‘দায় ও দরদের রাজনীতি’ করতে চায় জাতীয় যুবশক্তি। যেখানে নেতৃত্ব মানে দায়িত্ব গ্রহণ, সহানুভূতিশীলতা, সহনশীলতা এবং নাগরিক সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ। অন্যথায় রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই দায় ও দরদের অনুশীলন আমাদের রাজনীতির অন্যতম নৈতিক ভিত্তি।
শুক্রবার (১৬ মে) বিকালে গুলিস্তানে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তির ঘোষণাপত্র পাঠ করতে গিয়ে এসব কথা বলেন সংগঠনটির আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম।
ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় যুবশক্তি বিশ্বাস করে— ইতিহাসের প্রতিটি মৌলিক পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিয়েছে তরুণরা এবং এখন সময় এসেছে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও নতুন প্রজাতন্ত্র নির্মাণের। আমরা দাঁড়িয়ে আছি এক ধারাবাহিক লড়াইয়ের সন্ধিক্ষণে; যার সূচনা হয়েছিল ১৯৪৭ সালের উপনিবেশবিরোধী আজাদির লড়াইয়ে। পরবর্তী সময়ে পরিণত হয়েছে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে। আর এক নতুন দিশা ও প্রত্যয়ের জন্ম দিয়েছে ২০২৪-এর ঐতিহাসিক ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। এই অভ্যুত্থান কেবল ক্ষোভের বিস্ফোরণ নয়—এটি ছিল একটি নতুন রাজনৈতিক কল্পনার জন্মমুহূর্ত। যেখানে তরুণেরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে: বর্তমান ব্যবস্থা আর চলতে পারে না। প্রয়োজন এক নতুন রাষ্ট্রকল্প, এক নতুন পথ। নতুন রাষ্ট্র ও রাজনীতির আকাঙ্ক্ষাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করেছিল। যুবশক্তি জুলাই গণঅভ্যুত্থানেরই ধারাবাহিকতা।
এতে আরও বলা হয়, ‘আমরা চাই এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে নাগরিক মর্যাদা কাগজে নয়, বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত হবে; যেখানে রাষ্ট্র সকল ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম ও জাতিসত্তার মর্যাদা দেবে; যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কেবল স্লোগান নয়, রাষ্ট্রীয় নীতির ভিত্তি হবে। যেকোনও ধর্মবিদ্বেষ ও উগ্রতাকে পরিহার করে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মবোধ ও সামাজিক-নৈতিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আমরা সম্প্রীতি, ইনসাফ ও নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।‘
ঘোষণাপত্রে এমন একটি জাতীয় অর্থনীতির কথাও উল্লেখ করা হয়, যা কেবল প্রবৃদ্ধির হিসাব নয়, ইনসাফ ও সমতার ভিত্তিতে গড়ে উঠবে। এতে বলা হয়, যেখানে কাজ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি হবে সবার নাগালের মধ্যে। রাষ্ট্রে তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। তরুণরা উদ্ভাবনী শক্তি ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ পাবে। দুর্নীতিমুক্ত ও মেধাভিত্তিক একটা রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলার জন্য যুবশক্তি কাজ করবে।
যুবশক্তি মনে করে তরুণ নারীরা শুধুই অংশীদার নয়, তারা হবে নতুন প্রজাতন্ত্রের নেতৃত্বের মুখ। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, পরিবার, কর্মক্ষেত্র, রাজনীতি ও আন্দোলনে তাদের উপস্থিতি বাধাগ্রস্ত নয়—মূলধারায় প্রোথিত হবে। জাতীয় যুবশক্তি চায় এমন রাষ্ট্র, যেখানে নারীর সাহস, সিদ্ধান্ত ও সক্ষমতা বাধাহীনভাবে বিকশিত হবে। নারীর ওপর সহিংসতা নয়, নারীর হাতেই হবে সমাজ ও রাষ্ট্রের পুনর্গঠন।
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব কেবল সেনাবাহিনী বা নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে দলটির ঘোষণাপত্রে বলা হচ্ছে, এটি তরুণ প্রজন্মেরও রাজনৈতিক ও নৈতিক অঙ্গীকার। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তরুণদের অংশগ্রহণ এখন কৌশলগত অপরিহার্যতা। সীমান্তরক্ষা থেকে শুরু করে তথ্য-সংগ্রাম, জলবায়ু বিপর্যয়, খাদ্য ও প্রযুক্তি নিরাপত্তা—সবখানেই তরুণদের সক্রিয় ভূমিকা ছাড়া সার্বভৌমত্ব রক্ষা অসম্ভব।
‘তরুণ যেন মাদক নয়, নিজের স্বপ্নের মধ্যেই হারিয়ে যেতে শেখে। আমাদের দাবি—রাষ্ট্র এই দায় স্বীকার করুক, এবং তরুণদের পাশে নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তুলুক।’
ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, এসব কিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আমাদের প্রধান দাবি—একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও নতুন প্রজাতন্ত্র। আমরা বিশ্বাস করি, সময় এসেছে নতুন সংবিধানের, নতুন রাজনৈতিক চুক্তির। যা এই প্রজন্মকে প্রতিনিধিত্ব করবে, যা এই প্রজন্মের মর্যাদা ও সুযোগ নিশ্চিত করবে, যা ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি, ন্যায্যতা, পরিবেশ ও প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করে এক নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবে।