‘গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের পক্ষে গণচেতনা গড়ে তুলে সিরাজুল আলম খান বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ভিত্তি রচনা করেছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাতাদের নির্মাতা তিনি। কিন্তু আজ বাংলাদেশে দুর্বৃত্ত পুঁজির কাল চলছে। এর থেকে মুক্তির জন্য আমাদের একাত্তর ও ঊনসত্তরের চেয়ে বেশি কঠিন সংগ্রাম করতে হবে।’
শুক্রবার (৭ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’খ্যাত সিরাজুল আলম খানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এই সভার আয়োজন করে সিরাজুল আলম খান ফাউন্ডেশন ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসএকে)।
ছয় দফাকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধে সিরাজুল আলম খানের অবদান কিংবদন্তিতুল্য মন্তব্য করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাতাদের নির্মাতা সিরাজুল আলম খান। বঙ্গবন্ধুর কুশলী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের তিনি মাঠের নায়ক হিসেবে কাজ করেছেন।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান বলেন, ‘সিরাজুল আলম খান বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক বড় একটি অধ্যায়। স্বাধীনতাসংগ্রামের পাশপাশি তিনি রাজনীতিতে আপসহীন ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি যে সাম্যের গণচেতনা তৈরি করেছিলেন, তা আজ নেই, মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার থেকে রাষ্ট্রব্যবস্থা সরে গেছে। স্বৈরতন্ত্র ও লুটেরাদের ধারাবাহিক রাজনীতি ও কালাকানুন চলছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশে দুর্বৃত্ত পুঁজির কাল চলছে। এ থেকে মুক্তির জন্য আমাদের একাত্তর ও ঊনসত্তরের চেয়ে বেশি কঠিন সংগ্রাম করতে হবে। সিরাজুল আলম খান বেঁচে না থাকার ফলে যে শূন্যতা, তা আমরা এই সংগ্রামে অনুভব করবো।’
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্ব সবচেয়ে প্রয়োজন মন্তব্য করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘স্বাধীনতাসংগ্রামে সিরাজুল আলম খান যে ভূমিকা রেখেছেন, তা না হলে বাংলাদেশ এত দ্রুত স্বাধীন হতো না। আজ দেশ যে মাফিয়া চক্রের কবলে, এ থেকে পরিত্রাণের জন্যও তার সবচেয়ে প্রয়োজন ছিল।’
আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক) সভাপতি জেড আই খান পান্না বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সিরাজুল আলম খানের অবদান শত চেষ্টা করলেও মুছে ফেলা যাবে না। তিনি তার জীবনের শেষ সময়গুলোতেও সৎ ব্যক্তিদের ঐক্য দেখতে চাইতেন। অথচ আজ বাংলাদেশে অসৎ পথের আয়কারীদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের তার শিক্ষা-দীক্ষায় সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন এসএকের সভাপতি সাংবাদিক আবু সাঈদ খানের সভাপতিত্বে সভায় ‘স্বাধীনতাসংগ্রাম ও সিরাজুল আলম খান’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন লেখক ও গবেষক শামসুদ্দিন পেয়ারা। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডির) সহ-সভাপতি এম এ আউয়াল, চিকিৎসক ডা. এবিএম প্রমুখ।