করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় মন্বয়হীনতা এবং বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় সমন্বয় কমিটির প্রধান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, এক্ষেত্রে নানা সমন্বয়হীনতা এবং বিশৃঙ্খল অবস্থা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। বুধবার (৮ এপ্রিল) বিকালে এক ভিডিওবার্তায় এসব কথা বলেন তিনি।
‘৪র্থ স্তরের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে করণীয় এবং নাগরিক ঐক্যের প্রস্তাবনা’ শীর্ষক বক্তব্যে মান্না দাবি করেন, করোনা উত্তরকালে অর্থনীতির ঝুঁকি কমিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি তৈরি করে এখনই কাজ শুরু করতে হবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘দেশের এই মহা দুর্যোগের সময় আমি কোনও রাজনীতির কথা বলছি না। দেরিতে হলেও সরকার যে ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করছে তার সাধুবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু শুরু থেকে যে সীমাহীন গাফিলতি তারা করেছে, তার খেসারত দিচ্ছে দেশ এবং এর শেষ কোথায় সেটাও আমরা জানি না। ইতোমধ্যে আমাদের দেশে ৪র্থ স্তরের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ এখনও আমরা পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারিনি। সরকারের পক্ষ থেকে যেসব হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত হয়েছে বলে বলা হচ্ছে- সেগুলোও এখনও সেবা দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেনি।’
তিনি বলেন, এখনও চিকিৎসকদের পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা করা যায়নি। পর্যাপ্ত আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা যায়নি। পোশাককর্মীদের বেতনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি। অন্যান্য শ্রমিক এবং বেসরকারি খাতে যারা চাকরি করেন, তাদের বেতনের বিষয়ে কোনও দিক নির্দেশনা নেই। নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য যে বরাদ্দ করা হয়েছে, তা এতটাই অপ্রতুল যে তা দিয়ে নিম্ন আয়ের ৫ শতাংশ মানুষকেও এক মাস খাওয়ানো যাবে না। নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য এখনও কিছু ভাবা হচ্ছে না। করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য সেভাবে কোনও কাজ করা হয়নি।
মান্না অভিযোগ করেন, এই বিপর্যয়ের মধ্যেও ত্রাণের চাল, টিসিবির পণ্য মিলছে সরকার দলীয় অনেক নেতা, জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে ও আড়তে। প্রধানমন্ত্রী যদিও বলছেন যে এসব সহ্য করা হবে না। কিন্তু বাস্তব চিত্র তা বলে না। আমি আপনাদের বলছি, আল্লাহর ওয়াস্তে- এই সময়টাতে আপনারা গরিবের হক মারবেন না, অনেক তো হয়েছে। এত বড় দুর্যোগের সময় অন্তত আপনারা মনুষত্বের পরিচয় দিন।
ভিডিওবার্তায় মান্না কিছু দাবি তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ডাক্তারদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা উপকরণ সরবরাহ, দেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনই লকডাউন ঘোষণা করা, এই মুহূর্তে সব গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা, আগামী তিন মাসের খাদ্য সাহায্য নিশ্চিত করা, বিতরণের দায়িত্ব পুরোপুরি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দিতে হবে, নিম্ন আয়ের মানুষ যাদের বাড়িভাড়া পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে তাদের বাড়িভাড়া মওকুফ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিদ্যুতের লাইফ লাইন (৫০ ইউনিট পর্যন্ত) গ্রাহকদের আগামী তিন মাসের বিল পুরো মওকুফ করতে হবে। গ্যাসের বিল এবং সিলিন্ডারের গ্যাসের মূল্য অর্ধেক করতে হবে অন্তত আগামী ৩ মাসের জন্য। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য একেবারে স্বতন্ত্র হাসপাতাল তৈরি করতে হবে খুব দ্রুত। দেশে ফেরা প্রবাসী শ্রমিকদের সহজ শর্তে এবং সামান্য সুদে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে উপার্জনমুখী কাজে যুক্ত করার স্বার্থে তহবিল তৈরি করতে হবে।