উয়েফা নেশন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলো। দারুণ প্রত্যাবর্তনের দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে পর্তুগাল ও ফ্রান্স। প্রথম লেগে হেরে গেলেও রবিবার ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতেছে। অতিরিক্ত সময়ের গোলে পর্তুগিজরা এবং পেনাল্টি শুটআউটে ফরাসিরা জয়ের দেখা পেয়েছে। তাতে দুই দলই উঠে গেছে সেমিফাইনালে। অন্যদিকে জার্মানি তিন গোলের লিড নিয়েও তা ধরে রাখতে পারেনি। অবশ্য দ্বিতীয় লেগ ড্র করলেও সেরা চারে জায়গা করে নিয়েছে তারা। প্রথম লেগের মতো স্পেন ও নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় লেগও হয়েছে ড্র। পেনাল্টি শুটআউটে বিজয়ী নির্ধারণ হয়েছে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন স্পেন শেষ চারে।
বেঞ্চ থেকে উঠে আসা ফ্রান্সিস্কো ত্রিনকাও জোড়া গোল করেন। জালের দেখা পেয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও। রবিবার দ্বিতীয় লেগে অতিরিক্ত সময় শেষে পর্তুগাল ৫-২ গোলে হারিয়েছে ডেনমার্ককে। ৫-৩ গোলের অগ্রগামিতায় তারা নেশন্স লিগের সেমিফাইনালে, যেখানে তারা মুখোমুখি হবে জার্মানির।
বৃহস্পতিবার কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত প্রথম লেগে রাসমুস হয়লুন্দের গোলে ১-০ তে জিতেছিল ডেনিসরা। সন্তান জন্মের কারণে ছিলেন না ফুলব্যাক জোয়াকিম মায়েহলে। তার স্থলাভিষিক্ত প্যাট্রিক ডর্গু শুরুতেই পর্তুগালকে উপহার দেয়, রোনালদোকে তৃতীয় মিনিটে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় স্বাগতিকরা।
রোনালদো নিজেই গোল করার দায়িত্ব নেন। কিন্তু ডেনমার্ক কিপার ক্যাস্পার শুমেইখেল এই স্নায়ুযুদ্ধে জিতে যান। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পর্তুগাল অধিনায়ককে প্রত্যাখ্যান করেন।
রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক তারকা ১৭তম মিনিটে প্রায়শ্চিত্ত করেই ফেলেছিলেন। দূরের পোস্টে নুনো মেন্দেসের বাড়ানো বলে হেড করেছিলেন রোনালদো। কিন্তু আবারও শুমেইখেল তাকে বাধা দেন।
৩৮তম মিনিটে পর্তুগাল এই ম্যাচে এগিয়ে যায়। রোনালদোর কারণে পাওয়া কর্নারে তারা জাল কাঁপায় ড্যানিশ ডিফেন্ডার জোয়াকিম অ্যান্ডারসনের আত্মঘাতী শটে।
অবশ্য ৫৬তম মিনিটে রাসমুস ক্রিস্টেনসেন কর্নার থেকে হেড করে ডেনমার্ককে সমতায় ফেরান। তারপর আড়াআড়ি শটে স্বাগতিকদের আরেকবার লিড এনে দেন রোনালদো। ৭৬তম মিনিটে ক্রিস্টিয়ান এরিকেসন আবারও ডেনমার্ককে সমতায় ফেরান।
এরপর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেন ত্রিনকাও। ৮৬তম মিনিটে তার গোলে দুই লেগ মিলে ৩-৩ এ সমতা আসে। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ৯১তম মিনিটে ত্রিনকাও আবার জাল কাঁপিয়ে পর্তুগালকে চালকের আসনে বসান। রক্ষণে দারুণ পারফর্ম করা ডেনমার্ক এই গোল খেয়ে ব্যাকফুটে চলে যায়। গনসালো রামোস পর্তুগালের পঞ্চম গোল করে ডেনিসদের বিদায় নিশ্চিত করেন।
এদিকে ফ্রান্স দুই গোলে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় লেগ খেলতে নেমে ঘুরে দাঁড়ালো। কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে তারা ২-০ গোলে জেতে। তারপর পেনাল্টি শুটআউটে ক্রোয়েশিয়াকে হারালো ৫-৪ গোলে।
স্তাদে দে ফ্রান্সে উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে স্পট কিক থেকে জয়সূচক গোল করেন ডায়োট উপমেকানো। ফ্রান্স কিপার মাইক মাইগনান শুটআউটে দুটি সেভে নায়কের ভূমিকা পালন করেন।
মাইকেল অলিসে গোলমুখ খোলেন। তারপর নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট বাকি থাকতে উসমান দেম্বেলে গোল করলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। দুই লেগ মিলে ২-২ এ সমতা ছিল। বাড়তি ৩০ মিনিটেও স্কোর পরিবর্তন না হলে টাইব্রেকারে নির্ধারণ হয় বিজয়ী।
ফ্রান্স সব মিলিয়ে ২২টি সুযোগ তৈরি করেছিল। কিন্তু ক্রোয়েশিয়া ১২০ মিনিটে একটি শটও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি। সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেন।
ঘরের মাঠে স্পেন ৫-৪ গোলে পেনাল্টি শুটআউটে জিতে নেদারল্যান্ডসকে বিদায় করেছে। রবিবার দ্বিতীয় লেগের খেলা ৩-৩ গোলে শেষ হয়। দুই লেগ মিলিয়ে স্কোর দাঁড়ায় ৩-৩।
দুই দলই তাদের চতুর্থ পেনাল্টি মিস করে। ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেয় ষষ্ঠ শট, যখন নেদারল্যান্ডসের ডনিয়েল মালেনকে রুখে দেন স্পেন কিপার উনাই সিমন। পেদ্রির শট জালে জড়ালে বিজয় নিশ্চিত হয় স্প্যানিশদের।
স্বাগতিকরা এদিন শুরুতেই লিড নেয়। জ্য পল ফন হেকে বক্সের মধ্যে ফেলে দেন মিকেল অয়ারজাবালকে। তিনিই অষ্টম মিনিটে ঠান্ডা মাথায় পেনাল্টি থেকে গোলমুখ খোলেন।
পরিস্থিতি ঘুরে যায় দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে। স্পেনের রবিন লু নরমান্দে ফাউল করেন মেম্ফিস ডিপেকে। পেনাল্টি আদায় করে ডাচদের সমতায় ফেরান তিনি নিজেই।
৬৭তম মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে স্পেনকে লিড এনে দেন অয়ারজাবাল। নেদারল্যান্ডস ১২ মিনিট পর ইয়ান মাতসেনের শক্তিশালী স্ট্রাইকে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নেয়।
অতিরিক্ত সময়ের ১৩ মিনিটে স্পেন আবার লিড নেয়। লামিনে ইয়ামাল বাঁ পায়ের শটে জাল কাঁপান। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের চতুর্থ মিনিটে জাভি সিমন্স স্পেন কিপার সিমনের ফাউলের শিকার হয়ে পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরান। তাতে পেনাল্টি শুটআউটে যায় ম্যাচ।
জার্মানি তিন গোলের লিড নিয়েও ইতালি দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় লেগ ৩-৩ গোলে ড্র করে। তবে প্রথম লেগ ২-১ গোলে জেতায় ৫-৪ গোলের অগ্রগামিতায় স্নায়ুচাপ উতরে সেমিফাইনালে উঠেছে জার্মানরা।
এক দশকেরও বেশি সময় পর প্রথমার্ধে জার্মানরা তাদের সেরা খেলা খেলেছে। গোলের জন্য এই সময়েই তারা শট নেয় ১৬টি। ৩০তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোলমুখ খোলেন জশুয়া কিমিখ। ছয় মিনিট পর কর্নার থেকে তারই ভাসানো বলে জাল কাঁপান আনমার্কড জামাল মুসিয়ালা। হাফটাইমের আগে টিম ক্লেইনডিয়েন্সট তৃতীয় গোল করেন।
জার্মানদের ভুলে ইতালি ঘুরে দাঁড়ায়। বিরতির পর ম্যাচ শুরু হওয়ার চতুর্থ মিনিটে মোয়াসে কিন ব্যবধান কমান। এই অর্ধে নিজেদের ছায়া হয়ে ছিল স্বাগতিকরা। তাতে ৬৯ মিনিটে আরেক গোল আদায় করে ইতালি। ডিফেন্ডার জোনাথন তাহকে পরাস্ত করে স্কোর ৩-২ করেন কিন।
স্টপেজ টাইমের পেনাল্টিতে জিয়াকোমো রাসপাদোরির গোলে ইতালি সমতা ফেরায়। তবে দুই লেগ মিলিয়ে সমতা ফেরাতে প্রয়োজনীয় আরেকটি গোল পায়নি আজ্জুরিররা। ম্যাচটি জিতে জার্মানি পর্তুগালের সঙ্গে সেমিফাইনালের লড়াই নিশ্চিত করে।
এদিকে প্রতিযোগিতার অন্য ম্যাচের দ্বিতীয় লেগে জর্জিয়া ৬-১ গোলে হারিয়েছে আর্মেনিয়াকে। তাদের অগ্রগামিতা ৯-১ গোলের। ৩-০ গোলে হাঙ্গেরির মাঠে জিতেছে তুরস্ক। ৬-১ গোলের অগ্রগামিতা তাদের। আইসল্যান্ডের মাঠে ৩-১ গোলে জিতেছে কসোভো, দুই লেগে তাদের অগ্রগামিতায় ৫-২ গোলের। ১-০ গোলে প্রথম লেগ হারা গ্রিস স্কটল্যান্ডের মাঠে ৩-০ গোলে জিতেছে। দুই লেগে তারা ৩-১ গোলের অগ্রগামিতায় সেমিফাইনালে। সার্বিয়া ২-০ গোলে জিতেছে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে। ৩-১ গোলের অগ্রগামিতা তাদের। প্রথম লেগে গোলশূন্য স্কোর করার পর স্লোভেনিয়া অতিরিক্ত সময়ের খেলায় দ্বিতীয় লেগ জিতেছে ১-০ গোলে। লুকাকুর শেষ দিকের জোড়া গোলে বেলজিয়াম ৩-০ গোলে হারিয়েছে ইউক্রেনকে। দুই রেগে তারা ৪-৩ গোলের অগ্রগামিতায় লিগ এ-র জায়গা ধরে রাখলো।