বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আল্লাহর আইন ছাড়া টেকসই ও শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই ইসলামী বিধান অনুযায়ী শ্রমিক-মালিক পরস্পরকে হাতে হাত রেখে সমাজ গড়ায় এগিয়ে আসতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুর পৌনে ১২টায় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে পুরানা পল্টনে শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতের শ্রমিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন’ এ আয়োজন করে। সকাল ৯টায় শুরু হয়ে সমাবেশ শেষ হয় পৌনে ১২টায়।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘অনেক সময় মালিকদের বিরুদ্ধে শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব আমরা চাই না। আমরা চাই মালিকপক্ষ এটা বুঝবে, শ্রমিক বাঁচলে আমাদের শিল্প বাঁচবে। তবে শ্রমিকদেরও বুঝতে হবে মালিক বা উদ্যোক্তারা বাঁচলেই আমরা বাঁচবো। কারণ কর্মস্থল ধ্বংস হয়ে গেলে দাবি করার জায়গা থাকবে না। তাই এ ক্ষেত্রে উভয় পক্ষেরই দায় ও দায়িত্ব আছে।’
তিনি বলেন, ‘মালিক-শ্রমিকের সমন্বয়ে একটি দরদী সমাজ বিনির্মাণ করতে হবে। বাংলাদেশের ৭০ ভাগ মানুষই কর্মজীবী ও শ্রমজীবী। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করে কোনও সমাজ এগিয়ে যেতে পারবে না। পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়ায় টেকসই সমাজ গড়তে আল্লাহর আইন ছাড়া সম্ভব নয়। ৮ ঘণ্টা শ্রমের বিনিময়ে একজন শ্রমিককে যে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়, তা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন। তাই বাধ্য হয়ে তাকে আরও বিকল্প খুঁজতে হয়। তাদের এই অমানবিক জীবনের অবসান ঘটাতে চাই।’ মিলকারখানায় পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও নামাজের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান জামায়াতের আমির।
নারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জামায়াত রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে নারীদের পছন্দ অনুযায়ী কাজের ব্যবস্থা করা হবে।’ তিনি সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে সবার সহযোগিতা চান।
জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান মে দিবসকে ‘শ্রমিক দিবস’ বলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এতে শ্রমিকরা সন্মানিত হবেন।’
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ইসলামী আইন চালু করে ইসলামি শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করতে চাই। ৫ আগস্টের স্লোগান ছিল উই ওয়ান্ট জাস্টিস। কিন্তু ইসলাম প্রতিষ্ঠা না হলে ন্যায়বিচার সম্ভব নয়। ৫৪ বছরে মানবরচিত আইনের মাধ্যমে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।’ তিনি আগামী নির্বাচনে ইসলামি আদর্শের লোকদের সংসদে পাঠানোর আহ্বান জানান।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘শ্রমিকরা প্রমাণ করেছেন, তারা নতুন বাংলাদেশ গ্রহণ করেছেন। এক শ্রেণির শ্রমিক নেতা শ্রমিকদের মধ্যে পাশ্চাত্য মতভেদ ঢুকিয়ে দিয়েছে। তাদের মধ্যে নতুন ধারার সূচনা করেছে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন।’ তিনি মালিক-শ্রমিক একে অপরকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি আতিকুর রহমানে পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন– সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল প্রমুখ।