X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

একজন শেখ হাসিনা

এমরান হোসাইন শেখ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৮:৫৯আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি) তিন যুগ ধরে বাংলাদেশের প্রবীণতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তাই নয়, দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালনের পর এখন পার করছেন তৃতীয় মেয়াদ। আশির দশকে যেমন তিনি ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেছেন দলকে, তেমনি একটি অনুন্নত দেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। যে কারণে জাতীয়-আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার আর স্বীকৃতি রয়েছে তার ঝুলিতে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পিতা বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ইউরোপের একাধিক দেশ ও ভারতে দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর নির্বাসিত জীবনযাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ছিলেন প্রবাসেই। ওই সময় যখন শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে দলের মধ্যে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন প্রবাসে থাকা অবস্থায়ই তাকে আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। সে বছরের ১৭ মে দেশে ফিরে হাল ধরেন বাবার হাতে গড়া সংগঠনের, তৃণমূল চষে বেড়িয়ে দলকে করেন সুসংঠিত। দীর্ঘ তিন যুগ ধরে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে ক্ষমতায় এনেছেন তিনবার। তার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ এখন অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। দলেও রয়েছে তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ।

চলতি মেয়াদসহ তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করেছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনেও তিনি বিশ্বনেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চলতি দুই মেয়াদে আট বছরসহ ১৩ বছর দেশ শাসন করছে। এসময়ে বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নতির পাশাপাশি শেখ হাসিনার ঝুলিতে জমেছে অনেকগুলো অর্জন। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক একাধিক সম্মাননা পদক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে ও তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যেসব সাফল্য এসেছে তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-

গঙ্গা পানি চুক্তি: শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা পানি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারত সরকারের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া সই করেন। ওই চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন কম-বেশি পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে।

পার্বত্য শান্তি চুক্তি: বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালিদের মধ্যকার দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির পর আস্তে আস্তে বাঙালি ও পাহাড়িদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ কমতে থাকে। বিভিন্ন জটিলতায় পার্বত্য চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হলেও এখন পাহাড়ে আগের মতো যুদ্ধের ডামাডোল নেই।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা  দিবসের স্বীকৃতি: বাংলাদেশের শহীদ দিবস ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি এনে দেওয়ার উদ্যোগ আসে কানাডা প্রবাসী দুই বাংলাদেশির হাত দিয়ে। তবে এর পরিণতিটা বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতেই। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর থেকেই ২১ ফেব্রুয়ারিকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করছে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো। পরে ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে। বাংলাদেশ প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে উত্থাপন করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সমুদ্র সীমানার বিরোধ নিষ্পত্তি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিগত মেয়াদে ২০০৯ সালে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য হেগের সালিশি আদালতে নোটিশ করে। এর পথ ধরেই ২০১২ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সমুদ্র সীমার রায় পায়। দুই রায়ে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের রাষ্ট্রীয় সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল মহীসোপান এলাকায় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।

স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন: ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি সই হলেও সেটা কার্যকর হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলতি মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর তার প্রচেষ্টায় চুক্তিটি কার্যকর হয়। এর ফলে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হয়। ছিটমহলবাসীরা ৬৮ বছর পরে নাগরিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় পান।

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায়: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করলেও ওই মেয়াদে তা শেষ করতে পারেননি। পরে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিচার কাজ শেষ হলে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হয়। বাকি খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকরে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার: শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের যুগান্তকারী কাজ হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। সরকারের চলতি ও বিগত মেয়াদে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও তাদের রায় কার্যকর করা হয়েছে। বাকি চিহ্নিতদের বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

পদক ও সম্মাননা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক জীবনে অনেকগুলো পুরস্কার ও সম্মননা পদক পেয়েছেন। এর কোনোটি পেয়েছেন তার ব্যক্তিগত অর্জনের জন্য, আবার কোনোটি পেয়েছেন সরকারপ্রধান হিসেবে বাংলাদেশের সামগ্রিক সাফল্যের জন্য। শেখ হাসিনা জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের এবারেট ডান্ডি ও ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী, অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’জ ডিগ্রি পেয়েছেন।

শেখ হাসিনা যেসব পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কার (২০১৬), প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন (২০১৬), চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ (২০১৫), আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পদক (২০১৫), সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কার (২০১৪), শান্তি বৃক্ষ (২০১৪), রোটারি শান্তি পুরস্কার (২০১৩), GAVI পুরস্কার (২০১২), সাউথ- সাউথ পুরস্কার (২০১১), ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার (২০১০),  এমডিজি পদক (২০১৩ ও ২০১০), M K Gandhi পুরস্কার (১৯৯৮), CERES মেডেল (১৯৯৯), Pearl S. Buck পুরস্কার (২০০০), মাদার তেরেসা শান্তি পুরস্কার (১৯৯৮), ইউনেস্কো’র Felix Houphouet- Boigny শান্তি পুরস্কার (১৯৯৮) ইত্যাদি।

এসব অর্জনের পাশাপাশি শেখ হাসিনা তার নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের কারণে বিভিন্ন স্বীকৃতিও অর্জন করে নিয়েছেন। এর মধ্যে বিশ্বখ্যাত ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের ক্ষমতাধর একশ নারীর তালিকায় ৩৬তম স্থান পান শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউ ইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর জরিপে তিনি ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় সপ্তম স্থান দখল করেন।

আরও পড়ুন- শেখ হাসিনার ৭১তম জন্মদিন আজ: কেক না কাটার নির্দেশ

/ইএইচএস/টিআর/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
উচ্চশিক্ষা খাতকে ডিজিটালাইজেশনে আনার পরামর্শ ইউজিসির
উচ্চশিক্ষা খাতকে ডিজিটালাইজেশনে আনার পরামর্শ ইউজিসির
বিটুমিন গলে যাওয়া মহাসড়ক পরিদর্শনে দুদক
বিটুমিন গলে যাওয়া মহাসড়ক পরিদর্শনে দুদক
মিয়ানমারের ৩৮ শরণার্থীকে ফেরত পাঠালো ভারত
মিয়ানমারের ৩৮ শরণার্থীকে ফেরত পাঠালো ভারত
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যকে পাশে চায় বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যকে পাশে চায় বাংলাদেশ
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস