ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে পুরো বিকাল ছিল উৎসবের আমেজে পূর্ণ। পৃথিবীর ১৪ টি দেশ থেকে ৪৯ জন প্রবাসী খেলোয়াড় নিজেদের মধ্যে ট্রায়াল ম্যাচ খেলেছেন। সাধ্যমতো দেখিয়েছেন নিজেদের নৈপুণ্য। তিনদিনের শেষ বিকালটি ছিল অনেকটাই চূড়ান্ত পরীক্ষার মঞ্চ। বিচারকরা সেরাদের বাছাই করবেন। তার ডাকবেন লাল সবুজের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে।
ট্রায়ালের শেষ দিনে দুই গ্রুপে হয়েছে দুটি ম্যাচ। এরপর তাদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হলেও ফল নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। ‘বাফুফে নেক্সট গ্লোবাল স্টার’ নামে ট্রায়াল শুরুর দুই দিন ছিল ক্লোজ-ডোর। শেষ দিনে গণমাধ্যমকর্মী এবং গ্যালারিতে বসে সমর্থকদের সুযোগ করে দেওয়া হয় ম্যাচ দেখার। অনূর্ধ-১৯ ও ২৩ দুই বিভাগের ম্যাচে অনেকের পায়ের কারিকুরি মুগ্ধ করেছে হাজারখানেক দর্শকদের।
প্রথম ম্যাচটি হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিটোশোক চাকমাকে ঘিরে আলাদা উচ্ছ্বাসের ঢেউ ছিল। ব্রুকলিন এফসিতে খেলা সাদা চুলের এই উইঙ্গারের বল নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা, মাঝমাঠ থেকে বক্সে গতিময় পদচারণা সবাইকে মুগ্ধ করেছে। জালের দেখাও পেয়েছেন একবার। বাঁ দিক থেকে বক্সে ঢুকে গোলকিপারের পাশ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন গোলটি ছিল দেখার মতো। পরে তো লাল-সবুজের জার্সি গায়ে তোলার আগ্রহের কথা বলেছেন ইংরেজি-বাংলা মিশিয়ে, ‘ট্রায়াল ভালো হয়েছে। সব কিছুই ভালো লেগেছে, এই মাঠ, গ্যালারিতে আসা সমর্থক। আমি চাই, বাংলাদেশের হয়ে খেলতে। ট্রায়াল ভালো হয়েছে বলে আমি আশাবাদী।’
অনূর্ধ্ব-১৯ সবুজ দলে খেলেছেন আমির সামি। বার্সেলোনায় ট্রায়াল দিয়ে আসা যুক্তরাষ্ট্রের এই উইঙ্গার ঝলক দেখালেন মাঝেমধ্যে।
অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ম্যাচ নিয়েই আগ্রহটা ছিল বেশি। অনূর্ধ্ব-১৯-এর তুলনায় অনূর্ধ্ব-২৩ দলের খেলা গোছালো দেখা গেছে। ‘সবুজ’ দলের হয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সঞ্জয় করিম, ইংল্যান্ড প্রবাসী তোফায়েল তানিম আলো ছড়িয়েছেন। সঞ্জয় এর আগে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দল পুলিশ এফসিতে ট্রায়াল দিলেও টেকেননি।
‘নীল’ দলে আশিকুর রহমান, আমির খান, নাবিল নাসির, আরমান আইয়াজরা ঝলক দেখিয়েছেন। আরমান কয়েকটি শট নেন পোস্টে, মাঠ জুড়ে খেলার সামর্থ্যও দেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই স্ট্রাইকার। অ্যাথলেতিকো বাফোর্ড এফসির হয়ে এক ম্যাচে চার গোল করার গল্প শুনিয়ে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে তোলার স্বপ্নের কথাও জানালেন তিনি, ‘আমার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। আমি নানার জন্য বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চাই। আজ গোল করার খুব ইচ্ছা ছিল, কিন্তু পারিনি।’
ট্রায়ালের পর বাফুফে কাউকে কোনও ‘সবুজ সংকেত’ দেয়নি। সবার পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রবাসীদের ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ট্রায়াল শেষে সবাইকে সার্টিফিকেট দেওয়ার মাধ্যমে শেষ হয়েছে আয়োজন। তবে ট্রায়াল দেখতে আসা জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা দুয়োর শিকার হয়েছেন। কাবরেরা ডাগ আউট থেকে উঠছেন মাত্র। তখনই গ্যালারিতে থাকা কিছু সমর্থক ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিয়েছেন। সময়ের সঙ্গে যা আরও তীব্র হয়েছে।
এছাড়া শেষ দিকে এসে গ্যালারির বৈতরণী পার হয়ে মাঠে ঢুকে পড়েন অনেক দর্শক। প্রবাসীদের সঙ্গে সেলফি তোলায় ব্যস্ত হয় পড়েন তারা। সবমিলিয়ে অন্যরকম উৎসবের আবহে প্রবাসীদের ভাগ্য পরীক্ষা শেষ হয়েছে।