আতলেতিকো মাদ্রিদের ‘টার্গেট’ ছিল একজনই—সাদিও মানে। লিভারপুলের প্রেসিং ফুটবলে আক্রমণে গতি বাড়ানোর কাজটি করে থাকেন এই ফরোয়ার্ড। হ্যাঁ, মোহামেদ সালাহ কিংবা রবের্তো ফিরমিনো আছেন, তবে মানেই লিভারপুলের প্রাণ।
পরিসংখ্যান বলছে তাকে ছাড়া খেলা প্রায় সব ম্যাচেই জয় পেতে ঘাম ঝরাতে হয়েছে অলরেডদের। তো মানের স্বাভাবিক খেলা নষ্ট করতে পারলে ভয়ংকর লিভারপুলের গতি যে কমানো যাবে, সেই পরিকল্পনা নিয়ে রণকৌশল সাজিয়েছিলেন ডিয়েগো সিমিওনি। আর এই ট্যাকটিকসে পুরোপুরি সফল আতলেতিকো কোচ। সেনেগালিজ ফরোয়ার্ডের ওপর চাপ প্রয়োগ করে লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপকে বাধ্য করেন তাকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নিতে।
মানের সামনে ঢাল হিসেবে আরও ছিল ওয়ান্দা মেত্রোপোলিতানোর ৬৮ হাজার দর্শক। মানের পায়ে যতবার বল গেছে, গ্যালারিতে উঠেছে সমুদ্রের গর্জন। আর সেখান থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস নিয়ে চুম্বক হয়ে লিভারপুল ফরোয়ার্ডের সঙ্গে লেগে ছিলেন রাইটব্যাক শিমে ভ্রাসাইকো। সিমিওনির নির্দেশনা মেনে মানের কাছ থেকে ফাউল আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা করে গেছে তিনি। এই পরিকল্পনায় ‘দশে দশ’ আতলেতিকো। গ্যালারির সমুদ্র গর্জন ও স্বাগতিক খেলোয়াড়দের একসঙ্গে করা কড়া আপিলে প্রথমার্ধেই হলুদ কার্ড দেখতে হয় মানেকে।
ক্লপের মনে আশঙ্কার মেঘ জমে। ‘ফাঁদে’ ফেলে কার্ড আদায় করে নেওয়ার কৌশল পড়ে ফেলার সঙ্গে জার্মান কোচ এটাও আন্দাজ করতে পারেন, মানেকে উঠিয়ে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে তাকে। ক্লপের বিকল্প রাস্তাও ছিল না। দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের শঙ্কায় দ্বিতীয়ার্ধে আর মাঠেই নামাননি সেনেগাল তারকাকে। তার জায়গায় নামানো হয় ডিভোক অরিগিকে। কিন্তু তাকে দিয়ে কী আর মানের জায়গা পূরণ হয়!
হয়ওনি। গতি কমে আসে লিভারপুলের খেলায়। অন্যদিকে শুরুতেই এগিয়ে যাওয়ার সুবিধা ধরে রেখে আরও জমাট হয় আতলেতিকোর রক্ষণ। মানে মাঠে থাকা অবস্থাতেও আক্রমণে সুবিধা করতে পারেনি তারা। প্রথমার্ধে গোলমুখে একবারও শট নিতে না পারার দৃশ্য লিভারপুল শেষ কবে দেখেছে, নিজেরাও হয়তো ভুলে গেছে!
দারুণ ট্যাকটিকসে ম্যাচের বাকি সময়টা চ্যাম্পিয়নস লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের আটকে রাখতে পেরেছে আতলেতিকো। এজন্য ফুটবল বিশ্বের কাছে প্রশংসা পেতে পারেন সিমিওনি। তবে ক্লপ এই কৌশলের ঘোর বিরোধী। তা হওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয়? দলের সেরা খেলোয়াড়কে এভাবে মাঠ থেকে বের করে দেওয়ার কৌশলে তিনি বিরক্ত তো হবেনই।
মানেকে তুলে নেওয়ার ব্যাখ্যায় লিভারপুল কোচ বলেছেন, ‘অবশ্যই এটি (কোনও খেলোয়াড়ের ওপর চাপ প্রয়োগ) ফুটবলের অংশ, যেটি আমার মোটেও পছন্দ নয়। আজকের খেলায় তাদের পরিকল্পনা ছিল দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দিয়ে সাদিও মানেকে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া। আমি ভয়ে ছিলাম। চাইনি এই ধরনের কোনও পরিস্থিতি আসুক, তাই ওকে উঠিয়ে নিই।’
ক্লপের হিসাবও পরিষ্কার। মাদ্রিদে লাল কার্ড দেখলে ঘরের মাঠের দ্বিতীয় লেগে পাওয়া যাবে না মানেকে। এর চেয়ে বরং এখানে ফল যা-ই হোক, সেনেগাল ফরোয়ার্ডের সেরাটা নিয়ে ঘরের মাঠের দ্বিতীয় লেগে কাজ সম্পন্ন করা। প্রথমার্ধেই মাঠ ছাড়া মানেও নিশ্চয় মাদ্রিদের হিসাব অ্যানফিল্ডে কড়ায়-গন্ডায় বুঝিয়ে দেওয়ার অপেক্ষায়।