২০১৮ বিশ্বকাপের বছর। ফুটবল মহাযজ্ঞের উত্তেজনার আঁচ এখনই পেতে শুরু করেছে বিশ্ব। ফুটবল উৎসবে মেতে ওঠার আগে অংশ নিতে যাওয়া দলগুলোকে নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই ভক্ত-সমর্থকদের। এবারও অংশ নিচ্ছে ৩২ দল। তাদের শক্তি-দুর্বলতা, স্কোয়াড, প্রতিপক্ষ নিয়ে সাজানো আমাদের এই আয়োজনের শেষ পর্বে থাকছে ‘এইচ’ গ্রুপের পোল্যান্ড-
২০১৬ সালের ইউরো কেটেছিল তাদের স্বপ্নের মতো। ফ্রান্সের আসরে পোল্যান্ড খেলেছিল কোয়ার্টার ফাইনাল। প্রায় এক দশক পর ফুটবলের বড় কোনও প্রতিযোগিতায় এতটা পথ পাড়ি দেওয়ার পর পোলিশদের বিশ্বকাপে দেখাটাও প্রত্যাশা ছিল। ইউরোপিয়ান বাছাইয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সেই প্রত্যাশা পূরণও করেছে রবার্ত লেভানদোস্কিরা। ‘ই’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে দুই আসর পর আবার বিশ্বকাপে ফিরেছে পোল্যান্ড।
রাশিয়ার মহাযজ্ঞে জায়গা পাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রবার্ত লেভানদোস্কি। বায়ার্ন মিউনিখ স্ট্রাইকার পোল্যান্ডকে বিশ্বকাপে নিতে লক্ষ্যভেদ করেছেন ১৬বার। মূল আসরেও তার দিকেই তাকিয়ে থাকবে পোলিশরা। তাদের প্রত্যাশা, অন্তত ৩২ বছর পর পোল্যান্ডকে নকআউট পর্বে দেখা। ১৯৭৪ ও ১৯৮২ বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া ‘দ্য ঈগলস’ ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর আর পেরোতে পারেনি গ্রুপ পর্বের বাধা।
এবার বাধাটা টপকানো কঠিন হওয়ার কথা নয়। ‘এইচ’ গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া, সেনেগাল ও জাপান। ২০১৬ সালের ইউরোর পারফরম্যান্স ধরে রাখতে না পারলেও লেভানদোস্কির দলকে নিয়ে শেষ ষোলোর বাজি ধরাই যায়। তবে নকআউট পর্বে দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা। শেষ ষোলোর বাধা পেরোতে পারলে পোলিশদের পড়তে হবে বেলজিয়াম কিংবা ইংল্যান্ডের সামনে।
একনজরে:
অধিনায়ক: রবার্ত লেভানদোস্কি
কোচ: অ্যাদাম নাভাওকা
ডাকনাম: দ্য ঈগলস
র্যাংকিং: ৮
বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে: সাতবার- ১৯৩৮, ১৯৭৪, ১৯৭৮, ১৯৮২, ১৯৮৬, ২০০২, ২০০৬
বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য: তৃতীয় স্থান- ১৯৭৪ ও ১৯৮২
ফিরে দেখা বাছাই পর্ব:
ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বাছাই পর্ব সহজেই পেরিয়ে গেছে পোল্যান্ড। ডেনমার্ককে পেছনে রেখে সরাসরি পায় তারা বিশ্বকাপের টিকিট। ‘ই’ গ্রুপে ১০ ম্যাচের আটটিতেই জয় পায় তারা ডেনমার্ক, মন্টেনেগ্রো, রোমানিয়া, আর্মেনিয়া ও কাজাখস্তানের বিপক্ষে। যদিও ডেনমার্কের বিপক্ষে কোপেনহেগেনের ম্যাচে ৪-০ গোলের হারটা তাদের জন্য ছিল বড় ধাক্কা। বাছাই পর্বে পোল্যান্ড গোল করেছে ২৮টি, যার ১৬টিই এসেছে অধিনায়ক রবার্ত লেভানদোস্কির কাছ থেকে। বায়ার্ন মিউনিখ স্ট্রাইকার রোমানিয়া ও ডেনমার্কের বিপক্ষে ঘরের মাঠে করেছিলেন হ্যাটট্রিক।
পোল্যান্ডের বিশ্বকাপ গ্রুপ:
পোল্যান্ড রয়েছে ‘এইচ’ গ্রুপে, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া, জাপান ও সেনেগাল।
পোল্যান্ডের বিশ্বকাপ সূচি:
১৯ জুন বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে পোল্যান্ড। প্রথম ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ সেনেগাল। ২৪ জুন দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে কলম্বিয়ার। আর ২৮ জুন গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নামবে জাপানের বিপক্ষে।
১৯ জুন: সেনেগাল
২৪ জুন: কলম্বিয়া
২৮ জুন: জাপান
নজরে থাকবেন:
রবার্ত লেভানদোস্কি: পোল্যান্ডের সবচেয়ে শক্তির জায়গা রবার্ত লেভানদোস্কির ফর্ম। ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বাছাই পর্বের সর্বোচ্চ গোলদাতা (১৬) হয়ে নামতে যাচ্ছেন তিনি রাশিয়ার ফুটবল মহাযজ্ঞে। বুন্দেসলিগার এই মৌসুমেও সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন পোলিশ স্ট্রাইকার। ২০১০ সাল থেকে জার্মান লিগে খেলা লেভানদোস্কি এবার দিয়ে তৃতীয়বার হয়েছেন বুন্দেসলিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা। বায়ার্ন মিউনিখ স্ট্রাইকার ছাড়া পোল্যান্ড বড়ই বিবর্ণ, গত নভেম্বরে উরুগুয়ে ও মেক্সিকোর বিপক্ষে তাকে ছাড়া গোলই করতে পারেনি পোলিশরা। বিশ্বকাপে তাই তার জ্বলে ওঠাটা ভীষণ জরুরি।
শক্তি: আক্রমণভাগ
দুর্বলতা: মাঝমাঠে সমন্বয়ের অভাব
ভবিষ্যদ্বাণী: শেষ ষোলো
চূড়ান্ত স্কোয়াড:
গোলরক্ষক: বার্তোস বিয়াওকোস্কি, লুকাস ফাবিয়ানস্কি, ওইচেখ শেজনি; ডিফেন্ডার: ইয়ান বেদনারেক, বার্তোস বেরাশেনস্কি, থিয়াগো চোনেক, কামিল গ্লিক, আরতুর ইয়েনজেইচেক, মিখাল পাজদান, লুকাস পিসচেক; মিডফিল্ডার: ইয়াকুব ব্লাসচেকোস্কি, ইয়াচেক গোরালস্কি, কামিল গোরিস্কি, জেগোস ক্লিখোভিয়াক, সোয়াভোমির পেসকো, মাচেই রেবুস, পিয়তর জেলিনস্কি, রাফাও কুজাবা, কারোল লিনেত্তে; ফরোয়াড: দাভিদ কোভনাতস্কি, রবার্ত লেভানদোস্কি, আরকাদিউস মিলিক, লুকাস তেয়োদোরচিক।