X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওলামা লীগ চালান কারা

চৌধুরী আকবর হোসেন
২২ জানুয়ারি ২০১৯, ২৩:০০আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ২৩:৪৫

এখানেই ওলামা লীগের অফিস

বিভিন্ন দাবি ও বক্তব্যের কারণে এখন আলোচনায় বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন দাবিদার ওলামা লীগের নেতৃত্বে কারা আছেন, এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক দাবিদার মাওলানা মো. আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী তার তোপখানা রোডের  কার্যালয়ে যেতে বলেন ।

মঙ্গলাবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে তোপখানা রোডের ২৭/৮-এ ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির দোতলায় মাওলানা মো. আবুল হাসানের অফিস। ভবনের বাইরে রয়েছে কাজি অফিসের সাইনবোর্ড। দোতালার সিঁড়িতে ‘গোল্ডজয় হজ ও ওমরাহ গ্রুপ’র সাইনবোর্ড।  অফিসটির ভেতরে একটি অংশে ঝুলছে কাজি অফিসের সাইনবোর্ড।

রাজনীতির পাশপাশি বিয়ে পড়ান আবুল হাসান। কাজি অফিসটি ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই অফিসের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, আবুল  হাসানসহ বেশ কয়েকজন বসে আছেন। আবুল হাসান তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তারা হলেন– ওলামা লীগের সভাপতি মাওলানা আখতার হোসাইন বোখারী, দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ শওকত আলী শেখ ছিলিমপুরী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা তাজুল ইসলাম।

ওলামা লীগের সভাপতি মাওলানা আখতার হোসাইন বোখারী ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান

ওলামা লীগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পোস্টার, লিফলেটসহ বেশ কিছু কাগজপত্র দেখান আবুল হাসান।  তিনি দাবি করেন, ‘এসব আমাদের বিভিন্ন সময়কার রাজনৈতিক কর্মসূচির পোস্টার ও লিফলেট। এসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।’

মিলাদ মাহফিলের একটি ছবি দেখিয়ে আবুল হাসান দাবি করেন, ‘দেখুন, আমাদের সভাপতির সঙ্গে অনুষ্ঠানে বসা আওয়ামী লীগের  তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল, তার পাশে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আছেন। আমাদের ভিত্তি না থাকলে তারা কেন আমাদের অনুষ্ঠানে আসবেন, আমরা কেন আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাবো?’

একটি ছবিতে ওলামা লীগের সভাপতির সঙ্গে আব্দুল জলিল, তার পাশে ওবায়দুল কাদের (ছবি– সংগৃহীত)

আবুল হাসানের আরও দাবি, ‘আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে আমরা যাই। দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও আমাদের অনুষ্ঠানে আসেন। সব তো ছবি তুলেও রাখা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে, সেটাও তো বুঝিনি।’

ওলামা লীগের সভাপতি দাবিদার মাওলানা আখতার হোসাইন বোখারীর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে। তার দাবি, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। আখতার হোসাইন বোখারীর ভাষ্য, ‘২০১৪ সালে আমি বেশ অসুস্থ ছিলাম। তখন আমার চিকিৎসার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আমাকে একলাখ টাকা অনুদানও দিয়েছিলেন। চেকে আমার নাম ওলামা লীগের সভাপতি হিসেবেই ছিল।’

তার দাবির সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান যোগ করেন, ‘আমাকে ২০১৪ সালে সরকারিভাবে হজে পাঠিয়েছেন নেত্রী।’

ওলামা লীগ প্রসঙ্গে আখতার হোসেনের দাবি, ‘২০০১ সালের দিকে শেখ হাসিনা আমাকে ডেকে ওলামা লীগের দায়িত্ব দিয়েছেন। শেখ হাসিনার নির্দেশ ও নেতৃত্বেই আমরা দেশব্যাপী সুসংগঠিত।  সারাদেশে আমাদের কমিটিও রয়েছে।’

হাতে থাকা পোস্টার দেখান আখতার হোসেন। তিনি দাবি করেন, ‘২০০১ সালের দিকের হরতালের ছবি এগুলো—  মোহাম্মদ নাসিমসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে রাজপথে ওলামা লীগ। সেদিন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ওলামা লীগের অনেকেই পুলিশের নির্যাতনের শিকার ও আটক হয়েছিলেন।’

আবুল হাসান দাবি করেন, ‘কে আসেননি আমাদের অনুষ্ঠানে? ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদ, মোহাম্মদ নাসিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আরেফিন সিদ্দিকসহ অনেকেই এসেছিলেন।’

ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১০১ সদস্য রয়েছেন বলেও দাবি করেন আবুল হাসান। তবে কমিটির সদস্যদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দিতে পারেননি তিনি। সর্বশেষ কবে কাউন্সিল হয়েছে, তাও তারা জানাতে পারেননি।

২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় ওলামা লীগের অফিস ছিল বলে দাবি আবুল হাসানের। তিনি বলেন, ‘নতুন ভবন নির্মাণ হওয়ার পর  বরাদ্দ পাইনি।’

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত নয় ওলামা লীগ। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আলেমরা এই নামে সংগঠনটি পরিচালনা করছেন। এ সংগঠনটি নেতৃত্ব নিয়েও রয়েছে বিভক্তি। সংগঠনটির বিভক্ত অংশের নেতারা পরস্পরের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন এবং এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে রাজাকার বলেও অভিযুক্ত করেন। একভাগের নেতৃত্বে আছেন আখতার হোসাইন ও আবুল হাসান। অন্যপক্ষে ছিলেন ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী ও মো. দেলোয়ার হোসেন। ২০১৭ সালে জুন মাসে মারা যান একাংশের সভাপতি ইলিয়াছ হোসাইন বিন হেলালী। তার মৃত্যুর পর এ অংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ইলিয়াছ হোসাইন জীবিত থাকাকালীন দু’পক্ষের মধ্যে দৃশ্যমান বিরোধ ছিল। একাধিকবার দু’পক্ষের মধ্যে সংর্ঘষও হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবুল হাসান বলেন, ‘শুরুতে ইলিয়াছ হোসাইন আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। ২০০৮ সালের দিকে তিনি নিজেকে ওলামা লীগের সভাপতি দাবি করেন।’

ওলামা লীগের উৎপত্তি প্রসঙ্গে সংগঠনটির দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ শওকত আলী শেখ ছিলিমপুরীর দাবি, ‘বঙ্গবন্ধু নিজেই ১৯৬৯ সালে আওয়ামী ওলামা পার্টি গঠন করেন, তখন নেতৃত্বে ছিলেন মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর সবকিছুর পটপরিবর্তন হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালে ওলামা পার্টি নতুন করে আওয়ামী ওলামা লীগে রূপান্তরিত হয়। সেসময় সংগঠনটির নেতৃত্ব দেন মাওলানা হাবিবুল্লাহ কাচপুরী।’

ওলামালীগের বক্তব্য নিয়ে বির্তক প্রসঙ্গে আবুল হাসানের দাবি, ‘আমরা যা বলি, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই বলি। কোনও কিছুই নিজেদের মনগড়া নয়।’

ওলামা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক না থাকার বিবৃতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবুল হাসান বলেন, ‘দল যখন ক্ষমতায় ছিল না, তখনও আমরা ছিলাম। আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে মেনেই আমরা আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুগত্যে আমাদের সংগঠন পরিচালিত হচ্ছে। আমরা দলের সুসময়ে নেতা হইনি। আমরা কোনও সুবিধাও চাই না। তবে আমাদের কোনও বক্তব্য নিয়ে দলের আপত্তি থাকলে জানাতে পারতো, এভাবে সম্পর্ক নেই বলে বিবৃতি দেওয়া ঠিক হয়নি।’

 

/এমএ/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ