X
মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
১০ আষাঢ় ১৪৩২

টেপ টেনিসের জয়-রাজা যেভাবে টেস্ট ক্রিকেটে

রবিউল ইসলাম, চট্টগ্রাম থেকে
২৪ নভেম্বর ২০২১, ১৯:৫৫আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২১, ২১:০৫

ছোটবেলা থেকেই টেপ টেনিস ক্রিকেটের পাগল মাহমুদুল হাসান জয় ও  রেজাউর রহমান রাজা। ক্রিকেটে দুজনেরই হাতেখড়ি টেপ টেনিস বলে। বাবা-মায়ের চোখ-রাঙানি উপেক্ষা করে এই টেপ টেনিস বলে এলাকার অলিগলি তারা দাপিয়ে বেড়াতেন।

তবে দুজনের শুরুর গল্পটা কিন্তু ভিন্ন। বড় ভাইদের সঙ্গে টেপ টেনিস বলে খেলতে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছিল মাহমুদুল হাসান জয়কে। অন্যদিকে রেজাউর রহমান রাজা বড় ভাইদের সহযোগিতা পেয়েছিলেন। শেষে গিয়ে অবশ্য দু’জনের গল্পই মিলিত হয়েছে এক মোহনায়। টেপ টেনিস ক্রিকেটের আঙিনা ছাড়িয়ে ক্রিকেটের অভিজাত আঙিনায় কড়া নাড়ছেন দুজন।

মাহমুদুল হাসান জয়

ব্যাংকার বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে পড়ালেখা শেষ করে তার পেশাই বেছে নেবে। কিন্তু বাবা আবুল বারেকের স্বপ্ন কুঁড়িতেই ঝরে পড়ে। কারণ, নিজের স্বপ্নের পেছনেই ছুটেছেন মাহমুদুল। যে স্বপ্নের অলিগলি পেরিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে চ্যাম্পিয়ন করাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তার সেঞ্চুরিতেই ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল যুবদল।

চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় মাহমুদুল ছোটবেলা থেকেই ভীষণ ডানপিটে। প্রাইমারিতে থাকতে বাবা-মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাঠে যেতেন ঠিকই, কিন্তু এলাকার বড় ভাইরা ব্যাটিং দিতো না তাকে। শুধু ফিল্ডিং করে মন খারাপ নিয়ে বাসায় ফেরার পথে ভাবতেন, একদিন বড় ব্যাটসম্যান হয়ে দেখিয়ে দেবেন বড় ভাইদের। এখন স্মৃতির পুকুরে ডুব দিলে নিশ্চয়ই অন্যরকম শিহরণ জাগে তার মনে।

স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে মাহমুদুলের চোখ ছলছল করে ওঠে, ‘আসলে এই অনুভূতি প্রকাশ করার মতো না। সবারই স্বপ্ন থাকে টেস্ট স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়ার। আমি প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছি, অনেক খুশি। কীভাবে কি করবো, সেটি নিয়ে আলাদা কোনও পরিকল্পনা নেই। সুযোগ পেলে আমার স্বাভাবিক ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করবো।’

বুধবার শেষ হওয়া জাতীয় ক্রিকেট লিগে দারুণ সময় কাটিয়েছেন জয়। শুরুর কয়েকটি ম্যাচে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স করতে না পারলেও ঢাকা মেট্রো ও বরিশাল বিভাগের হয়ে টানা দুই সেঞ্চুরি করেছেন। শেষ রাউন্ডে খেলেছেন ৮৩ রানের ইনিংস। সব মিলিয়ে টানা তিন ম্যাচে ৩৪৫ রান এসেছে ডানহাতি এই ব্যাটারের ব্যাট থেকে।

তাই তো জাতীয় লিগের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স জয়কে আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে, ‘হ্যাঁ! জাতীয় লিগে বেশ কয়েকটি ইনিংস ভালো খেলেছি। আমার আত্মবিশ্বাস এখন ভালো আছে। তার আগে এইচপিও এ- টিমের প্রস্তুতি ম্যাচেও ভালো একটা ইনিংস খেলেছি। তাই আমি প্রস্তুত সামনের ম্যাচগুলোতে ভালো খেলার জন্য।’

টেস্টের অভিজাত সংস্করণে অভিষেক হোক বা না হোক, জয়কে নিয়ে ইতিবাচক ভাবনা নির্বাচকদের। বুধবারের অনুশীলনে শুরুতেই ব্যাটিং করতে দেখা গেছে জয়কে। নতুন বলে প্রথমে স্পিনের বিপক্ষে ব্যাটিং করেছেন। পরে থ্রোয়ারের বিপক্ষে ব্যাটিং শেষে পেস আক্রমণ সামলেছেন। জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম দিনের অনুশীলন শেষে জয় বলেছেন, ‘সিনিয়র ভাইরা সবাই আছেন, আমরা একসঙ্গে শেষ কয়েকটা সিরিজ খেলছি। সবাই অনেক হেল্প করে আমাকে।’

<iframe width="800" height="450" src="https://www.youtube.com/embed/BrviRTUYsHY" title="YouTube video player" frameborder="0" allow="accelerometer; autoplay; clipboard-write; encrypted-media; gyroscope; picture-in-picture" allowfullscreen></iframe>

রেজাউর রহমান রাজা

সাত ভাই এবং ছয় বোনের সংসারে সবচেয়ে ছোট রেজাউর রহমান রাজা টেপ টেনিস ক্রিকেটের প্রেমে অন্ধ ছিলেন। এলাকার গলিতে টেপ টেনিস দিয়ে খেলে বেড়ানোই ছিল তার নেশা। এলাকার বড় ভাইরা রাজার টেপ টেনিস ক্রিকেটে বোলিং দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এতই মুগ্ধ হন যে রাজার হাতে তুলে দেন ক্রিকেট বল। সেই বলেও দারুণ বোলিং করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। কিন্তু রাজার স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার পরিবার! ২০১৯ সালে বাবা হারানো রাজা ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে এতই বিভোর ছিলেন, পরিবারের কোনও যুক্তিই তার কানে পৌঁছেনি। মাকে কোনোভাবে রাজি করিয়ে সিলেটের এক অ্যাকাডেমিতে ভর্তি  হয়ে গেছেন। যদিও সেখানে বেশি দিন থাকেননি, টেপ টেনিস খেলে জমানো টাকা দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। ভর্তি হন মিরপুরের সিটি ক্লাবে। সেখান থেকে নেট বোলার হিসেবে মিরপুর স্টেডিয়ামে গিয়ে বিসিবি হাইপারফরম্যান্স বিভাগের পেস বোলিং কোচ চম্পাকা রামানায়েকের নজরে পড়েন। পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্স তো আছেই। সব মিলিয়ে টেস্টের অভিজাত আঙিনায় পা দেওয়ার প্রথম ধাপটা ঠিকই পার করে ফেলেন এই পেসার। এখন শুধু অপেক্ষা!

পুরনো গল্প শোনাতে গিয়ে ২২ বছর বয়সী এই পেসার বলেছেন, ‘‘আসলে টেপ টেনিস ক্রিকেট থেকেই অনুপ্রাণিত হওয়া। এলাকায় টেপ টেনিস খেলার পর একটা ক্রিকেট বলের টুর্নামেন্ট হয়েছিল। সেখানে খেলতে যাই। তখন বড় ভাইরা বোলিং দেখে বলছিলেন, ‘তোর বোলিং ভালো হচ্ছে, তুই চাইলে স্টেডিয়ামে গিয়ে ক্রিকেট প্র্যাকটিস করতে পারিস।’ তো আমি বড় ভাইদের কথা শুনে প্র্যাকটিসে গেলাম। প্র্যাকটিসে গিয়ে আমার মনে হলো ইনশাআল্লাহ আমি পারবো। তো এভাবেই আসলে আমার ক্রিকেটে আসা।’

কেন পেসার হয়ে উঠলেন সেটিও জানান রাজা, ‘আসলে চ্যালেঞ্জ নেওয়া পছন্দ করি। আমাদের বড় ভাইদের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হওয়া... সিলেটে যেমন রাহি ভাই, এবাদত ভাই, খালেদ ভাইদের কাছ থেকে মোটিভেশন পেয়েছি। সেখান থেকেই আসলে পেস বোলার হওয়ার একটা উৎসাহ জেগেছে।’

১০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা রাজা টেস্ট ক্রিকেট উপভোগ করেন। নিজের স্কিল নিয়ে বলেন, ‘টেস্ট খেলা উপভোগ করি। আলহামদুলিল্লাহ ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম শ্রেণিতে ভালো করেছি। চারদিনের খেলায় ডে বাই ডে কয়েকটা স্পেলে বোলিং করতে পারি। দিনের শুরুতে যেই পেসে বোলিং করি, দিনের শেষে আলহামদুলিল্লাহ তার চেয়ে একটু বেশি পেসে বল করতে পারি।’

/এফআইআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ড্র করে নকআউটে পিএসজিকে পেলো মায়ামি 
ড্র করে নকআউটে পিএসজিকে পেলো মায়ামি 
ফ্ল্যাট বিক্রিতে ধস, নির্মাণ খাতে ছাঁটাইয়ের শঙ্কা
ফ্ল্যাট বিক্রিতে ধস, নির্মাণ খাতে ছাঁটাইয়ের শঙ্কা
ইসরায়েল ‘অবৈধ আগ্রাসন’ বন্ধ করলে হামলা থামাবে ইরান
ইসরায়েল ‘অবৈধ আগ্রাসন’ বন্ধ করলে হামলা থামাবে ইরান
দেশে প্রথমবারের মতো গুগল পে চালু হচ্ছে আজ, যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে
দেশে প্রথমবারের মতো গুগল পে চালু হচ্ছে আজ, যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে
সর্বাধিক পঠিত
ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায় মন্দা, নেপথ্যের কারণ কী
ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায় মন্দা, নেপথ্যের কারণ কী
প্রধান উপদেষ্টা ও দুদককে উকিল নোটিশ পাঠালেন টিউলিপ
প্রধান উপদেষ্টা ও দুদককে উকিল নোটিশ পাঠালেন টিউলিপ
কাতারের উদ্দেশে ছাড়া ফ্লাইট নামলো ওমানে, আবার ফিরছে ঢাকায়
দোহাগামী বিমানের সব ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণাকাতারের উদ্দেশে ছাড়া ফ্লাইট নামলো ওমানে, আবার ফিরছে ঢাকায়
কাতার ও ইরাকে মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
কাতার ও ইরাকে মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে শাটডাউনের হুমকি, বদলির আদেশে উত্তাল রাজস্ব ভবন
এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে শাটডাউনের হুমকি, বদলির আদেশে উত্তাল রাজস্ব ভবন