X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

জাপায় গৃহবিবাদ তুঙ্গে, সরকারের গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় নেতারা

আদিত্য রিমন
০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:২৩আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:৩১



রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার মনোনয়ন নিয়ে সংকট শুরু হয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)-তে। এ নিয়ে গত ২ দিনে শুরু হয়েছে চিঠি, পাল্টা চিঠি চালাচালির ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও সংসদ সদস্যরা দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এক পক্ষ চায়, গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম)কে বিরোধী দলীয় নেতা করতে, অন্যপক্ষ চায় রওশন এরশাদকে। তবে, উভয় পক্ষ বলছে, বিষয়টির সমাধান নির্ভর করছে সরকারের গ্রিন সিগন্যালের ওপর। যার প্রতি সরকারের আনুকূল্য থাকবে, তার মুখেই দেখা যাবে বিজয়ীর হাসি।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে দলীয় প্যাডে নিজেকে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার পদে নিয়োগ দিতে স্পিকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেন জিএম কাদের। এরপর বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) জিএম কাদেরের চিঠির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা গ্রহণ না করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন রওশন এরশাদ। এরই মধ্যে দিয়ে আবারও শুরু হলো জাপায় গৃহবিবাদ।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জিএম কাদেরের প্রেস সেক্রেটারি ও জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য শুনীল শুভ রায় বলেন, ‘দলের সংসদ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠরা যার পক্ষে থাকবেন, তিনিই বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হবেন। আমরা গতকাল ১৫ জন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষর নিয়ে জিএম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে নিয়োগ দিতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছি।’

জানতে চাইলে রওশনপন্থী প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ‘সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হবেন সংসদীয় বোর্ডের সভায়। এখনও দলের সংসদীয় বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। আর সংসদ উপনেতা হিসেবে রওশন এরশাদ সংসদীয় বোর্ডের সভা ডাকবেন। ফলে জিএম কাদেরের চিঠির বৈধতা নেই। এ জন্য তার চিঠি গ্রহণ না করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছি।’

প্রসঙ্গত, গত ১৪ জুলাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর ৪ দিন পর ১৮ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। এরপর ২৩ জুলাই জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে অস্বীকার করে বিবৃতি দেন রওশন এরশাদসহ দলের সাত জন সংসদ সদস্য ও দুই জন প্রেসিডিয়াম সদস্য। তবে, পরবর্তী সময়ে এরশাদের চেহলাম উপলক্ষে কয়েকটি মিলাদ মাহফিলে একসঙ্গে দেখা যায় রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরকে।

তবে, এরশাদের জীবিত অবস্থায়ই জাপা ২টি ভাগে বিভক্ত ছিল। একটি এরশাদপন্থী, অন্যটি রওশনপন্থী। এরশাদের মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা জিএম কাদেরপন্থী নামে পরিচিতি পান।

রওশনপন্থী জাপার নেতারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে যাকে সমর্থন দেওয়া হবে, তিনিই শেষপর্যন্ত সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার আসনে বসবেন। এই ক্ষেত্রে কিছুটা এগিয়ে আছেন রওশন এরশাদ। তিনি ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে এরশাদ নির্বাচন বয়কট করা একেক সময় একেক রকম আচরণ করলেও সরকারে ইচ্ছা অনুযায়ী শেষপর্যন্ত নির্বাচনে ছিলেন রওশন এরশাদ। সেই সংসদে তিনি বিরোধী দলীয় নেতাও ছিলেন। ফলে রওশন এরশাদের প্রতি সরকারের কিছুটা সহানুভূতি আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রওশনপন্থী এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও সরকারের সঙ্গে সরাসরি কোনও বৈঠক কিংবা অফিসিয়াল আলাপ হয়নি। এমনিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কারও কারও সঙ্গে কথা হয়েছে।’

জিএম কাদেরপন্থী নেতারা বলছেন, গত ৪ মে এক সংবাদ সম্মেলনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছিলেন, ‘আমার অবর্তমানে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব আমার ছোট ভাই জিএম কাদের পালন করবেন।’ ফলে এরশাদের মৃত্যুর পরে জিএম কাদের দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পার্টির সভাপতি (চেয়ারম্যান) সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হবেন।  সেই দিকে থেকে সরকারও জিএম কাদেরের পক্ষ অবস্থান নেবে বলেও তারা আশা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জিএম কাদেরপন্থী এক জাতীয় পার্টির এক সংসদ সদস্য বলেন, ‘বিরোধী দলীয় নেতারা বিষয়টা নিয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতার সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তবে, তিনি এ বিষয়ে এখনও সরাসরি কিছু আমাদের বলেননি।’

তবে, রওশনপন্থী প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ‘পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন দলের কাউন্সিলে। ফলে আগামী কাউন্সিলের আগ পর্যন্ত জিএম কাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। এখনও তিনি পার্টির চেয়ারম্যান নন।’

এদিকে, এরশাদের মৃত্যুতে রংপুর-৩ আসনের উপ নির্বাচন নিয়েও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে জাপায়। রওশনপন্থীরা চান—এ আসনে এরশাদের পুত্র রাহগির আল মাহির (সাদ এরশাদ)কে। অন্যদিকে, জিএম কাদেরপন্থীরা চান, এরশাদের ভাই বা স্থানীয় নেতাদের মধ্যে কেউ নির্বাচন করুক। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সাদ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পরে রংপুরে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেন এরশাদের ভাতিজা সাবেক এমপি আশিফ শাহারিয়ারের সমর্থকরা।

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সেতুমন্ত্রীর মানহানির অভিযোগে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বিরুদ্ধে জিডি
সেতুমন্ত্রীর মানহানির অভিযোগে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বিরুদ্ধে জিডি
দাফনের ১৫ দিন পর তোলা হলো ব্যাংক কর্মকর্তার মরদেহ
দাফনের ১৫ দিন পর তোলা হলো ব্যাংক কর্মকর্তার মরদেহ
ফসলের মাঠে সোনারঙ, তীব্র গরমেও কৃষকের মুখে হাসি
ফসলের মাঠে সোনারঙ, তীব্র গরমেও কৃষকের মুখে হাসি
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়কে ভূমিকা রাখার আহ্বান
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়কে ভূমিকা রাখার আহ্বান
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা