তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসা যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে। সরকারের সঙ্গে আলোচনার কথা থাকলেও প্রতিনিধি দলটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে পৃথক কোনও বৈঠক করবে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ঢাকায় প্রথম আসা মার্কিন প্রতিনিধি দলের তৎপরতার ওপর কড়া নজর রাখছেন তারা।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ সহকারী এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র ডিরেক্টর এলিন লাউবাকের, ইউএসএআইডি’র এশিয়া-বিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মাইকেল শিফার এবং ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার। শনিবার মার্কিন দূতাবাস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে।
জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের পর নতুন সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য মার্কিন প্রতিনিধি দল প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে তাদের। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করা হতে পারে।
আওয়ামী লীগের বৈঠক হবে কিনা, প্রশ্নে দলটির নেতারা স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি। এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া মেলেনি। পরে জানতে চাইলে শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৈঠকের বিষয়ে এখনও কিছু জানা নেই।’ ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি এখন পর্যন্ত (রাত ৯টা)।
আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্র বিষয় দেখভাল করা একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভিসানীতি ঘোষণাসহ নানাভাবে বেশ তৎপরতা দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে নির্বাচনের পর দেশটির তেমন কোনও প্রকাশ্য তৎপরতা দেখা যায়নি। বরং ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নতুন সরবারের কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভোটের পর প্রথমবারের মতো মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসলো। তারা যখন বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তখন আওয়ামী লীগের সঙ্গেও বৈঠক করা কথা। তবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের তৎপরতার ওপর আওয়ামী লীগ নজর রাখছে।
মার্কিন দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পারস্পরিক স্বার্থের অগ্রগতির জন্য কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে প্রতিনিধি দল । সফরকালে তারা তরুণ অ্যাক্টিভিস্ট, সুশীল সমাজ, শ্রম সংগঠক এবং মুক্ত গণমাধ্যমের বিকাশে নিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে এগিয়ে নেওয়া, মানবাধিকারকে সমর্থন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, আন্তর্জাতিক হুমকির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক সহনশীলতার শক্তিকে এগিয়ে নিতে এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রচারে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
শনিবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির তিন নেতা। তারা হলেন— দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। তবে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে মুখ খোলেননি বিএনপির নেতারা।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে বিএনপির মির্জা ফখরুল কোনও কথা বলেননি। পরে সাংবাদিকরা দলের বিদেশ-বিষয়ক কমিটির প্রধান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আলোচনার বিষয়বস্তু জানতে চাইলে ‘কিছু বলার নেই’ বলে এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের ইনভাইট করেছে, আমরা এসেছি। কথা বলেছি, দ্যাটস অল।’
মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেজে বৈঠকের একটি ছবি শেয়ার করে লেখা হয়েছে, ‘ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে বোঝা এবং স্বীকৃত সমাধান খুঁজে বের করার মূল চাবিকাঠি হলো গঠনমূলক সংলাপ। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কারাগারে বন্দি হাজার হাজার বিরোধীদলীয় সদস্যের বিষয়ে এক ফলপ্রসূ আলোচনায় আমরা স্বাগত জানিয়েছি বিএনপি মহাসচিবকে। অব্যাহত সম্পর্কের অপেক্ষায়!’
আরও পড়ুন: