক্তিশালী মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। প্রতিনিয়ত তার চিকিৎসা চলছে। এই বোর্ডে চিকিৎসকরা প্রতিদিন তার ব্লাডপ্রেসার, পালস, ব্লাড সুগার মেপে দেখছেন। একদিন পর পর ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউ’র উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শাহানা আক্তার বলেন, ‘আমরা প্রথমেই বলেছি খালেদা জিয়া দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে বাতজ্বর রোগে ভুগছেন। এজন্য অত্যাধুনিক চিকিৎসা আছে, বিশ্বমানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। এখন অত্যাধুনিক চিকিৎসা আমাদের দেশেও সম্ভব। যেকোনও চিকিৎসা দিতে হলে কিছু ভ্যাক্সিন দিতে হয়। এখন উনি (খালেদা জিয়া) যদি সম্মতি না দেন তাহলে ট্রাডিশনাল মেডিসিন দিয়ে এরচেয়ে বেশি ইমপ্রুভমেন্ট কখনও আশা করা যায় না। পৃথিবীর কোনও বাতরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও তা আশা করবেন না। হয়তো এ বিষয়ে তিনি চিন্তাভাবনা করছেন, হয়তো সম্মতি দেবেন।’
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিল থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের কেবিন ব্লকের ৬২১ নম্বর কক্ষে কারা তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন।