শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজের মধ্যে বড় ধরনের মিল রয়েছে। টি-টোয়েন্টিতেও শেষ ম্যাচ ছিল সিরিজ নির্ধারণী, ওয়ানডে সিরিজও তাই। দুই দলই একটি করে ম্যাচ জিতেছে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ তাই রূপ নিয়েছে ‘অলিখিত ফাইনালে’। শুধু এখানেই নয়, দুই ম্যাচেই ফল নিষ্পত্তিতে শিশিরের প্রভাব ছিল। সোমবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যারা জিতবে, তাদের হাতেই উঠবে শিরোপা। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায়, সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টেলিভিশন ও টি স্পোর্টস।
আগের দুটি ওয়ানডেতে শিশিরের প্রভাব ছিল। শিশিরের কারণে দুই দলই ভুগেছে। প্রথম ম্যাচে শিশির থাকায় জিততে পারেনি শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় ম্যাচে একই কারণে হেরে গেছে বাংলাদেশ। সোমবার অবশ্য শিশির নিয়ে ভাবনা নেই। পুরো ম্যাচই দিনের আলোতে। আগের দুই ম্যাচে শিশির নিয়ে দুই দলকেই বিস্তর হিসাব-নিকাশ করতে হয়েছিল, ওসব করতে হচ্ছে না শেষ ওয়ানডেতে। সমান সমান সুযোগ থাকলেও মেহেদী হাসান মিরাজ দিনের আলোতে বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখছেন। ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলেন তিনি বলেছেন, ‘না, আলহামদুলিল্লাহ। একটা জিনিস দেখেন যে, শেষ ম্যাচটা আমরা হেরেছি। যে জিনিসটা বললেন কন্ডিশন, আমরা তো জানি আমাদের কন্ডিশন সম্পর্কে। যেহেতু দিনের ম্যাচ, এখানে অবশ্যই আমাদের সুবিধা থাকবে। কারণ রাতের খেলা নির্ভর করে অনেকটা টসের ওপরে। টস যারা জেতে, তাদের সুবিধা বেশি থাকবে। অবশ্যই কালকের ম্যাচটা আমরা ভালো খেলার চেষ্টা করবো।’
শ্রীলঙ্কার সহকারী কোচ নাভিদ নওয়াজ বলেছেন, ‘একটি বিষয়ে আমি নিশ্চিত যে, শিশির সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। সুতরাং, এটা উভয় দলের জন্য সমান সুযোগের। আমাদের উইকেট দেখতে হবে এবং আগে বোলিং না ব্যাটিং নিলে সুবিধা হবে, সেটি দেখবো। অন্য সব বিষয়ও দুই দলের জন্য সমান হবে, কারণ এটি দিনের খেলা।’
অবশ্য দুই দলেই অস্বস্তি জুড়ে বসেছে। গরমের কারণে হ্যামস্ট্রিং চোটে ছিটকে গেছেন বাংলাদেশের পেসার তানজিম হাসান সাকিব। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের পেছনে তার বোলিংয়ের ভূমিকা ছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য বেশ খরুচে ছিলেন। এই পেসারকে পাওয়া যাচ্ছে না লঙ্কানদের বিপক্ষে অলিখিত ফাইনালে। বাংলাদেশের মতো একই অবস্থা লঙ্কান শিবিরেও। পেশির চোটে দিলশান মাদাশাঙ্কা ছিটকে গেছেন লম্বা সময়ের জন্য। তার বলেই লিটন দুইবার রানের খাতা না খুলেই আউট হয়েছেন। দুই দলই তাদের পেসারকে হারিয়ে এখানেও সহঅবস্থানে।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে খেলতে নামার আগে বাংলাদেশের একাদশে বেশ কিছু পরিবর্তন নিশ্চিত। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে তৃতীয় ম্যাচের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বিসিবি। তার বদলে দলে জাকের আলী অনিক। তবে জাকেরের খেলার সম্ভাবনা খুব কম। সোমবারের ম্যাচে সৌম্য সরকারের সঙ্গে ওপেনিংয়ে দেখা যেতে পারে এনামুল হক বিজয়কে। দুজনই আজকে পাশাপাশি নেটে অনুশীলন করেছেন। ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প এনামুলকে পাখির চোখে পরখ করেছেন। অনুশীলনে দেখে বোঝাই যাচ্ছে, চলতি সিরিজে প্রথমবারের মতো একাদশে সুযোগ পেতে যাচ্ছেন এনামুল।
এদিকে আরও দুটি পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের একাদশে। তানজিম সাকিব ছিটকে গেছেন ইনজুরিতে। রবিবার অনুশীলনে এসেছিলেন। বেশ কয়েকটা বলও করেছিলেন, তারপরই বুঝতে পারেন টান লাগে তার ডান পায়ে। এই অবস্থায় তৃতীয় ম্যাচের আগে তাকে বাদ দিয়ে ঢাকা থেকে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছে হাসান মাহমুদকে। যদিও তার খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণই। আগের দুই ম্যাচে সাইড বেঞ্চে বসে থাকা মোস্তাফিজুর রহমানকে একাদশে দেখার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। রবিবারের অনুশীলন লম্বা সময় ধরে বোলিং করেছেন তিনি। এর বাইরে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের বদলে দেখা যেতে পারে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে। সিলেটে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দারুণ বোলিংয়ের পাশাপাশি এক ম্যাচে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই রিশাদ একাদশে আসলে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপও লম্বা হবে। বাংলাদশে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছে, তবে ওয়ানডে সিরিজ কোনোভাবেই হারতে চায় না।
সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ বলেছেন, ‘আমরা তো অবশ্যই শতভাগ আশাবাদী। ইনশাআল্লাহ আমরা ম্যাচটা জিতব এবং সিরিজটাও।’
বাংলাদেশের মতো শ্রীলঙ্কার একাদশেও বদল আসছে নিশ্চিত। ছন্দে থাকা বাঁহাতি পেসার মাদুশাঙ্কা ছিটকে যাওয়ায় চামিকা করুণারত্নেকে খেলাতে পারে তারা। যদিও চামিকা কেবল পেস অলরাউন্ডার। অনেকটা ব্যাটিং নির্ভর অলরাউন্ডার তিনি। তার অন্তর্ভুক্তিতে দলে ব্যাটিং শক্তি বাড়লেও কমবে বোলিংয়ের জোর।
সোমবার ২২ গজে নামার আগে দুই দলেই অনেক কিছুইতেই সমতা। তবে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটিতে যারা এগিয়ে থাকতে পারবে, তাদের হাতেই উঠতে ট্রফি। এখন দেখার অপেক্ষায় বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারের আক্ষেপ ওয়ানডেতে দূর করতে পারে কিনা। নাকি টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডে সিরিজের ট্রফিটা বগলদাবা করবে শ্রীলঙ্কা! সোমবার সন্ধ্যায় পাওয়া যাবে সেই প্রশ্নের উত্তর!