X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাণহানির ইউপি নির্বাচনে ইমেজ ক্ষুণ্ন সরকারের

এমরান হোসাইন শেখ
১০ জুন ২০১৬, ১২:৫২আপডেট : ১০ জুন ২০১৬, ২৩:৩৪

ইউপি নির্বাচন ২০১৬ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জিতলেও  সরকার ‘হেরে’ গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, নির্বাচনে চেয়ারম্যানের সংখ্যা, ভোটের হার—প্রতিটি সূচকেই প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ অভাবনীয় সাফল্য পেলেও অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও প্রাণহানির প্রশ্নে সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। সরকারের ইমেজও খানিকটা ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ নির্বাচন বিএনপির নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
গত ৪ মাস ধরে ছয় ধাপে দেশের ৪ হাজার ৮৯টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে আসা ৩ হাজার ৯৬৫টির ফলে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের ২ হাজার ৬৪৭টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী। বিপরীতে বিএনপি মাত্র ৩৬৭টি ইউপিকে জয় পেয়েছে। শতাংশ হারে আওয়ামী লীগ যেখানে ৬৭% ইউপিতে জয়ী হয়েছে বিএনপির হার মাত্র ৯%। দেখা গেছে, বিএনপির চেয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৭ গুণের বেশি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছে। প্রাপ্ত ভোটের হারের দিক থেকেও ‍পার্থক্য প্রায় একই রকম। তবে, ভোটের ফলের অঙ্কে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলেও নির্বাচনটা ক্ষমতাসীন সরকারকে প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ‘ব্যর্থতা’ ও প্রাণহানি ঠেকাতে না পারাকে সরকারের জন্যে এক ধরনের পরাজয় বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই নির্বাচন নিয়ে তার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। বুধবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন এভাবে ইউপি নির্বাচন হোক তারা তা চাননি।

নির্বাচনের সহিংসতাও অনভিপ্রেত উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্যই আগামীতে এই ইলেকশনে যেন এভাবে গণ্ডগোল না হয়, সেজন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। অবশ্য এসব ঘটনার জন্য নির্বাচন কমিশনের কোর্টে বল ছুড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আর আমরা তো তাদের সমস্ত ক্ষমতা তাদের হাতে দিয়ে রেখেছি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ক্ষমতাসীন দল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপির মহড়া দিয়েছে। এই নির্বাচনে সরকার নিজেকে লাভবান মনে করলেও তাদের ক্ষতি হয়েছে। কারণ, মানুষ বুঝতে পারছে, তাদের অধীনে নির্বাচন হলে কী হতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নির্বাচনটা কেমন হবে তার ধারণা আমাদের আগে থেকেই ছিল। তারপরও গণতন্ত্রের কথা চিন্তা করে এই নির্বাচনে এসেছি। এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমাদের লাভটা হয়েছে আমরা সরকারের মুখোশ জনগণের সামনে উম্মোচন করতে পেরেছি।

ইউপি নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যে সরকার পরিবর্তনের কোনও সুযোগে নেই, সেখানে তাদের যে আচরণ দেখেছি। তাতে এই সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন কী হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির যৌক্তিকতা আবারও জনগণকে বুঝিয়ে দিতে পেরেছি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই নির্বাচনে সরকারের ব্যর্থতার কিছু নেই। নির্বাচনটাকে সরকার সফলতা হিসেবে দেখছে। বিএনপি এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করেছি। কিন্তু দলীয়ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত এই ইউপি নির্বাচনে তারা অংশ নিয়েছে। এটাকে অবশ্যই সরকারের সফলতা বলতে হবে। ভোটরা যেন নির্ভয়ে শান্তিপূর্ণ যদিও সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা একটু বেশি ঘটেছে। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় ৩০ হাজার ভোট কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র সাড়ে ৩’শ কেন্দ্রে গোলযোগের কারণে বন্ধ হয়েছে। শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ কয়েকটা কেন্দ্র ছাড়া সর্বত্রই শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। জনগণ কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে। দেশের জনগণ সরকারের প্রতি আস্থাশীল থেকে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ ইউপিতে বিজয়ী করেছে।
ক্ষমতাসীন ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নির্বাচনটা যথাযথ হওয়ার প্রশ্নে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করতে পারছি না। নির্বাচন ব্যবস্থায় যদি উন্নতি না হওয়া ‍তাহলে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। আমরা মনে করি, নির্বাচন ব্যবস্থা আরো স্বচ্ছ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত ক্ষমতা যথাযথভাবে প্রয়োগ হওয়া দরকার। কিন্তু এই নির্বাচনে কমিশন অনেক ক্ষেত্রে নির্বিকারের ভূমিকা পালন করেছে। এটা ঠিক হয়নি।

এই নির্বাচনটাকে আরও সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য করতে সরকার ও কমিশন উভয়ের আরও করণীয় ছিল বলে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক মনে করেন।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা ও প্রাণহানি ঘটনার বেশিরভাগই সরকারি দলের মধ্যে ঘটেছে। এই ঘটনা তাদের দলের তৃণমূলে একটি দীর্ঘস্থায়ী কোন্দল দেখা দিতে পারে।  এটা তো তাদের দৃশ্যমান ক্ষতি বলা যাবে। তাছাড়া আমরা যে নির্বাচন ইউনিয়ন পরিষদে দেখলাম, তাতে নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারের দাবির পাশাপাশি নির্দলীয় ব্যবস্থায় নির্বাচনের দাবিতে জোরালো করবে।

ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নির্বাচনে জয়-পরাজয় কে বা কারা হলেন, সেটা আমাদের বিবেচনায় ছিল না। আমাদের দায়িত্ব ছিল নির্বাচন পরিচালনার, আমরা তা করেছি। দায়িত্ব পালনে আমাদের কোনও অবহেলা-ঘাটতি ছিল না। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন ভালো করেছি।

/এমএনএইচ/

আপ: এএইচ

আরও খবর পড়ুন-

নিত্যরঞ্জন পান্ডে এবার পাবনায় আশ্রমের সেবককে কুপিয়ে হত্যা

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নোয়াখালীতে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
নোয়াখালীতে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
একই উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী মা-ছেলে ও নাতি
একই উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী মা-ছেলে ও নাতি
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৬ বিভাগে ঝড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৬ বিভাগে ঝড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
যশের ছবিটি ছেড়ে দিলেন কারিনা!
যশের ছবিটি ছেড়ে দিলেন কারিনা!
সর্বাধিক পঠিত
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে