X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

শেন ওয়ার্নের ঘূর্ণির জীবন

তুষার আবদুল্লাহ
০৫ মার্চ ২০২২, ১৭:২৭আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২২, ১৭:২৭

তুষার আবদুল্লাহ বেতারের ধারাভাষ্যকারদের কাছ থেকে একটি বাক্য শুনে আসছি– ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। বিশেষ করে সীমিত (৫০) ওভারের খেলা যে কোনও সময় যে কোনও দিকে বাঁক নিতে পারে। টেস্ট তো অবশ্যই। ঠিক জীবনের মতো। টি২০ জীবন কখনোই টেকসই মনে হয় না আমার কাছে। এখানে আছে ক্ষণিকের উত্তেজনা। আয়েশী উপভোগ নেই। জীবনকে পর্যবেক্ষণ করে, সিদ্ধান্ত নেওয়া, ভুল শুধরে নতুন করে শুরুর সুযোগ নেই একেবারেই। টেস্ট এবং ৫০ ওভারের টেস্টে সেই সুযোগ আছে। খুব নিকট অতীতের একটা উদাহরণতো দেওয়া যায়ই– আফগানিস্তানের চলতি সফরে, প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটিতে দ্রুত ছয় উইকেট হারানোর পরও, বাংলাদেশ কীভাবে ম্যাচটি জিতে যায়। মাত্র দুজন ব্যাটার ধ্বংসস্তুপ থেকে বাংলাদেশকে বের করে নিয়ে আসেন বিজয় মঞ্চে। জীবন এমনই, ব্যথর্তার অন্ধকূপ থেকেও সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানো যায়। যদি লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ঠিকঠাক থাকে। জীবনে যেমন অ্যালান ডোনাল্ডের করা বলের মতো গতি থাকা প্রয়োজন, তেমনই কখনও কখনও শেন ওয়ার্নের করা স্পিনের মতো কৌশলও অনিবার্য হয়ে ওঠে।

উফ! চলে গেলেন শেন ওয়ার্ন। এইতো গতকালই। ওই যে বলছিলাম ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। জীবনের খেলাও তেমনি। মাত্র ৫২ তে চলে গেলেন শেন ওয়ার্ন। আহা জীবন, অনিশ্চিত জীবন।

শেন ওয়ার্ন চলে যাওয়ার খবর শোনার পর ইউটিউবে তাঁর ইনিংসগুলো দেখছিলাম। কী জাদুকরি লেগ স্পিনার ছিলেন তিনি। সব সময়ই মনে হতো বাতাস তাঁর খেলার সঙ্গী ছিল। শূন্যকে তিনি নিজের দখলে নিয়ে যেমন ইচ্ছে ব্যবহার করতেন। সেই ব্যবহারের যুত্সই তাঁর ‘বল অব দ্য সেঞ্চুরি’ ডেলিভারিটি। ১৯৯৩ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে দেখেছিলাম সেই জাদুকরী বিস্ময়। লেগ দিয়ে বের হয়ে যেতে থাকা বলটি কীভাবে সুইং করে প্রায় ফুট দুই সরে এসে আঘাত করলো, তা যেমন ব্যাটার মাইক গ্যাটিং বুঝতে পারেননি, তেমনি বুঝে উঠতে পারেনি ক্রিকেট বিশ্ব। জীবনের একই রহস্যময় সুইং শেন ওয়ার্নকেও সরিয়ে নিলো আমাদের কাছ থেকে। ক্রিকেট বিশ্ব আবারও বিস্মিত।

শেন ওয়ার্নের মৃত্যুর খবর যখন এলো তখন বইমেলাতে। শুক্রবার বলে ভিড় ছিল বেশি। সেজন্য পরিচিত মানুষের সঙ্গে দেখা হলো কদমে কদমে। এমন অনেক পরিচিতজন আছেন, যাদের সঙ্গে দেখা হয় শুধু বইমেলাতেই। কারো কারো সঙ্গে দেখা হয়ে যায় ঠিক এক জায়গায়। গত তিন, চার বছর আমরা কি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি? কী জানি। কারও ভেতর চাপা উত্তেজনা। ক্ষোভ। দীর্ঘশ্বাস। অনেকেই আবার উৎফুল্ল। জীবনের উচ্ছ্বাস যেন আছড়ে পড়ছে বইমেলাতেও। গত এক দুই মেলা আগে যাকে দেখেছি হাঁকডাক দিয়ে মেলা কাঁপিয়ে বেড়াতে, তিনি এবার সন্তর্পণে একা মেলা মাঠে হাঁটছেন। জানি না কোন ঘূর্ণি বলে তিনি পরাভূত। নাকি ‘কাটার’ বল সমীহ করে চলছেন। নিজের জীবন দিয়েও তো দেখছি, কখনও মাশরাফির পেস, মুস্তাফিজের কাটার, নাসু’র পেস, মুহাম্মদ রফিক, সাকিব কিংবা মিরাজের ঘূর্ণি আসে জীবনে। ওয়াসিম, মুরালি বা মালেঙ্গার প্রলুব্ধ করা বলও আসে, অসাবধানতা বশত ইন সাইট অ্যাজ বা বাউন্ডারি লাইনে কারও হাতে আটকা পড়ে ফিরে আসতে হয় সাজ ঘরে।

কিন্তু সাজ ঘরে ফিরে যাওয়াতেই তো জীবনের ইতি নয়। নতুন ইনিংসে মাঠে নামতে হবে লড়াকু মেজাজে। আগের ভুলগুলো সংশোধন করে। শেন ওয়ার্নের বল বিশ্ব সেরা ব্যাটারদের চেনা ছিল। তারপরও তাঁর স্পিন শিল্পের বহুমাত্রিকতার কাছে তাদের হার মানতেই হতো। শচীন, লারা জানতেন দেশের তাবৎ বোলারদের কব্জি, আঙুলের কারসাজি। তারপরও তাঁরা ফাঁদে পড়ে যেতেন, লোভের ফুটওয়ার্ক এড়াতে পারতেন না। আমরাও যেমন লোভের হাতছানি কখনও কখনও এড়িয়ে যেতে পারি না। ভুল হবেই, হোঁচট খাবোই। তা বলে আমরা দাঁড়াতে পারবো না কেন? শেন ওয়ার্নের ঘূর্ণি বল শূন্যে ভাসছে। সেই ঘূর্ণির অংক কষে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সপাটে ব্যাট চালাবো, নাকি সমীহ করবো?

 

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
রাজধানীতে ঝড়-শিলাবৃষ্টি
রাজধানীতে ঝড়-শিলাবৃষ্টি
৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে নির্যাতনের শিকার গৃহপরিচারিকাকে উদ্ধার
৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে নির্যাতনের শিকার গৃহপরিচারিকাকে উদ্ধার
এমপি স্ত্রীকে হারিয়ে ৬ ভোটে স্কুল কমিটির সভাপতি বদি
এমপি স্ত্রীকে হারিয়ে ৬ ভোটে স্কুল কমিটির সভাপতি বদি
পুলিশ-সাংবাদিক-আইনজীবী স্টিকারের ছড়াছড়ি, ব্যবস্থা নিতে মাঠে নেমেছে পুলিশ
পুলিশ-সাংবাদিক-আইনজীবী স্টিকারের ছড়াছড়ি, ব্যবস্থা নিতে মাঠে নেমেছে পুলিশ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ