X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

হঠাৎ অস্থিতিশীলতায় বিব্রত সরকার, সন্দেহে বিএনপি-জামায়াত

পাভেল হায়দার চৌধুরী
০৭ এপ্রিল ২০১৬, ২২:০৬আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০১৬, ২২:৩৩


হঠাৎ অস্থিতিশীল দেশ কুমিল্লায় তনু হত্যা, বাঁশখালীতে পুলিশ-জনতার সংঘর্ষে চারজন নিহত, মাদারীপুরে ইউপি নির্বাচনে ঢাবি ছাত্র হত্যা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যার মতো স্পর্শকাতর ঘটনা সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছে। এ কথা স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তবে, তারা এও বলছেন, এর সঙ্গে জড়িত বিএনপি-জামায়াত। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা শুধুই সরকারকে অস্থিতিশীল করে তোলার চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র। এর ভেতর দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, দেশে-বিদেশে এমনটাই প্রমাণ করা এ চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের মূল উদ্দেশ্যে। তাই ঘটনার পেছনের কারণ উদ্ঘাটন করতে এখন সচেষ্ট সরকার।

ক্ষমতাসীন দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এমন কথা বলছেন, রাজনৈতিকভাবে পেরে না ওঠায় সরকারবিরোধী মহল এসব ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করে উৎখাতের জন্যেই এসব ঘটানো হচ্ছে। তবে সরকার ও দলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত সরকারের ভিত নড়বড়ে করতে পারবে না। যারা এ পথে হাঁটছে বরং তারাই পা পিছলে পড়ে যাবে। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত তো রয়েছেই। তবে এসব ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জাল ছিন্ন করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কাজ করছে। আমরা প্রত্যেকটি ঘটনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এগুলো কেন ঘটছে, পেছনের কারণ ও এসব ঘটনার বাইরের কোনও মদদদাতা রয়েছেন কি না—তা উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, বাঁশখালীর ঘটনা আমার মনে হয়, সরকারের বিরুদ্ধে বড় একটি চক্রান্ত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাঁশখালীর ঘটনায় জানতে পেরেছি, ওখানে পুলিশও গুলি করেছে। গ্রামবাসীর পক্ষ থেকেও গুলি করা হয়েছে। যারা গুলি করেছেন, তারা কারা? তিনি বলেন, তনু হত্যার ঘটনা আমরা তদন্ত করছি। শিগগিরই এ ঘটনার অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে বের করতে পারব। এসব নিয়ে উতলা (চিন্তিত) হওয়ার কিছু নেই, সব কিছুই বের হয়ে আসবে। তিনি বলেন, সব বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর একটি দিক-নির্দেশনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, এসব ঘটনা সরকারকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। যেমন তনু হত্যা অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত; কিন্তু এটা নিয়ে যেভাবে মিছিল-মিটিং, লাফালাফি হচ্ছে, এ থেকে পরিষ্কার যে, এগুলো সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, তনু হত্যা নিয়ে সেনাবাহিনীকে সরকার ও জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে। কারা করছে এই ষড়যন্ত্র—এর জবাবে তিনি বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, যারা দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা চান না তারাই এর সঙ্গে জড়িত।

নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, কয়েক বছর ধরেই ছয় শতাংশের বৃত্তে আটকে ছিল দেশের প্রবৃদ্ধি। কিন্তু দেশের ইতিহাসে এই প্রথম মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশের ঘর অতিক্রম করেছে। এর মধ্য দিয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছালো প্রবৃদ্ধির অর্জন। চলতি অর্থবছরে প্রাথমিক হিসেবে এই হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে, যা গত অর্থবছর ছিল ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অন্যদিকে, প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৬৬ ডলারে, যা গত অর্থবছর চূড়ান্ত হিসেবে ছিল এক হাজার ৩১৬ মার্কিন ডলার। সরকার দেশকে অর্থনৈতিকভাবে নতুন পরিচিতি এনে দিচ্ছে।

এর পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও দেশ এখন স্থিতিশীল। জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে পর্যদুস্ত। জাতীয় নির্বাচনের পর বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করে সরকার দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

শাসক দলের নেতারা বলছেন, এ অবস্থায় সরকারকে অস্থিতিশীল করতে বিদেশি হত্যা, বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে দেশের বৃটেনে কার্গো বিমান নিষিদ্ধ করা, শ্রমশক্তি রফতানিতে বাধা দেওয়া, শিক্ষাঙ্গনকে অস্থিতিশীল করে তোলা, হত্যা-ধর্ষণের মতে এসব ঘটনা ফলাও করে প্রচার করে দেশের জনগণকে সরকারের ওপর আস্থাহীন করে তুলতে চাচ্ছে একটি মহল।

সূত্র জানায়, সরকার এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল। সরকার মনে করছে, রাজপথে ব্যর্থ হয়ে সরকারবিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র নতুন খেলায় নেমেছে। তবে এ বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে চলছে। এ জন্য বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হওয়ার ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। দল ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থাগুলো প্রতিনিয়ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে হাইকমান্ডে নিয়মিত প্রতিবেদন দিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, ইউপি নির্বাচনের সহিংসতার ক্ষেত্রেও সরকারের সতর্কতা রয়েছে। নিজেদের মধ্যকার সংঘর্ষে দলের বাইরের কারও কোনও ইন্ধন আছে কিনা, ক্ষমতাসীন দলের অনেক এমপির আচরণও পর্যবেক্ষণ করছে সরকারের হাইকমান্ড।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত থেমে নেই। মাঝে মাঝে থেমে থাকলেও ভিন্ন পরিকল্পনায় আকার শুরু হয়। তিনি বলেন, সরকার শক্তিশালী যারা মনে করছে, একটু ধাক্কা দিলেই সরকার পড়ে যাবে। কিন্তু সরকার পড়ে যাবে না, বরং ষড়যন্ত্রকারীরাই হারিয়ে যাবেন।

/এমএনএইচ/  

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ