একসময়ের জোটসঙ্গী, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও প্রকাশ্যে কোনও সম্পর্কে যাবে না বিএনপি। গত জুনের শুরু থেকে ভেতরে ভেতরে উভয় পক্ষের যোগাযোগ থাকলেও বেশ কয়েকটি কারণে জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্যে কোনও সম্পর্ক রাখবে না দলটি। এক্ষেত্রে সরকারবিরোধী যুগপৎ কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে জামায়াত কর্মসূচি দিলেও বিএনপির কিছু করার থাকবে না বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে জানান, বেশ কয়েকটি কারণে জামায়াতের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্কে ফিরে যাওয়ার কোনও সুযোগ বিএনপির সামনে নেই। নেতাদের সঙ্গে কথা বলে অন্তত চারটি কারণ পাওয়া গেছে, এসব কারণে জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্য দূরত্ব রক্ষা করাই নিরাপদ মনে করে বিএনপি।
এই চারটি কারণ হচ্ছে—প্রথমত, বিএনপির বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্ব জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখার বিপক্ষে। দ্বিতীয়ত, প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির শঙ্কায় সম্পর্ক জোড়া লাগানোর সম্ভাবনা নেই। তৃতীয়ত, বিএনপির মধ্যে বেশিরভাগ নেতাই জামায়াতের সঙ্গে জোটগত সম্পর্ক রাখার বিপক্ষে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে থেকে দলের মধ্যে এই পক্ষটি সক্রিয়। চতুর্থত, বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে জামায়াতের সঙ্গে থাকা না থাকার লাভ-ক্ষতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনায় লাভের চেয়ে ক্ষতির দিকই বেশি উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে মিলে বিএনপির কর্মসূচি দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। যারা বলছে সম্পর্ক হবে, যুগপৎ কর্মসূচি দেওয়া হবে জামায়াতের সঙ্গে, তারা ভুল বলছে। বিএনপির মধ্যেই অনেকে রয়েছে, যারা জামায়াতকে তাদের পাশে চায়। তারাই এ কথা ছড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছে।’
এই সদস্য আরও বলেন, ‘অতীতে দুই দলের জোট নিয়ে, ভোট নিয়ে লাভ-ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। এতে ক্ষতি বৈ লাভ কম। বিগত ২০১৮ সালের পর থেকে ক্রমাগত দূরত্ব রাখার কারণে আওয়ামী লীগের ক্রমাগত ‘বিএনপি-জামায়াত’ প্রচারণা এখন বন্ধ হওয়ার পথে। বিএনপির রাজনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করেছে এই জোট।’
জামায়াতের সঙ্গে আবারও একসঙ্গে কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এরকম কোনও চিন্তা বিএনপির নাই। রাজনীতিতে অনেক আলোচনা হয়, আলোচনা চলে আসে। কিন্তু বিএনপির অবস্থানে কোনও পরিবর্তন আসেনি।’
বিএনপি নেতারা সন্দেহ করছেন, সরকারবিরোধী যুগপৎ কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে জামায়াত কর্মসূচি দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকার চাইবে উভয় পক্ষকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে, যেটা বিএনপির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক হবে।
যুগপতের দিন জামায়াতও কর্মসূচি দিতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখনও চূড়ান্ত হয় নাই।’
দলটির আরেকজন নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘কথাবার্তা চলছে।’
বিএনপির একজন দায়িত্বশীল উল্লেখ করেছেন, বিএনপি দুটো দাবি সেটেল করেছে। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন। রাজপথকেন্দ্রিক সহিংস কর্মসূচি এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে গঠনমূলকভাবে যেভাবে আন্দোলন-কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে বিএনপি, তাতে দেশে-বিদেশে দলটি সম্পর্কে ইতিবাচক অবস্থা তৈরি হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘বিএনপি কখনোই যুদ্ধ করবে না, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন সামনের দিকে নিয়ে যাবে।’
নতুন কর্মসূচি সহসাই!
বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, খুব সহসাই নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। যুগপতে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এরইমধ্যে কিছু আলাপও করে নেবে দলটির নেতারা।
আলাপে জানা গেছে, নতুন কর্মসূচির ক্ষেত্রে অবস্থান কর্মসূচি, পদযাত্রা, গণমিছিলের মতো কর্মসূচিকেই এগিয়ে রাখছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তারা চাইছেন, আন্দোলনকে পুরো অহিংস পদ্ধতিতে সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি যৌক্তিক অবস্থানে পৌঁছানো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘খুব সহসাই কর্মসূচির ঘোষণা আসবে।’
গণতন্ত্র মঞ্চের একটি সূত্র জানায়, আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে বিএনপির সঙ্গে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক আছে। আগামী শুক্রবার ৮ (সেপ্টেম্বর) সম্ভাব্য নতুন কর্মসূচি থাকতে পারে।
এ ব্যাপারে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। খুব সহসাই নতুন কর্মসূচি আসবে।’
আরও পড়ুন: