X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

কারামুক্ত নেতাদের কমিটিতে যুক্ত করবে হেফাজত

সালমান তারেক শাকিল
০৭ জুলাই ২০২৩, ২২:০০আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২৩, ২২:১১

২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই বছরে গ্রেফতার হয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতা। সেই নেতাদের মধ্যে মাওলানা মামুনুল হক, মনির হোসাইন কাসেমীসহ কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই এখন মুক্ত। এই মুক্ত নেতাদের হেফাজতের বর্তমান কমিটিতে যুক্ত করতে চায় সংগঠনটির বর্তমান নেতৃত্ব। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা এ সম্ভাবনার কথা জানান।

নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনের বিরোধিতা করে দেওয়া হেফাজতের বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ২০২১ সালের মার্চের ২৫, ২৬ ও ২৭ তারিখ দেশজুড়ে সহিংস ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৭ জন মানুষের প্রাণহানি হয়। পরে ওই বছরের ১১ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন মামলায় হেফাজত নেতাদের গ্রেফতার শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই পরিস্থিতির মধ্যে ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত করেন তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। পরে ৫ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে হেফাজত। ৭ জুন (২০২১) ৩৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয় এবং ওই কমিটিতে গ্রেফতারকৃত কোনও নেতাকেই জায়গা দেয়নি হেফাজত। ১৯ আগস্ট জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর ২৯ আগস্ট সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও খাস কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তে আমির হন মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।

হেফাজতের বর্তমান কমিটির একাধিক প্রভাবশালী নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এ বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত হেফাজতের সাবেক প্রায় সব নেতাই মুক্তি পেয়েছেন। তাদের সবাই হেফাজতের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটির সাবেক নেতা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য– মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা মুফতি বশির উল্লাহ, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, মুফতি হারুন ইজহার, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা নাসিরুদ্দিন মুনির, মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জি, মুফতি শরীফ উল্লাহ, মাওলানা এহসানুল হক, মাওলানা হাফেজ এহতেশামুল হক সাখী, মাওলানা শরিফ হুসাইন, মাওলানা হাফেজ সানাউল্লাহ, মাওলানা আসাদুল্লাহ, মাওলানা ইন'আমুল হাসান ফারুকী, মাওলানা মঞ্জুরুল হাসান নাদিম।

হেফাজতের প্রভাবশালী একজন নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘হেফাজতের আগের কমিটির যারা যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের সংগঠনে যুক্ত করার বিষয়ে শীর্ষ নেতারা আন্তরিক। তবে কে কোন দায়িত্বে যোগ দেবেন, তা নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি। হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান সৌদি আরবে আছেন। তিনি ফিরে এলে এ বিষয়ক সিদ্ধান্ত জানা যাবে।’

কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার ভাষ্য, মহাসচিব সৌদি থেকে ফিরে এলে আমিরের উপস্থিতিতে ঢাকায় বৈঠক হবে। সেই বৈঠকেই দায়িত্ব বন্টন নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে।

কোনও কোনও নেতা সংগঠন পুনর্গঠনের কথা উল্লেখ করলেও একাধিক প্রভাবশালী নেতার দাবি, হেফাজত পুনর্গঠন নয়, সম্প্রসারণ করা হবে।

গত ৭ জুন হেফাজত মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানের নেতৃত্বে কারামুক্ত আলেমদের একটি দল হেফাজতের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী, মুফতি হারুন ইজহার, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সুবহানী, মাওলানা মুহাম্মাদ মীর ইদরীস, মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আযহারী, মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী প্রমুখ।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, ওই বৈঠকে হেফাজতের আমির নিজেই কারামুক্ত আলেমদের সংগঠনে দায়িত্বগ্রহণ নিয়ে ইতিবাচক অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।

কারামুক্ত আলেমদের কারও কারও মত, কমিটি সম্প্রসারণ করতে হলে আগে কারামুক্ত আলেমদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। ঈদের আগে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেও হেফাজতের আমির সুনির্দিষ্ট করে কোনও মত প্রকাশ করেননি। এ কারণে কারামুক্ত আলেমদের কারও কারও ভাষ্য, আলোচনা সাপেক্ষে হেফাজতে যুক্ত করা ভালো।

জানতে চাইলে হেফাজতের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের হেফাজতে ইসলাম সারা দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন। আগে যেভাবে সুন্দর, সুশৃঙ্খলভাবে সংগঠন ছিল, আশা করি সেই আনন্দঘন পরিবেশ ফিরে আসুক। এখন কারামুক্তদের বিষয়ে করণীয় কী, তা কমিটিতে নির্ধারণ করতে হবে।’

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন হেফাজতের আগের কমিটির সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। কারামুক্ত এই নেতা সৌদি আরব থেকে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা হেফাজতের সঙ্গেই আছি। যদি কোনও নতুন উদ্যোগ বা সিদ্ধান্ত আসে, নিশ্চয়ই আমরা থাকবো।’

কারামুক্ত আরেক নেতার ভাষ্য, হেফাজত পুনর্গঠনের প্রস্তাব উঠেছে এরইমধ্যে। সে ক্ষেত্রে সম্প্রসারণের বদলে পুনর্গঠন হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার সন্ধ্যায় হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী বলেন, ‘আমিরে হেফাজতের সঙ্গে কারামুক্ত আলেমদের সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ বিষয়ক আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে মহাসচিব ভালো বলতে পারবেন।’

প্রসঙ্গত, নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ২০১১ সালে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আমির ছিলেন প্রয়াত আল্লামা আহমদ শফী ও মহাসচিব প্রয়াত জুনায়েদ বাবুনগরী।

২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আহমদ শফীর মৃত্যুর পর ওই বছরের ১৫ নভেম্বর জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করে দ্বিতীয়বারের মতো কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করেছিল হেফাজতে ইসলাম।

/আরআইজে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই নিয়ে হেফাজতের যত আপত্তি
২৯ ডিসেম্বরে ঢাকায় মহাসমাবেশ স্থগিত করেছে হেফাজত
ঢাকায় মহাসমাবেশের হুঁশিয়ারি হেফাজতের
সর্বশেষ খবর
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে অপহরণের শিকার বাবা-ছেলেসহ ৩ জন
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে অপহরণের শিকার বাবা-ছেলেসহ ৩ জন
তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ আসছে আজ
তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ আসছে আজ
থাইল্যান্ড সফর নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন প্রধানমন্ত্রী
থাইল্যান্ড সফর নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন প্রধানমন্ত্রী
অবশেষে চট্টগ্রামে স্বস্তির বৃষ্টি
অবশেষে চট্টগ্রামে স্বস্তির বৃষ্টি
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!