X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে সংসদে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ হয়নি এরশাদের

এমরান হোসাইন শেখ
১৪ জুলাই ২০১৯, ১৪:২৮আপডেট : ১৪ জুলাই ২০১৯, ১৫:০৮

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গুরুতর অসুস্থ হয়ে এভাবেই হুইল চেয়ারে ছিল তার চলাফেরা (ফাইল ছবি)

একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম তিনটি অধিবেশনের ৫২ কার্যদিবসের মধ্যে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দুই দিন উপস্থিত ছিলেন। তিনি দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধিবেশনের পুরোটাই সংসদের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন।  তবে প্রথম অধিবেশনে দুইদিন উপস্থিত ছিলেন। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার স্বীকৃতি পেলেও এ সময়ে কোনও বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ হয়নি সাবেক রাষ্ট্রপতির এরশাদের।

বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভোগার পর রবিবার সকাল পৌনে ৮টায় এরশাদ মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২২টি আসনে জয়লাভ করে। জয়লাভের পর তাঁর দলের ২১ জন সংসদ সদস্য ৩ জানুয়ারি শপথ নেন। তবে, জাতীয় নির্বাচনের সময় দেশে ছিলেন না এরশাদ। সেসময়ে তিনি সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপরও রংপুর-৩ আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন তিনি। দেশে ফিরে শপথ নেন ৬ জানুয়ারি। এ সময় তিনি হুইল চেয়ারে করে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কার্যালয়ে যান। শপথ নেওয়ার আগেই এরশাদ নিজেকে বিরোধী দলের নেতা ও পার্টির কো চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে বিরোধী দলের উপনেতা নিয়োগে স্পিকারের কাছে চিঠি দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১০ জানুয়ারি স্পিকার তাকে বিরোধীদলীয় নেতা ও জিএম কাদেরকে ‍উপনেতার স্বীকৃতি দেন। সংসদ সচিবালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও ওইদিন জারি হয়। অবশ্য পরে এরশাদের অন্য একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে উপনেতা পদে জিএম কাদেরের পরিবর্তে রওশন এরশাদকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

শপথ নেওয়ার পর সংসদের প্রথম অধিবেশনের আগেই ২০ জানুয়ারি চিকিৎসার জন্য আবার সিঙ্গাপুর যান এরশাদ। ১৫ দিন চিকিৎসাধীন থেকে দেশে ফেরেন ৪ ফেব্রুয়ারি। এরই মধ্যে ৩০ জানুয়ারি শুরু হয় সংসদের প্রথম অধিবেশন। দেশে ফেরার এক সপ্তাহের মাথায় ১০ ফেব্রুয়ারি প্রথম সংসদের বৈঠকে যোগ দেন এরশাদ। হুইল চেয়ারে বসে বৈঠকে যোগ দিয়ে তিনি ১৫ মিনিটের জন্য অবস্থান করে সংসদ কক্ষ ত্যাগ করেন। এরপর প্রথম অধিবেশন শেষ হওয়ার কয়েকদিন আগে ৬ মার্চ আবারও বৈঠকে যোগ দিয়ে অল্প কিছু সময় তিনি সংসদ কক্ষে অবস্থান করেন। এরশাদ দ্বিতীয় ও সর্বশেষ শেষ হওয়া তৃতীয় (২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেট অধিবেশন) অধিবেশনে যোগ দেননি। তৃতীয় অধিবেশন চলাকালে গত ২৬ জুন অসুস্থ হয়ে তিনি সিএমএইচ-এ ভর্তি হন।  সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন তিনি ।

প্রসঙ্গত: রেওয়াজ অনুযায়ী প্রতিটি অধিবেশনের সমাপনী দিনে বিরোধী দলীয় নেতা সংসদের বৈঠকে ভাষণ দেওয়ার সুযোগ পান। সংসদের প্রথম বা বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা এবং বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকে বিরোধীদলীয় নেতার। এছাড়া তিনি চাইলে বৈঠকের যে কোনও দিনে ফ্লোর নিয়ে বক্তব্য দিতে পারেন। তবে অসুস্থ এরশাদ এর কোনোটাই করেননি।

এরশাদের অনুপস্থিতিতে একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনে বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনাসহ সমাপনী বক্তব্য রাখেন জিএম কাদের। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধিবেশনে বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে সমাপনী বক্তব্য রাখেন রওশন এরশাদ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সচিবালয়ের উপসচিব (আইন-২) এ কে এম জি কিবরিয়া মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদের তিনটি অধিবেশনে যতগুলো বৈঠক ছিল তার মধ্যে ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ও ৬ মার্চ ২০১৯ বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উপস্থিত ছিলেন।

আইন শাখার আরেক ‍উপসচিব বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, যতদূর মনে পড়ে বিরোধী দলীয় নেতা একাদশ সংসদের দুটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তবে এসময় তিনি কোনও বক্তব্য দেননি।

উল্লেখ্য, গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৯৯০ সালে তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী একটি সাধারণ নির্বাচনের জন্য তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদকে অন্তর্বর্তীকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তার কাছে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ছাড়েন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরপর তাকে গৃহবন্দি করা হয়। সে অবস্থাতেই ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৫টি আসন লাভ করে তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। তিনি জয়ী হন পাঁচটি আসনে। এসময় দেশ রাষ্ট্রপতির শাসন পদ্ধতি থেকে সংসদীয় ধারায় ফিরে গেলে জাতীয় পার্টি হয়ে যায় সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দল। তবে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন মামলা থাকায় এরশাদের স্থান হয় কারাগারে। এরপর থেকে প্রতিটি নির্বাচনেই এরশাদ ও তার দল জাতীয় পার্টি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করলেও এরশাদ সংসদে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেওয়ার পর থেকে। এই সংসদ থেকেই প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসে জাতীয় পার্টি। এরপর ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রধান বিরোধী দল হয় এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। তবে বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ পান রওশন এরশাদ, আর এরশাদ ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে জিতে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব নেন এরশাদ। তবে সংসদে দাঁড়ানোর সুযোগ হলো না তাঁর।  

আরও পড়ুন: 
এ জন্মে আর দেখা হলো না: বিদিশা

বাবার জন্য দোয়া চাইলেন এরিক এরশাদ

 মঙ্গলবার শেষবারের মতো রংপুর নেওয়া হবে এরশাদকে

এরশাদকে ছেড়ে গেছেন ঘনিষ্ঠরা

এরশাদের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

সামরিক শাসক থেকে রাজনীতিক

 

 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!