আসন্ন বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নয় বরং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক খাতে সুশাসন ও সামাজিক সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য একটি বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপন করে এমন দাবি জানানো হয়।
দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিদ্যমান অন্তর্বর্তী সরকারের ৭ দশমিক ৯০ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রকল্প মূলত ব্যয় সংকোচনমূলক ও জনস্বার্থ উপেক্ষাকারী। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নয়, বরং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, বাজারব্যবস্থাপনা, রিজার্ভ সুরক্ষা এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এনডিএম নেতারা বলেন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও ব্যয় সংকোচন কার্যত জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এতে একদিকে বাজারে সরবরাহ সংকট দেখা দেয়, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। দলটি দাবি করে, ভোক্তা বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙা, সরবরাহ শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ন্যায্য মূল্যে পণ্য নিশ্চিত করলেই কেবল মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
এ সময় এনডিএম’র বাজেট প্রস্তাবনায় রাজস্ব আহরণে স্বচ্ছতা, সরকারি ব্যয়ে জবাবদিহি এবং প্রান্তিক জনগণের জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।
বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনায় এনডিএম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের প্রতি। দলটি প্রস্তাব করেছে, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা, বেকার ভাতা এবং দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
তারা বলেছে, করদাতারা রাষ্ট্রে অবদান রাখেন, তাই তাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে বাজেট বরাদ্দের অংশ তাদের কল্যাণে ফিরিয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের জন্য খাদ্যপুষ্টি, শিশুখাদ্য ও নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়গুলোতে অতিরিক্ত বরাদ্দের দাবি জানানো হয়।
শিক্ষা খাতের উন্নয়নে এনডিএম বাজেটের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ বরাদ্দের সুপারিশ করেছে। তারা শিক্ষকদের বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাস, আধুনিক গবেষণাগার স্থাপন, রোবটিক্স ও এআইভিত্তিক কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু এবং ‘জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন। শিক্ষা ব্যবস্থায় গবেষণাভিত্তিক জ্ঞানচর্চার পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানোরও আহ্বান জানানো হয়।
একইভাবে স্বাস্থ্য খাতে ‘হেলথ কার্ড’ চালু, ইন্টার্ন ডাক্তারদের ভাতা বৃদ্ধি, জেলা পর্যায়ে আধুনিক হাসপাতাল স্থাপন এবং ওষুধ ও মেডিক্যাল যন্ত্রাংশে আমদানি শুল্ক কমানোর দাবি তোলা হয়।
দলটির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, আমরা মনে করছি, নতুন আয়কর আইন সাধারণ করদাতাদের জন্য জটিল ও হয়রানিমূলক হয়ে উঠেছে। তাই আইন সহজীকরণ, হয়রানি বন্ধ, কর পরিশোধে অনলাইন কার্যক্রম সহজ করা এবং কর বিভাগের আমলাতান্ত্রিকতা কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রস্তাবনায় ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার সুপারিশও রয়েছে। জ্বালানি খাতে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলাকে অধিক বরাদ্দ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এ সময় বাজেট প্রস্তাবনায় প্রতিরক্ষা ও আইন-শৃঙ্খলা খাতেও স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়।