আগেই টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় নিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এবার বিদায় নিয়েছেন ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে। বুধবার রাতে ফেসবুকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের ঘোষণা দেন অভিজ্ঞ এই তারকা।
মাহমুদউল্লাহ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সকল প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহর জন্য। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আমার সকল সতীর্থ, কোচ এবং বিশেষ করে আমার ভক্তদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা আমাকে সবসময় সমর্থন করেছেন।’
বাংলাদেশের অনেক জয়ের নায়ক মাহমুদউল্লাহ। ২০১৫ সালে অ্যাডিলেডে ওয়ানডে বিশ্বকাপে তার সেঞ্চুরিতে ভর করেই ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন ১২৮ রানের ইনিংষ। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশ ম্যাচটি জিততে পারেনি। ২০১৭ সালে কার্ডিফে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারাতে সাকিবের ১১৪ রান ছাড়াও মাহমুদউল্লাহর ১০২ রানের ইনিংস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পেয়েছেন আরও একটি সেঞ্চুরি। সবমিলিয়ে আইসিসি ইভেন্টে তার সেঞ্চুরির সংখ্যা চারটি। বাংলাদেশের অনেক জয়ের নায়ক মাহমুদউল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিসিবি এক বিবৃতি দিয়েছে।
মাহমুদউল্লাহর এসব অবদানের কথা স্মরণ করে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে পারফর্ম করার জন্য মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশ ক্রিকেটে একটা ভিন্ন মর্যাদা অর্জন করেছিল। ব্যাট অথবা বল হাতে, সবচেয়ে দরকারের মুহূর্তে সে পারফর্ম করেছে। চ্যালেঞ্জিং সময়ে তার শান্ত স্বভাব ও মাঠের নেতৃত্ব তাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সম্মানিত ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।’
এরপর তাকে ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানিয়ে ফারুক বলেছেন, ‘এতগুলো বছর দল ও সেবার জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তার ভবিষ্যতের জন্য রইলো শুভকামনা। এ বিষয়েও আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, তার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করে যাবে।’
২০০৭ সালে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল মাহমুদউল্লাহর। লম্বা ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকবার বাদ পড়লেও দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন তিনি। সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছিলেন। ওই ম্যাচে ৪ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ওই ব্যর্থতার পর তাকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছিল। সেই সমালোচনা সামলে নিতে পারেননি তিনি।
তিন দিন আগে কেন্দ্রীয় চুক্তি ঘোষণার আগে নিজের নামও প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। তখনই বোঝা যাচ্ছিল, যে কোনও সময় অবসরের ঘোষণা দিতে পারেন। অবশেষে বুধবার রাতে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। মাহমুদউল্লাহ লম্বা ক্যারিয়ারের ২৩৯টি ম্যাচ খেলেছেন। ৩৬.৪৬ গড়ে ৪ সেঞ্চুরি ও ৩২ হাফ সেঞ্চুরিতে তার রান ৫ হাজার ৬৮৯। বল হাতে নিয়েছেন ৮২ উইকেট।
মাহমুদউল্লাহ ২০২৪ সালের অক্টোবরে কুড়ি ওভারের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। এই ফরম্যাটে ১৪১ ম্যাচে ২৩.৫০ গড়ে ২ হাজার ৪৪৪ রান করেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ১১৭.৩৮। বল হাতে নিয়েছেন ৪১ উইকেট।
টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন আরও আগে। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে হুট করেই অবসরের ঘোষণা দেন। এই ফরম্যাটে ৫০ ম্যাচে ৫ সেঞ্চুরি ও ১৬ হাফ সেঞ্চুরিতে তার সংগ্রহ ২ হাজার ৯১৪ রান। টেস্টে তার শিকার ৪৩ উইকেট।