জাতীয় সংসদে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কারের দাবি জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছেন, নির্বাচন হতে পারে দলের ভিত্তিতে, অর্থাৎ ভোটাররা সরাসরি দলকে ভোট দেবেন, প্রার্থীকে নয়। এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা হবে না। বর্তমানে যেভাবে বাংলাদেশে সরকার গঠিত হয়, তাতে কোনও দলই ৫০ শতাংশের ওপরে ভোট পায় না। কিন্তু তারা সরকার গঠন করে। শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের অষ্টম কাউন্সিলে তিনি এসব কথা বলেন।
এইচ এম এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি সৃষ্টি হয়েছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। ১৯৮২ সালে আমার ওপর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। সেনাপ্রধান হিসেবেই তার ওপর দায়িত্ব এসেছিল। তখন যে কেউ সেনাপ্রধান থাকলে তার ওপর ওই দায়িত্ব আসতো। আমি ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইনি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়ে ব্যারাকে ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। এ জন্য ১৯৮৪ সালে নির্বাচন দিয়েছি। কিন্তু প্রধান প্রধান দলগুলো সে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে জাতীয় পার্টি গঠন করে ক্ষমতা গ্রহণ করি।
এরশাদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের চরম ব্যর্থতার কারণে নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ইউপি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ৮৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আগেই বলেছিলাম দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনের কারণেই এই দুরবস্থা। নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন ছাড়া এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় নেই। মানুষ প্রার্থীকে নয়, ভোট দেবে দলকে। দেশে আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে।
আরও পড়ুন- তোমাদের নিয়েই আরেকবার ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করবো: এরশাদ
সম্মেলনে জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মৃত্যুর আগে দেখতে চাই- জাতীয় পার্টি একটি শক্তিশালী পার্টি। আপনাদের এই ভিত গড়তে হবে। যদি আমাদের পার্টি শক্তিশালী হয় তবেই আগামীতে ক্ষমতায় যাবে। জনগণ জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। কিন্তু আমাদের সংগঠন শক্তিশালী নয়। দল শক্তিশালী না হলে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না। তোমরা আমাদের দলের প্রাণ। বড় বড় নেতারা অনেক সুবিধা পেয়েছে, কিন্তু তোমরা কিছুই পাওনি। অথচ কষ্ট করে তোমরাই সেই দুঃসময় থেকে জাতীয় পার্টিকে আগলে রেখেছো। নেতা-কর্মীরা যখন জেলে ছিল, তখনও আমাদের আসন ছিল ৩৫টি। কিন্তু আমরা সেই আসনও ধরে রাখতে পারিনি। কেন পারিনি তা চিহ্নিত করে রাজনীতি করতে হবে। সঠিক পথে রাজনীতি করা না গেলে জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হবে না।’
বক্তব্যের শেষ দিকে নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন রওশন। এ সময় উপস্থিত হাজারো নেতা-কর্মী করতালি দিয়ে বিরোধী নেতাকে অভিবাদন জানান।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক ধারার আমূল পরিবর্তন চায় সাধারণ মানুষ। তারা রাজনীতি বলতে নিম্নগামী কোনও পণ্যকে বুঝে। বর্তমানে রাজনীতি নৈতিকতা বিমুখ হয়ে গেছে। দেশের বেশিরভাগ মানুষ রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। সাধারণ মানুষ এ রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে মুক্তি চায়। এ সময় নিজ দলের রাজনৈতিক আদর্শ ও লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট করার তাগিদ দেন তিনি।
আরও পড়ুন- প্রয়োজনে পাকিস্তানের সঙ্গে সব কূটনীতিক সম্পর্ক ছিন্ন: শেখ সেলিম
দলের মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি ও মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতীর যৌথ সঞ্চালনায় সম্মেলনে দলের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। এইচ এম এরশাদের সভাপতিত্বে সম্মেলনের মঞ্চে ছিলেন পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, জ্যেষ্ঠ নেতা পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ, প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, বিরোধী চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম, দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, এম এ সাত্তার, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, এম এ কাসেম, অধ্যাপক মাসুদা রশীদ চৌধুরী, মীর আবদুস সবুর আসুদ, দক্ষিণের সেক্রেটারি জহিরুল আলম রুবেল, মহিলা পার্টির সেক্রেটারি অনন্যা হোসেন মৌসুমীসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
/এইচএন/সিএ/ এপিএইচ/