X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াত আমির মকবুলের মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্তে সাক্ষী সংকট!

বাহাউদ্দিন ইমরান
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:০১আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:১৮





জামায়াত আমির মকবুল আহমাদ, ছবি- সংগৃহীত একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমির মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতাও খুঁজে পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তবে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা মিললেও গত দু’বছর ধরে চলতে থাকা এ তদন্তের অগ্রগতিতে সাক্ষী সংকট দেখা দিয়েছে।

তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থাটির সিনিয়র সমন্বয়ক সানাউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্তের কাজটি মূলত নির্দিষ্ট কর্মকর্তাদের দিয়ে করানো হয়। তদন্তের নির্দিষ্ট কোনও স্টেজ তৈরি না থাকায়, কোন পর্যন্ত তদন্ত হয়েছে, তা বলা সম্ভব হয় না। তবে কোনও অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা তার প্রাথমিক তদন্ত করি। পরে অধিকতর তদন্তের জন্য এরসঙ্গে যুক্ত হই আমরা। তারপর সাক্ষী সংগ্রহের বিষয়ে আমরা প্রসিকিউটরদের নিয়ে যাই। এরপরই আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা দেই।’
২০১০ সালে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দলের নায়েবে আমির মকবুল আহমাদ। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের পাঁচ মাস পর ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর তিনি দলের আমির নির্বাচিত হন। এর আগে ২০১৫ সালে ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পাঠানো এক প্রতিবেদনে একাত্তরে হত্যা ও হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে মকবুল আহমাদের নাম উঠে আসে।
পরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে মকবুলের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর অনলাইন পত্রিকা বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত হয়। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর মকবুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে মাঠে নামে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। প্রাথমিকভাবে তারা অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়। এরপর ওই বছরের ১৪ নভেম্বর মৌলভীবাজারের একটি মামলার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য সংবাদ সম্মেলন ডাকে সংস্থাটি। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে তদন্ত সংস্থা।
তদন্ত সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, মকবুল আহমাদ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় শান্তি কমিটির অন্যতম নেতা ও রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছেন ফেনী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মীর আবদুল হান্নানসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় অভিযোগকারীদের দেওয়া বক্তব্যে বলা হয়েছে—একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মকবুল আহমাদ রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। তার নির্দেশে স্থানীয় রাজাকার ও আল বদর বাহিনীর সদস্যরা ফেনী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন নেতা মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা ওয়াজ উদ্দিনকে চট্টগ্রামে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়া, মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে দাগনভূঁঞা উপজেলার জয়লস্কর ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ায় আগুনে পুড়িয়ে ১০ জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, ২০১৬ সালে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে নামলেও ২০১৮ সালে এসেও সেই তদন্ত কাজ প্রাথমিক পর্যায়েই রয়ে গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অভিযোগটি এখনও প্রাথমিক তদন্ত অবস্থায় রয়েছে। তবে তদন্ত শেষ করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু যতই সময় যাচ্ছে, ততই মানুষ (সাক্ষীরা) মুখ খুলছে না। মূলত এজন্যই দেরি হচ্ছে। তার (মকবুল) বিরুদ্ধে একটি মামলা প্রাথমিক তদন্ত অবস্থায় পেন্ডিং আছে। এ মূহূর্তে এটুকুই বলতে পারি। তদন্ত শেষ হতে আরও সময় লাগবে।’
তদন্তে কোনও প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্তের ক্ষেত্রে কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই। তদন্ত করে সাক্ষী পাওয়া যাবে বা পাওয়া যাবে না—দুটির যেকোনও একটি ঘটবে।’
তদন্ত সংস্থার সিনিয়র সমন্বয়ক সানাউল হক বলেন, ‘অনেক সময় সাক্ষীরা থাকে না। আমরা তদন্তে যাচ্ছি জেনে তারা অনেকেই সরে পড়েন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সহযোগিতা করলে এই কাজটি সহজ হয়। এসব মামলাতে সাক্ষীদের একত্রিত করাটাই মূল বিষয়।’
আবদুল হান্নান খান বলেন, ‘মকবুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাকে কেন্দ্র করে আমরা সাক্ষী-প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টায় আছি। প্রাথমিক তদন্ত এখনও চলছে, অগ্রগতিও আছে। তবে দীর্ঘদিন পর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হওয়ার কারণে এ ধরনের মামলার অনেক আসামিই মারা যাচ্ছেন। আবার মামলার সাক্ষ্য প্রমাণও নষ্ট হয়েছে। বাদীরা মারা যাচ্ছেন। এছাড়া, একটি বিশাল অংশ অর্থবিত্ত দিয়ে তাদের (অপরাধীদের) পক্ষে কাজ করাচ্ছে, যেন সত্য উদ্ঘাটন করা সহজ না হয়। দেশ-বিদেশের অর্থবিত্ত দিয়ে সাক্ষীদের কিনে ফেলার চেষ্টাও করা হচ্ছে। ফলে মামলার সাক্ষী সংগ্রহ করতে সময় লাগছে।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
আন্দোলনের প্রধান নায়ক তারেক রহমান: জামায়াত আমির
বগুড়ায় ‘ওলামায়ে মাশায়েখ পরিষদের’ ইফতার মাহফিল থেকে ৯ জন আটক
সর্বশেষ খবর
সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির পণ্য
সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির পণ্য
রাজধানীকে সুন্দর করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি: আইইবি
রাজধানীকে সুন্দর করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি: আইইবি
ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-রামাফোসার ফোনালাপ
ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-রামাফোসার ফোনালাপ
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো