বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আগামী দিনে ফ্যাসিস্টবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আলাপ আলোচনা থেকে সরকার গঠন পর্যন্ত সব কিছুই এক সঙ্গে করতে চাই। আমরা আমাদের মধ্যে কোনও সমস্যা দেখি না। তবে একটি কৃত্রিম সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে। বিভিন্ন দল একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলছে। কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করছে। এটা ঠিক নয়। কারণ এমন চলতে থাকলে ৫ আগস্টে অর্জিত আমাদের বিজয় শেষ হয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাজধানীর মালিবাগের একটি রেস্টুরেন্টে গণঅধিকার পারিষদের ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ভিপি নুরুল হক নূরের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র সভাপতি ফারুক হাসানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
অনুষ্ঠানে অতিথিদের অভিবাদন জানান গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর।
মির্জা আব্বাস বলেন, আজ ইফতার মাহফিলে আমরা যেভাবে বসেছি, আগামী দিনের সব কার্যক্রমেও সেভাবে বসবো। দেশটাকে সুন্দর করতে হবে। হিংসা, বিদ্বেষ, ঈর্ষাপরায়ণ কিংবা পরশ্রীকাতর হয়ে কখনও দেশের জন্য ভালো কিছু করা যাবে না।
তিনি সবাইকে নিজের বিবেকের কাছে দায়ী থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ৫ আগস্টের রক্তক্ষয়ী আন্দোলন যেন কারও ষড়যন্ত্রের কারণে বৃথা না যায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে আলাপ আলোচনা চলতেই থাকবে। কিন্তু আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চাই। জনগণ প্রধান উপদেষ্টার কাছে সে রোডম্যাপের প্রত্যাশা করে। যদিও তিনি এ বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তারপরও শুধু একটি ঘোষণায় আমরা পরিষ্কার হতে চাই। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী আশা করি তিনি শীঘ্রই জাতীয় নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন।
স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ছাত্র সমাজের অগ্রণী ভূমিকা ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, মানুষের স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামেও ছাত্রদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। বর্তমানে আমরা যে মুক্ত পরিবেশে কথা বলছি, তার পেছনে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে গণঅধিকার পরিষদের পূর্বতন ছাত্রঅধিকার পরিষদ। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে তাদের দাবি মানতে বাধ্য করেছে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে। তারা অবিরাম হামলা ও মামলার শিকার হয়েছে। নুরুল হক নূরের শরীরের কাপড় যদি খোলা হয়, তাতে আঘাতের চিহ্ন ছাড়া আর কিছুই দেখা যাবে না। ছাত্র অধিকার পরিষদের সেই সফল আন্দোলনের ফলে মানুষ প্রত্যক্ষ করেছিল, আরকটি কিশোর আন্দোলন। যা ছিল নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। তারাও তৎকালীন সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করেছিল। এর মধ্য দিয়ে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক আন্দোলন সফলতা লাভ করে সেটাই পরবর্তী সময়ে তাদের উত্তরসূরিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন করে সফলতা লাভ করে। তারে পেছনে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সমর্থন যুগিয়ে ও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করেছে। এ অবস্থায় আমরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কীভাবে দেখতে চাই, তা তারা চিত্রায়ন করে গিয়েছেন। শহিদদের আকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যাশা সারা বাংলাদেশের মানুষ ধারণ করেছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, ১২ দলীয় জোটের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, লেবার পার্টির লায়ন মো. ফারুক রহমান, এনডিপির ক্বারী আবু তাহের, আব্দুল্লাহ আল হারুন সোহেল, জাগপার একাংশের খন্দকার লুৎফর রহমান, অপরাংশের রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির এসএম শাহাদাত, গণঅধিকার পারিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ ও শাকিল উজ্জামান।