এমিরেটস স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ১-০ গোলে হারলেও প্যারিসে জাদুকরী পারফরম্যান্স দেখাতে চেয়েছিল আর্সেনাল। শুরুতে কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস তারা দিয়েছিল। কিন্তু পারেনি। বরং পুরো মাঠজুড়ে দাপট দেখিয়ে দ্বিতীয় লেগেও জিতেছে পিএসজি। বুধবার পার্ক দে প্রিন্সেসে ২-১ গোলে আর্সেনালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা। ৩-১ গোলের অগ্রগামিতায় ইন্টার মিলানের সঙ্গে শিরোপার লড়াই নিশ্চিত করেছে পিএসজি।
শুরুর দিকে কয়েকবার পিএসজির বক্সে ঢুকে আক্রমণ করতে দেখা গেছে আর্সেনালকে। তৃতীয় মিনিটে ডানদিক থেকে টিম্বার বল পাঠান। বক্সের মধ্যে লাফিয়ে হেড করেন ডেকলান রাইস। কিন্তু তার হেড বাঁ পোস্টের পাশ দিয়ে মাঠের বাইরে যায়।
দুই মিনিট পর আর্সেনাল গোল করার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল। পার্টির লম্বা থ্রোয়ে বল পান মার্তিনেল্লি। তার শট সামনাসামনি দাঁড়িয়ে রুখে দেন জিয়ানলুইজি দোনারুম্মা। পিএসজি কিপার দুই মিনিট পর আবারও রক্ষকের ভূমিকায়। কর্নার থেকে রাইসের শট বাঁ হাত দিয়ে ক্লিয়ার করে কর্নার বানান তিনি। পরের মুহূর্তেই পিএসজির ক্লিয়ারেন্সে বক্সের বাইরে বল পান মার্টিন ওডেগার্ড। তার শক্তিশালী নিচু শট বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে বাম হাতে রুখে দেন দোনারুম্মা।
১৭ মিনিটে প্রথম আক্রমণে পিএসজির সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় গোলপোস্ট। দুয়ের পাসে বাঁ পাশ থেকে কভারাতসখেলিয়ার শট ডেভিড রায়াকে পরাস্ত করলেও পোস্টে লাগে।
মাঝমাঠ থেকে ২৩তম মিনিটে পিএসজি আবার আক্রমণে যায়। বারকোলার সঙ্গে বল অদলবদল করে দুয়ে লক্ষ্যে শট নেন। তার দুর্বল শট সহজে ঠেকান গানার কিপার রায়া।
২৮ মিনিটে পিএসজি গোলমুখ খোলে। বাঁ দিকে ৩০ গজ দূরে কভারাতসখেলিয়াকে ফাউল করেন রাইস। ফ্রি কিক পায় প্যারিস ক্লাব। ভিতিনহার ক্রস বক্সে ঢোকে, আর্সেনাল বল বিপদমুক্ত করেছিল। কিন্তু বক্সের বাইরে বল পান ফ্যাবিয়ান রুইজ। তারপর বাঁ পায়ের দুর্দান্ত ভলিতে জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি।
তিন মিনিট পর পিএসজি আবারও গোলের সুযোগ পেয়েছিল। কভারাতসখেলিয়ার পাসে দুয়ে এবার রাইসের চাপে দুর্বল শট নিলে সহজে সেভ করেন রায়া।
বিরতির পর প্রথম পরিষ্কার সুযাগ তৈরি করেছিল আর্সেনাল। ৫৯তম মিনিটে বুকায়ো সাকার শট দোনারুম্মা পাঞ্চ করে মাঠের বাইরে পাঠান। ওই কর্নার থেকে পরের মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে ওডেগার্ডের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন পিএসজি কিপার। ৬৫ মিনিটে সাকার লক্ষ্যে নেওয়া শট দোনারুম্মা ডান পাশে ঝাঁপিয়ে আঙুলের ছোঁয়ায় লক্ষ্যভ্রষ্ট করেন।
পরের মিনিটে আচরাফ হাকিমির শট বক্সের মধ্যে লুইস স্কেলির হাতে লাগলে রেফারি ভিএআর যাচাই করে পেনাল্টি দেন। ৭০তম মিনিটে ভিতিনহার ডানদিকে নেওয়া দুর্বল শট সহজেই ঠেকিয়ে আর্সেনালকে লড়াইয়ে রাখেন রায়া।
পেনাল্টি মিসের প্রায়শ্চিত্ত করে তিন মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করে পিএসজি। চমৎকার শটে রায়াকে পরাস্ত করেন হাকিমি। দুই লেগ মিলে ৩-০ গোলে এগিয়ে থেকে ফাইনালের আরও কাছে চলে যায় ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা।
৭৭তম মিনিটে সাকা আর্সেনালের হয়ে একটি গোল শোধ দেন। মারকুইনহোসের কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়ার পর তার ক্রস প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে সাকার কাছে পড়ে। কিপারের চ্যালেঞ্জ সামলে নিয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি।
তিন মিনিট পর ফাঁকা জাল পেয়েও দ্বিতীয় গোল করতে পারেননি সাকা। গোলবারের ওপর দিয়ে বল মারেন। বাকি সময়ে গানাররা পিএসজির ডিফেন্স ভাঙতে পারেনি। ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মিশন থেকে ছিটকে যেতে হলো তাদের।
২০২০ সালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ফাইনালে হেরে স্বপ্ন ভেঙেছিল পিএসজির। পাঁচ বছর পর ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আরেকটি সুযোগ মিলেছে। এবার ইন্টার বাধা অতিক্রম করতে বদ্ধপরিকর লুইস এনরিকের শিষ্যরা।
আগামী ৩১ মে মিউনিখের অ্যালিয়েঞ্জ এরেনায় ফ্রান্স ও ইতালির দুই জায়ান্ট মুখোমুখি হবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে।