X
বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫
১৮ বৈশাখ ১৪৩২

ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, অধরাই রয়েছে ‘ভূমি স্মার্ট কার্ড’

শফিকুল ইসলাম
০১ মে ২০২৫, ০০:০১আপডেট : ০১ মে ২০২৫, ১১:৫৬

‘ভূমি স্মার্ট কার্ড’ পাওয়া ব্যক্তি হবেন জমির প্রকৃত মালিক। এই কার্ড থাকলে মালিকানা প্রমাণ করতে প্রয়োজন হবে না গাদা গাদা দলিল বা জমির অন্যসব কাগজপত্র সংরক্ষণের। জমির মালিকানা নিশ্চিত করা ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধে ব্যবহার করা যাবে এই কার্ড। ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন, ২০২৩’-এ এমন বিধান রাখা হয়েছিল। ২০২৩ সালেই এই আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছিল ভূমি মন্ত্রণালয়। এর পর আর আলোর মুখ দেখেনি আইনটি। 

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালে যে সব আইন চূড়ান্ত করা গেছে সেসব আইনের মধ্যে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩, ভূমি সংস্কার আইন ২০২৩, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন এবং হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন ২০২৩ উল্লেখযোগ্য। এর পরে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে আর কোনও আইন করা সম্ভব হয়নি।

সূত্র জানিয়েছে, ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন-২০২৩ বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। আইনটিতে জমির মালিকদের ‘ভূমি মালিকানা সনদ (সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ-সিএলও)’ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছিল। এই আইনেই বলা ছিল, কিউআরকোড বা ইউনিক নম্বর সংবলিত ‘ভূমি স্মার্ট কার্ড’ বা সনদই ভূমির মালিকানা নির্ধারণে চূড়ান্ত দলিল। ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) দিতেও ব্যবহার করা হবে এই কার্ড। কোনও কারণে টানা তিন বছর কেউ যদি নিজের মালিকানায় থাকা জমির খাজনা না দেয় তাহলে ওই জমি বাজেয়াপ্ত হয়ে খাস জমি হিসেবে গণ্য করা হবে।

কিন্তু আইনটি কার্যকর করা যায়নি। ফলে ভূমি স্মার্ট কার্ডও প্রবর্তন করা যায়নি। কবে নাগাদ আইনটি পুরোপুরি অনুমোদন হয়ে সাধারণ মানুষের হাতে এই কার্ড পৌঁছাবে তাও জানে না কেউ। তবে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, নতুন করে আইনটি কার্যকর করতে হলে তা অনুমোদনের জন্য কেবিনেটে পাঠাতে হবে। কেবিনেটের অনুমোদন পেলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে আইনটি। এর পরেই কার্যকর করা যাবে ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন, ২০২৩’। এর পরেই ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে আইনের বিভিন্ন ধারা উপধারা। তখনই হয়তো পাওয়া যেতে পারে ভূমি স্মার্ট কার্ড। তবে বিষয়টি ব্যয়বহুল বলে অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য প্রণয়ন করতে হবে প্রকল্প। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে অর্থের। এর জন্য অনুমোদন লাগবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের। এ বিষয়গুলো সময়সাপেক্ষ। তাই অনেকেই মনে করছেন ভূমি স্মার্ট কার্ডটি বোধহয় অধরাই রয়ে গেলো।

খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি বা পরিবার বা প্রতিষ্ঠানের চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেলে পক্ষরা আলোচনা বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যস্থতায় বাজারমূল্যে ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে ন্যূনতম চলাচলের পথ দিতে হবে। কোনও পক্ষ রাজি না হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হবে।

অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা আইনে বলা হয়েছে, মালিকানা ও স্বত্ব পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভূমির মালিকানা সনদও নিয়মিত হালনাগাদ করা হবে। এর জন্য সরকারকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিতে হবে জমির মালিককে। ভূমি হস্তান্তর দলিল বা ওয়ারিশান বা আদালতের আদেশ বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের আদেশে স্বত্ব ও মালিকানা প্রতিষ্ঠার পর বা জরিপে প্রণীত রেকর্ডের পর বিদ্যমান আইনে ভূমির স্বত্ব ও মালিকানা প্রতিবছর নবায়ন করার বিধান না থাকায় খাজনা পরিশোধের বিনিময়ে যে দাখিলা দেওয়া হয়, তা মালিকানার ধারাবাহিকতা বহাল থাকার অফিশিয়াল প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে।

‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন, ২০২৩’-এর  ভূমির শ্রেণিবিন্যাস প্রসঙ্গে খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনও জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। তবে ব্যক্তি মালিকানার জমির এক বিঘা পর্যন্ত শ্রেণি পরিবর্তনে সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হবে না। এর ব্যত্যয় হলে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হবে। স্যাটেলাইট ইমেজ ধারণের মাধ্যমে সরকার ভূমির ব্যবহারভিত্তিক অঞ্চল নির্ধারণ করে ডিজিটাল ম্যাপ প্রণয়ন করবে। জমির ব্যবহারভিত্তিক মাটির গুণ, প্রকৃতি ও ব্যবহার বিবেচনায় কৃষি, অকৃষি, আবাসিকসহ ভূমির নানা শ্রেণিবিন্যাস করা হবে।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, অঞ্চলভিত্তিক ডিজিটাল ম্যাপ অনুযায়ী কৃষিজমি সরকারের অনুমতি ছাড়া অন্য কোনও কাজে ব্যবহার করা যাবে না। যেকোনও শিল্পকারখানা, সরকারি-বেসরকারি অফিস ভবন, বাসস্থান এবং অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত অনুর্বর কৃষিজমি ব্যবহার এবং ভূমির সর্বোচ্চ ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকে প্রাধান্য দিতে হবে। কৃষিজমি সুরক্ষা দিতে গ্রামাঞ্চলে বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করতে সহজ শর্তে গৃহঋণের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

আইনের খসড়ায় কৃষিজমি অধিগ্রহণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারের জরুরি উন্নয়নমূলক কাজে কৃষিভূমির প্রয়োজন হলে অপেক্ষাকৃত অনুর্বর জমি নির্বাচন করতে হবে। দুই বা তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। জনস্বার্থে প্রয়োজন হলে দুই বা তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ করতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। জমি দুই না তিন ফসলি, তা নিয়ে মতভেদ দেখা দিলে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রতিনিধি ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত কমিটি সিদ্ধান্ত দেবে।

জানতে চাইলে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার একজন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, আইনটি খুবই সময় উপযোগী। এই মুহূর্তে ভূমির মালিকানা নিশ্চিত করার বিষয়টি খুবই জটিল। সেক্ষেত্রে ভূমি স্মার্ট কার্ডটি প্রবর্তন করা গেলে ভূমির মালিক এবং ভূমি অফিস উভয়পক্ষই লাভবান হতো। এর ফলে মামলা মোকদ্দমা বা ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে একের জমি অন্যের দখল করে নেওয়ার যে প্রক্রিয়া অসাধু মানুষরা করতো তা বন্ধ হতো।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, আইনটি আগের সরকারের সময়ে করা। তাই এটি পুনরায় যাচাই-বাছাই এবং পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে। এ ছাড়া সংসদ নাই। অধ্যাদেশ আকারে জারি করার মতো আইনটি গুরুত্বপূর্ণ কিনা তাও ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।

/এমএস/
সম্পর্কিত
আধুনিক ‘ল্যান্ড সার্ভিস গেটওয়ে’ চালুর উদ্যোগ
জরিপ এলেই জমি রেকর্ড হয় অন্যের নামে, উৎকণ্ঠায় চরবাসী
ধর্মীয়-রাজনৈতিক পরিচয় নয়, অপরাধীর পরিচয় ‘অপরাধী’: হাসান আরিফ
সর্বশেষ খবর
ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কোয়েটায় হিন্দুদের বিক্ষোভ 
ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কোয়েটায় হিন্দুদের বিক্ষোভ 
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনে নতুন নেতৃত্ব
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনে নতুন নেতৃত্ব
সাবেক আইজিপি মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী মারা গেছেন
সাবেক আইজিপি মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী মারা গেছেন
জেনেভা ক্যাম্পে আবারও সংঘর্ষ, মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহত
জেনেভা ক্যাম্পে আবারও সংঘর্ষ, মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহত
সর্বাধিক পঠিত
এবার রিয়াজ, চঞ্চল ও মামুনুর রশীদসহ হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ১৪ শিল্পী
এবার রিয়াজ, চঞ্চল ও মামুনুর রশীদসহ হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ১৪ শিল্পী
মোহাম্মদপুর-বসিলা সড়কে যানজট নিরসনে নতুন উদ্যোগ
মোহাম্মদপুর-বসিলা সড়কে যানজট নিরসনে নতুন উদ্যোগ
অস্ত্র নিয়ে সাবেক এমপির ওপর হামলা, অল্পের জন্য রক্ষা
অস্ত্র নিয়ে সাবেক এমপির ওপর হামলা, অল্পের জন্য রক্ষা
দুই পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহার চান খুলনার বিএনপির নেতারা
দুই পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহার চান খুলনার বিএনপির নেতারা
চিন্ময়ের জামিন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, ইন্টেরিম সাবধান: হাসনাত আব্দুল্লাহ
চিন্ময়ের জামিন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, ইন্টেরিম সাবধান: হাসনাত আব্দুল্লাহ