নাশকতার মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসুজ্জামান তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. আব্দুর রশিদ বলেন, আড়াইহাজারে পুলিশের ওপরে হামলার ঘটনায় করা নাশকতার মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত বছরের ১ নভেম্বর আড়াইহাজার উপজেলায় পুলিশের ওপর হামলার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জের আদালতে হাজির করে। এ সময় আমরা তার জামিন চাইলে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় তিনি গত ১২ মে ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে আদালত তার আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নাশকতার মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আড়াইহাজারে নাশকতার মামলাটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। ওই ঘটনার সময়ে গিয়াস উদ্দিন আড়াইহাজারে উপস্থিত ছিলেন না। অথচ তাকে সেই মামলায় ১২ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
এর আগে, আজ বেলা সাড়ে ১১ টায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রিজনভ্যানে করে তাকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আনা হয়। পরে দুপুরে পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে।
প্রসঙ্গত, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে। রবিবার (১২ মে) ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদক উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২ নভেম্বর মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেওয়া হয়। এরপর ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন তিনি।
অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র ও দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাই করে মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের নামে ১৫ কোটি সাত লাখ ১৫ হাজার ৭৭৯ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং পাঁচ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার ৩১৮ টাকা অস্থাবর সম্পদসহ মোট ২০ কোটি ৯৫ লাখ ৮৬ হাজার ৯৭ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।
২০০৮-২০০৯ করবর্ষ থেকে ২০২১-২০২২ করবর্ষে পারিবারিক ও অন্য খাতে গিয়াস উদ্দিনের ১৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯০ হাজার ৪৩ টাকা ব্যয়ের তথ্য পায় দুদক। এসব ব্যয়ের বিপরীতে বিভিন্ন সময়ে সঞ্চয় হিসাবে ছয় কোটি ৮১ লাখ ২২ হাজার ৮৫৬ টাকা, গৃহ সম্পত্তি থেকে আয়ের দুই কোটি ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫০ টাকা, পিতার কাছ থেকে হেবা মূল্যে প্রাপ্ত ১১ শতাংশ জমিসহ সাত কোটি টাকার দালান, চার লাখ ৩২ হাজার টাকার মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ মোট ১৭ কোটি ৬৮ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩৭ টাকার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য উৎস পাওয়া যায়।
এদিকে গিয়াস উদ্দিনের আয়কর নথি অনুযায়ী, কাসসাফ শপিং সেন্টার-১ নির্মাণ ব্যয় প্রদর্শনকালে ২০২১-২০২২ করবর্ষে মার্কেটের ৮০২ বর্গমিটার নির্মাণে এক কোটি ৪১ লাখ ৮৬ হাজার ৯৩১ টাকা বিনিয়োগের বিষয়ে বৈধ উৎস পায়নি দুদক। যা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়।