X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

ছাত্রদলের যেমন নেতা দেখতে চান কাউন্সিলররা

আদিত্য রিমন
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:২৬আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:৩২






ছাত্রদলের লোগো দীর্ঘ ২৮ বছর পর ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচনের সুযোগ পেয়েছেন ছাত্রদলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতৃত্বে ত্যাগী ও কর্মীবান্ধব নেতাকে চান তারা। তবে তিন দশকে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটকে পাশ কাটিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কাউন্সিলররা। ইতোমধ্যে ছাত্রদলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

৫৬৬ জন কাউন্সিলরের ভোটে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার কথা রয়েছে। কাউন্সিলররা বলছেন, যেসব প্রার্থী প্রতিকূল সময়ে সংগঠনের (বিএনপির) আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন, নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন এবং আগামী দিনে দলের প্রতি কমিটমেন্ট ও খালেদা জিয়ার মুক্তির সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেবেন তাকে নেতা নির্বাচন করা হবে। এছাড়া ছাত্রদের অধিকার আদায়ে মাঠে থাকার প্রতিশ্রুতি, প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্বকেও প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলররা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খুরশেদুল আলম বলেন, আমরা ব্যক্তিগতভাবে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বিবেচনায় নেবো। এক্ষেত্রে বিবেচ্য হবে সংগঠনের প্রতি প্রার্থীর ত্যাগ, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং ব্যক্তিত্ব। এ তিনটি বিষয়কে নেতা নির্বাচনে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

নির্দিষ্ট কোনও প্রার্থীকে ভোট দিতে চাপ কিংবা প্রলোভন রয়েছে কিনা জানতে চাইলে খুরশেদুল আলম বলেন, ‘আসলে আমরা কোনও না কোনও বড় ভাইয়ের নেতৃত্বে রাজনীতি করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও চাপ বা প্রলোভন প্রস্তাব আসেনি। দীর্ঘ অনেক বছর পর নিজেরা ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছি, ফলে শেষ পর্যন্ত প্রলোভন বা চাপমুক্ত হয়ে ভোট দিতে চাই।’

বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুল আলম মিঠু বলেন, ‘যারা বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিল এবং আগামীতেও খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে রাজপথে থাকার কমিটমেন্ট করবেন তাদেরকেই ভোট দেবো।’

তাহলে কোন প্রার্থী আপনার দৃষ্টিতে যোগ্য এবং কাকে ভোট দেবেন জানতে চাইলে মিঠু বলেন, ‘এখনও কোন প্রার্থীকে ভোট দিবো তা সিদ্ধান্ত নেইনি। ১২ সেপ্টেম্বর সব ভোটাররা ঢাকায় গিয়ে সিদ্ধান্ত নেবো কাকে ভোট দেওয়া যায়।’

রাজপথের আন্দোলনে বিগত কয়েক বছরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কোনও ভূমিকা রাখতে পারেনি বলে মনে করেন ছাত্রদলের তৃণমূলে নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, আগামী দিনে নেত্রী মুক্তি আন্দোলন এবং শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে যারা রাজপথে সরব থাকবেন তাদেরকেই নেতৃত্বে আসতে হবে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম লিমন বলেন, ‘এবার আমরা এমন কমিটি নির্বাচিত করবো, যারা রাজপথে থেকে আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে।’

কোনও প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার চাপ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে লিমন বলেন, এখন পর্যন্ত তেমন কোনও অনুরোধ কিংবা চাপ নেই। তবে অনেক প্রার্থী নিজেরাই ফোন করে ভোট চাইছেন।

বিগত দিনে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন এমন প্রার্থীকে নেতৃত্বে দেখতে চান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি এম এ রাকিব। তিনি বলেন, এর বাইরে প্রার্থীর প্রজ্ঞা, সততা ও দলের প্রতি কমিটমেন্ট বিবেচনা করবো এবং ছাত্রদের অধিকার আদায়ে যিনি রাজপথে থাকার প্রতিশ্রুতি দেবেন, তাকেই ভোট দেবো।

প্রার্থীদের মধ্যে এমন যোগ্যতা সম্পন্ন কেউ আছেন কিনা জানতে চাইলে রাকিব বলেন, অবশ্যই এমন প্রার্থী আছেন। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে তাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা।

প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে ছাত্রদলের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়। কমিটির নেতৃত্বে আসেন ইলিয়াস আলী ও রুহুল কবির রিজভী। তবে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মাত্র ৩ মাসের মাথায় কমিটি ভেঙে দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের মনোননীতদের মাধ্যমেই ছাত্রদলের কমিটি গঠন হয়ে আসছিল। তবে এবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে ছাত্রদলের নেতা নির্বাচনের ঘোষণা দেন।

ছাত্রদলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির তফসিল অনুযায়ী, ছাত্রদলের প্রতিটি শাখার শীর্ষ পাঁচজন নেতা ভোট দিতে পারবেন। সংগঠনটির ১০টি সাংগঠনিক বিভাগের ১১৬ শাখায় মোট ৫৬৬ জন ভোটার রয়েছেন।

এর মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৯ শাখায় ৪৫ ভোট, ঢাকা বিভাগের ২৯ শাখায় ১৩৮ ভোট, চট্টগ্রাম বিভাগের ১২ শাখায় ৫৮ ভোট, কুমিল্লা বিভাগের ৬ শাখায় ৩০ ভোট, খুলনা বিভাগের ১৪ শাখায় ৭০ ভোট, ময়মনসিংহ বিভাগের ৯ শাখায় ৪৫ ভোট, রাজশাহী বিভাগের ১১ শাখায় ৫২ ভোট, সিলেট বিভাগের ৭ শাখায় ৩৫ ভোট, রংপুর বিভাগের ১৩ শাখায় ৬৩ ভোট ও ফরিদপুর বিভাগের ৬ শাখায় ৩০ ভোট রয়েছে।

নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার অভিযোগ
নিয়ম অনুযায়ী ছাত্রদলের কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, যাচাই-বাছাই কমিটি ও আপিল কমিটির নেতারা কোনও প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা কিংবা ভোট চাইতে পারবেন না। কিন্তু এ তিন কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তির পক্ষে কাউন্সিলরদের কাছে ভোট চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে মিটিং করে তাদেরকে সর্তক করা হয়েছে।

ছাত্রদলের কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত আপিল কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কারও কাছে ভোট চাওয়া নিয়মবহির্ভূত কাজ। তবে কারও কারও বিরুদ্ধে প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে আমরা মিটিং করে সবাইকে সর্তক করেছি।

কাউন্সিলের প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও ঠিক হয়নি ভেন্যু
এদিকে ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের ৬ষ্ঠ কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের কথা থাকলেও এখনও ভেন্যু চূড়ান্ত হয়নি। ছাত্রদলের নির্বাচন সংক্রান্ত বিএনপির নেতারা বলছেন, কিছুটা কৌশলগত কারণে কাউন্সিলের ভেন্যু এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। ভেন্যুর ঘোষণা দিলে সরকারসহ বিভিন্ন মহল থেকে অসহযোগিতা ও চাপ আসতে পারে।

ছাত্রদলের কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত আপিল কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, কৌশলগত কারণে এখনও ছাত্রদলের কাউন্সিলের ভেন্যুর স্থান নির্ধারণ হয়নি। তবে কয়েকটি স্থান আমাদের পছন্দের মধ্যে রয়েছে।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী যারা
নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯ জন। এরা হলেন কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, হাফিজুর রহমান, রিয়াদ মো. তানভীর রেজা রুবেল, মো. এরশাদ খান, মো. ফজলুর রহমান খোকন, এসএম সাজিদ হাসান বাবু, এবিএম মাহমুদ আলম সরদার ও মোহাম্মদ মামুন বিল্লাহ (মামুন খান)। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৯ জন। এদের মধ্যে একজন রয়েছেন নারী প্রার্থী। প্রার্থীরা হলেন মো. জাকিরুল ইসলাম জাকির, মোহাম্মদ কারিমুল হাই (নাঈম), মাজেদুল ইসলাম রুমন, ডালিয়া রহমান, মো. আমিনুর রহমান আমিন, শেখ আবু তাহের, শাহ নাওয়াজ, সাদিকুর রহমান, কেএম সাখাওয়াত হোসাইন, সিরাজুল ইসলাম, মো. ইকবাল হোসেন শ্যামল, মো. জুয়েল হাওলাদার (সাইফ মাহমুদ জুয়েল), মো. হাসান (তানজিল হাসান), মুন্সি আনিসুর রহমান, মো. মিজানুর রহমান শরিফ, শেখ মো. মশিউর রহমান রনি, মোস্তাফিজুর রহমান, সোহেল রানা ও কাজী মাজহারুল ইসলাম।

 

/টিটি/
সম্পর্কিত
ফরিদপুরে এ কে আজাদের বাড়িতে চড়াও হলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা
বার ভাঙচুর: সেই যুবদল নেতা বহিষ্কার
পঞ্চগড়ে হাসনাত আবদুল্লাহআ.লীগ চাঁদাবাজি করে ভারতে পালিয়ে গেছে, আপনারা পালানোর পথও পাবেন না
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
পাবনায় দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
পাবনায় দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে রয়েছে বিশ্বকাপে খেলার হাতছানিও!
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে রয়েছে বিশ্বকাপে খেলার হাতছানিও!