X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে যাওয়া নারী ফুটবল বাফুফের বড় পুরস্কার

তানজীম আহমেদ
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:২৯আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৪১

বাংলাদেশের মেয়েরা এখন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে দেশের ফুটবলে এনে দিয়েছে নতুন প্রাপ্তি। সাবিনা-সানজিদা-কৃষ্ণারা আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়েছেন দেশের ফুটবলপ্রেমীদের। কবে এমন উৎসবে মেতেছে বাংলাদেশ, খুঁজে বের করা কঠিন। আর এই সবকিছুর নেপথ্যে কাজ করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) অক্লান্ত পরিশ্রম ও ইচ্ছাশক্তি।

প্রায় দেড় যুগ আগে, ২০০৪-২০০৫ সালের দিকে মৌলবাদীদের তোপের মুখে মেয়েদের ফুটবল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অনেক চেষ্টার পর ঢাকার কমলাপুরে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছিল মেয়েদের একটি টুর্নামেন্ট। যদিও তা বেশিদূর গড়ায়নি। মাঝে কয়েক বছর ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকার পর বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের অধীনে নতুন করে শুরু হয় মেয়েদের ফুটবলের যাত্রা। একটু একটু করে দেখতে থাকে আলোর রেখা। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নারী ফুটবলের জোয়ারের সঙ্গে এসএ গেমস কিংবা সাফ ফুটবলে নিয়মিত অংশ নিতে থাকে বাংলাদেশ দল।

সাফজয়ী অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের সঙ্গে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ছবি: বাফুফে যদিও তখন মেয়েদের নিয়ে সারা বছর পরিচর্যা করার সুযোগ কম ছিল। অর্থাভাবে অনেক সময় করা যায়নি। এমনকি নিজেদের পকেট থেকে দিনের খরচ চালানোর কথা তো প্রায়ই বলে থাকেন নারী উইং কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। তারপরও যখন যেই টুর্নামেন্ট হয়েছে, আবাসিক ক্যাম্প হয়েছে বিকেএসপি, মহিলা ক্রীড়া সংস্থা কিংবা অন্য জায়গায়।

কিরণ বাংলা ট্রিবিউনকে সেসব দিনের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে, ‘শুরুর দিনগুলোতে আমি ও সভাপতি (কাজী সালাউদ্দিন) নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে মেয়েদের খরচ বহন করতাম। দিনে শুধু খাবারের জন্য ব্যয় হতো ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। দিনের পর দিন আমরা দিয়ে গেছি। এখন আমরা সেই ফল পেয়েছি। তাই অনেক খুশি লাগছে।’

বাফুফে যখন মেয়েদের খেলা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় হাত বাড়ায়; একটু অন্যভাবে। ২০১১ সালে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা গোল্ডকাপ ফুটবল করে তৃণমূলে নারী ফুটবলকে বাধ্যতামূলক করে দেয়। প্রায় ৬৮ হাজার স্কুলের মেয়েদের অংশগ্রহণে খেলোয়াড়ের আর অভাব হয়নি।

ছাদখোলা বাসে শিরোপা উদযাপনের নেপথ্যে ছিল সানজিদা আক্তারের (মাঝে) ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন ২০১৬ সালের অক্টোবরে বঙ্গমাতা, জেএফএ কাপ ও জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে খেলোয়াড় বাছাই করে দীর্ঘমেয়াদে আবাসিক ক্যাম্প শুরু করে বাফুফে। বাফুফে ভবনের চতুর্থ তলাটি শুধু মেয়েদের জন্য ব্যবহৃত হতে থাকে।

সেখানে অনুশীলনের সঙ্গে পড়াশোনা (স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন বাফুফের সহায়তায়) চলতে থাকে মেয়েদের। দীর্ঘমেয়াদে চুক্তিও হয়ে যায়। ফলে মেয়েরা মাসিক বেতনের মধ্যেও চলে আসে, স্থানীয় একটি ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায়। শুরুতে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা থাকলেও ক্ষেত্রবিশেষে ২০ হাজার টাকাও হয়েছে বেতন। এছাড়া তাদের পরিবারও পাচ্ছে ‍বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা।

আর মাঠের ফুটবলের কথা ধরলে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের নেতৃত্বে রয়েছে একঝাঁক কোচিং স্টাফ। তাদের সঙ্গে একপর্যায়ে যোগ দেন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি। মেয়েদের কোচিংয়ে যোগ হয় নতুন মাত্রা। দেশ-বিদেশে একের পর এক ম্যাচ খেলে ঋদ্ধ হতে থাকেন সবাই। পরবর্তী সময়ে এএফসি ও সাফের বয়সভিত্তিক আসরগুলোতে একে একে সাফল্যও আসতে শুরু করে।

এমন দিনের অপেক্ষায় ছিলেন সবাই। সফল কোচ ছোটন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমাদের মেয়েরা শুরুতে পাস দিতে পারতো না, ফিটনেস নিয়ে সমস্যা ছিল। কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার পর ওরা আজ সর্বোচ্চ স্তরে সাফল্য পেয়েছে। আমি আসলেই আনন্দিত।’

বাংলাদেশের মেয়েরাও যে সাফল্য পেতে পারে, সেটি প্রমাণ করেছেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন আজ ফুটবলের কারণেই মেয়েরা পরিবারকে সহায়তা করতে পারছেন। যতবার সাফল্য পেয়েছেন, ততবারই ক্রীড়া অন্তপ্রাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ডেকে সংবর্ধনার পাশাপাশি অর্থ পুরস্কার দিয়েছেন। তাছাড়া ঘরোয়া লিগ খেলে অনেকেই মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে আলাদা মর্যাদা তৈরি হয়েছে। আর এবার তো সাফ জিতে আগের সবকিছুকেই পেছনে ফেলে দিয়েছেন সাবিনা-সানজিদারা।

দেশে ফিরে তারা পেয়েছেন রাজসিক সংবর্ধনা। বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবনে পৌঁছান ছাদখোলা বাসে। পথের দুই ধারে হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসায় হয়েছেন সিক্ত। এই মেয়েদের নিয়ে বাফুফে আরও বড় স্বপ্ন দেখছে। দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন তো বলেই দিয়েছেন, ‘মেয়েদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যা যা প্রয়োজন সবই করা হবে।’

সাফল্যের চূড়ায় উঠে এখন চারদিকে ফুলেল সংবর্ধনা পাচ্ছেন সাবিনা-সানজিদারা। পাশাপাশি কোটি টাকা ওপরে অর্থ পুরস্কারের হাতছানি! তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে তাদের বাড়ি-ঘরে সংস্কারের ছোঁয়া লেগেছে।

বাংলাদেশের নারী ফুটবলে প্রথম সাফ জয়, এমন উল্লাস তো হবেই! ছবি: বাফুফে ফুটবলের শক্তি এতটাই যে একটা এলাকার চিত্রই পাল্টে দিয়েছে! ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার কলসিন্দুর গ্রাম নারী ফুটবলের কারণে আজ সবার পরিচিত। লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। হবেই বা না কেন, এই এলাকা থেকেই জাতীয় নারী দলে খেলছেন ৮ জন খেলোয়াড়!

তাদের সঙ্গে দেশের অন্য এলাকা থেকে উঠে এসে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লাল-সবুজ দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন সাবিনা-সানজিদারা। এনে দিচ্ছেন আনন্দের উপলক্ষ। সামনের সেনানি তারা, আর নেপথ্যে কাজ করে চলেছে বাফুফে। তাই দেশের ফুটবল ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও মেয়েদের এই সাফল্যে নিশ্চিতভাবেই বাহবা প্রাপ্র্য বাফুফের!

/কেআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কোরআন পোড়ানোর অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
কোরআন পোড়ানোর অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
ইসরায়েল থেকে বিমান আসা ও কেএনএফ নিয়ে যা বললো বিএনপি
স্থায়ী কমিটির প্রেস বিজ্ঞপ্তিইসরায়েল থেকে বিমান আসা ও কেএনএফ নিয়ে যা বললো বিএনপি
‘বিএনপি বিরোধিতা করলেও তাদের অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে’
‘বিএনপি বিরোধিতা করলেও তাদের অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে’
সর্বাধিক পঠিত
কিছু আরব দেশ কেন ইসরায়েলকে সাহায্য করছে?
কিছু আরব দেশ কেন ইসরায়েলকে সাহায্য করছে?
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান