X
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
১৫ আষাঢ় ১৪৩২

লিয়নের বুকপকেটে বড় ভাইদের স্বপ্ন

রবিউল ইসলাম
০৪ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:০৮আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:২৪

আহসান হাবিব লিয়নের বাবা বেঁচে নেই। মাত্র ৭ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন বাঁহাতি এই স্পিনার। যদিও বাবা না থাকার দুঃখ এতটুকু তার গায়ে লাগেনি। তাকে মাথায় তুলে রেখেছিলেন মা ও দুই বড় ভাই। তারা কখনও লিয়নের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়াননি। ক্লাস সিক্সে থাকতে জাতীয় দলের ক্রিকেটার লিটন দাসের কোচ আবু সামাদ মিঠুর প্রচেষ্টা ক্রিকেট কোচিং স্কুলে ভর্তি হন তিনি। সেখানেই লিয়নের ক্রিকেটের হাতেখড়ি।

বড় দুই ভাইয়ের ক্রিকেট খেলা দেখেই মূলত তার ক্রিকেটার হয়ে ওঠা। ভাইয়েরা যখন প্রচেষ্টা ক্রিকেট কোচিং সেন্টার অনুশীলনে যেতেন, লিয়নও পেছন পেছন ছুটতেন। দুই ভাই সানি চৌধুরী ও রাউল চৌধুরী দিনাজপুরের সিনিয়র লেভেলে ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন। বড় ভাই সানির ক্রিকেট দিনাজপুরে সীমাবদ্ধ থাকলেও মেজো ভাই রাউল ঢাকায় দ্বিতীয় বিভাগেও খেলেছিলেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলার স্বপ্ন তাদের পূরণ হয়নি, তাই ছোট ভাইকে দিয়ে সেটি পূরণ করতে বদ্ধপরিকর তারা।

অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্পে শুরু থেকেই ছিলেন লিয়ন। আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজেও ছিলেন বাঁহাতি এই স্পিনার। ভারত সফরের আগে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য রাকিবুল হাসান দলে ফেরাতে বাদ পড়তে হয় তাকে। ভারত সফরে যেতে না পারলেও বিশ্বকাপ দলের সঙ্গী হয়েছেন তিনি। ১৫ জনের মূল স্কোয়াডে না থাকলেও লিয়নের কোনও আক্ষেপ নেই। যখনই সুযোগ আসবে নিজের সর্বোচ্চটা দিতে প্রস্তুত আছেন। নিজে স্বপ্ন দেখেন মা-ভাইদের চাওয়া পূরণ করার। আর সেটি করতে এবার এইচএসসি পরীক্ষাও মিস করেছেন তিনি!

আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ১৭ যোদ্ধাকে নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে বাংলা ট্রিবিউনে। আজ (মঙ্গলবার) থাকছে বাঁহাতি স্পিনার আহসান হাবিব লিয়নের একান্ত সাক্ষাৎকার-

লিয়নের বুকপকেটে বড় ভাইদের স্বপ্ন বাংলা ট্রিবিউন: ক্রিকেট জীবনের শুরুটা কীভাবে?

লিয়ন: আমাদের বাড়ির পাশেই কলেজ মাঠ আছে, আদর্শ মাঠ নামে পরিচিত। আমার ভাইয়েরাও খেলতো। তাদের দেখে আমারও ক্রিকেট খেলার ইচ্ছা করতো। তাদের সঙ্গে মাঠে যাওয়ার জন্য বায়না ধরতাম। এভাবেই চলতে থাকে। ওখানে বড়রা খেলতো, আমি সুযোগ পেলেও ব্যাটিং-বোলিং তেমন পেতাম না। ফিল্ডিং করতাম, সেখানে অবশ্য ভালো ভালো ক্যাচ ধরতাম। তবে বাঁহাতি স্পিন বোলিং করতে চাইতাম। মাঝে মাঝে অবশ্য বোলিং দিতো। আসলে খেলাটা আমার ওখান থেকেই। আর আমার বড় ভাইয়েরা অনেক ভালো খেলতো। ওদের দেখে আমার ইচ্ছা জাগতো আমিও ভালো খেলবো।

বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে বড় ভাইয়েরা আপনার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার প্রেরণা?

লিয়ন: আমার দুই ভাই ক্রিকেট খেলে। বড় ভাই দিনাজপুরে জেলা দলে খেলতো। মেজো ভাই ঢাকায় দ্বিতীয় বিভাগে খেলেছে। মেজো ভাই এখন একটু কম খেলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে। বড় ভাই প্রায়ই খেলে। দিনাজপুরের সিনিয়র লেভেলে আমার ভাইয়েরা অনেক ভালো খেলোয়াড়। তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেতে পারেনি বলেই আমাকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখে। আমাকে ভালো জায়গায় দেখতে যায়।

বাংলা ট্রিবিউন: একদম ছোট থাকতে বাবা হারিয়েছেন। নিশ্চয় কঠিন ছিল ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন দেখা?

লিয়ন: মোটেও না। এমন বড় ভাই থাকলে পৃথিবীর সবকিছুই সহজ হয়ে যায়। আমরা মা-ই আমার বাবা ও মা। আর ক্রিকেট নিয়ে তো আমার চেয়ে ভাইয়াদের স্বপ্নই বেশি। ফলে আমাকে আসলে কিছুই ভাবতে হয় না। সব ভাবনা যেন তাদের! আগেই বলেছি, ক্রিকেটে আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার বড় ভাইয়ের (সানি চৌধুরী)। অনুশীলনের জন্য যখন যেভাবে যা প্রয়োজন ছিল, আমার বড় ভাই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কোনও কিছুতেই কমতি রাখেনি। আমার বড় ভাই আমাদের মানুষ করেছেন। আমাদের গার্মেন্টের দোকান আছে। বড় ভাই দেখাশোনা করেন।

বাংলা ট্রিবিউন: আর মায়ের কাছ থেকে কেমন অনুপ্রেরণা পান?

লিয়ন: মা আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করেন। যেকোনও সাফল্যে উনি সবচেয়ে বেশি খুশি হন। উনি বলেন, ‘তোর বাবা থাকলে কত খুশি হতো।’ মায়ের কাছে শুনেছি বাবা ছোটবেলাতে ক্রিকেট খুব পছন্দ করতেন। হয়তো বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন।

বাংলা ট্রিবিউন: ক্রিকেট বলে অনুশীলন শুরু কীভাবে?

লিয়ন: ক্লাস সিক্সে পড়া অবস্থায় আমাকে দিনাজপুরের প্রচেষ্টা ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। তারপর আমি অনুশীলনে যাই। আমার কোচ মিঠু স্যার (আবু সামাদ) আমাকে খুব ভালো করেই দেখেন। আমার বোলিংয়ের প্রশংসা করেন। ওখান থেকেই বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের নানা ধাপ পেরিয়ে আমি অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পাই।

বাংলা ট্রিবিউন: একই একাডেমির কোচের শিষ্য লিটন দাস। কখনও কি কথা হয়েছে লিটনের সঙ্গে?

লিয়ন: হুম, হয়েছে। লিটন ভাই যখন দিনাজপুর যান, তখন ওখানেই অনুশীলন করেন। আমিও করি। বহুবার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। আমাকে নানাভাবে পরামর্শ দিয়েছেন লিটন ভাই।

বাংলা ট্রিবিউন: ফর্মহীনতা কিংবা অন্য কোনও কারণে কখনও বাধার মুখে পড়েছিলেন?

লিয়ন: পরিবারের সাপোর্ট সবসময় পেয়েছি। আমার বাবা নেই। অনেক ছোট থাকতেই বাবাকে হারিয়েছি। অনেক সময় খারাপ সময় গিয়েছে, তখনও আমাকে আমার পরিবার অনেক বেশি সাহস জুগিয়েছে। বড় ভাইয়েরা ও মা সবসময় বলতো, ‘তুই তোর প্রসেস মেনে চলতে থাক। ভালো খারাপ নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। ঠিক রাস্তায় থাকলে ফল আসবেই।’ আমি যেহেতু সবার ছোট আমার ভাই-বোনরা আমাকে অনেক আদর করেই মানুষ করছেন।

বাংলা ট্রিবিউন: যুব বিশ্বকাপের মূল স্কোয়াডে নেই আপনি। তবে যেকোনও সময় আপনার ডাক পড়তে পারে। কতটা প্রস্তুত?

লিয়ন: আমি তো শুরু থেকেই অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্পে ছিলাম। আমাদের প্রস্তুতি সবার একইরকম হয়েছে। সব ক্যাম্পে আমি ছিলাম। খুলনাতে আমাদের ক্যাম্প হয়েছে। ওখানে আমাদের প্রস্তুতি খুব ভালো হয়েছে। আমি সবসময় প্রস্তুত আছি। শ্রীলঙ্কায় তিনটি ম্যাচ খেলেছি। আলহামদুলিল্লাহ ভালোই হয়েছিল। পরে ভারত সফরে ছিলাম না। পরে আবার এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের দলে ‍যুক্ত হয়েছি। যদি সুযোগ হয় তবে অবশ্যই নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবো।

বাংলা ট্রিবিউন: মূল দলে নেই, একটু কি আক্ষেপ লাগে?

লিয়ন: মোটেও না। আমি তো আছিই। সিনিয়র রাকিবুল ভাই যুক্ত হওয়াতে আমাদের শক্তি বেড়েছে। কিন্তু আমার কোনও আক্ষেপ নেই। অবশ্যই স্বপ্ন ছিল ম্যাচ খেলবো।। আমি তো তাও বিশ্বকাপ দলের সদস্য হয়ে আছি। দরকার পড়লে আমাকে ডাকবে। তখন নিজেকে প্রমাণ করবো।

বাংলা ট্রিবিউন: সাকিব আল হাসান আপনার আইডল। তার কোন দিকটি আপনার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে?

লিয়ন: সাকিব ভাই আমার অলটাইম ফেভারিট। তাকে আমি ফলো করি। ছোটবেলায় যখন বাঁহাতি স্পিন বোলিং করি, তখন থেকেই সাকিব ভাইয়ের ব্যাটিং-বোলিং ফলো করি। তার মতোই অন্তত বোলিংটা করার চেষ্টা করি। সাকিব ভাই আমার প্রথম অনুপ্রেরণা। এছাড়া টিভির সামনে বসলেই (শহীদ) আফ্রিদি ভাইয়ের অলরাউন্ডস পারফরম্যান্স চোখে ভাসে।

লিয়নের বুকপকেটে বড় ভাইদের স্বপ্ন প্রোফাইল

পুরো নাম: আহসান হাবিব লিয়ন

ডাক নাম: লিয়ন

জন্ম: ১৫ মে ২০০৩

জন্মস্থান: ঘাসিপাড়া, দিনাজপুর

বাবা: মৃত আনোয়ার হোসেন

মা: মনোয়ারা বেগম

উচ্চতা: ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি

পড়াশোনা: এইচএসসি পরীক্ষার্থী

প্রথম ক্লাব: প্রচেষ্টা ক্রিকেট কোচিং সেন্টার

বর্তমান ক্লাব: প্রচেষ্টা ক্রিকেট কোচিং সেন্টার

বোলিং স্টাইল: বাঁহাতি স্পিনার

বোলিংয়ে শক্তির জায়গা: টার্ন ও আর্ম বল

ব্যাটিং স্টাইল: ডানহাতি

প্রিয় শটস: কাভার ড্রাইভ

প্রিয় মানুষ: বড় ভাই (সানি চৌধুরী)

প্রিয় ক্রিকেটার: সাকিব আল হাসান ও শহীদ আফ্রিদি

ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত: ওয়াইসিএলে ৩ ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ও টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার।

/কেআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নেতানিয়াহুর দুর্নীতি মামলায় ইসরায়েলি প্রসিকিউটরদের তীব্র সমালোচনা ট্রাম্পের
নেতানিয়াহুর দুর্নীতি মামলায় ইসরায়েলি প্রসিকিউটরদের তীব্র সমালোচনা ট্রাম্পের
চরম অচলাবস্থায় বাণিজ্য, প্রতিদিন ২৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কা
আজও এনবিআরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’চরম অচলাবস্থায় বাণিজ্য, প্রতিদিন ২৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কা
বজ্রঝড়ের পর ৯ মিনিটের গোল উৎসবে কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসি
বজ্রঝড়ের পর ৯ মিনিটের গোল উৎসবে কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসি
শ্রমিক দল নেতার বিরুদ্ধে গ্রাম পুলিশকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ  
শ্রমিক দল নেতার বিরুদ্ধে গ্রাম পুলিশকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ  
সর্বাধিক পঠিত
খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেস সচিবকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ
খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেস সচিবকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছিলেন অফিস সহকারী হয়ে, বেরোলেন এমবিএ’র সনদ নিয়ে
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছিলেন অফিস সহকারী হয়ে, বেরোলেন এমবিএ’র সনদ নিয়ে
সরকারি গাড়িতে দাওয়াতে গেলো ইউএনও’র পরিবার
সরকারি গাড়িতে দাওয়াতে গেলো ইউএনও’র পরিবার
মুরাদনগরে গলায় ছুরি ধরে নারীকে ধর্ষণ, থানায় মামলা
মুরাদনগরে গলায় ছুরি ধরে নারীকে ধর্ষণ, থানায় মামলা
‘সরকার দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে আন্দোলন ঘোষণা করবো’
‘সরকার দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে আন্দোলন ঘোষণা করবো’