X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভালোবাসার ভেতর-বাহির

আহসান কবির
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৪আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:২৯

প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী স্ত্রী যদি এক ছাদের নিচে না থাকে তাহলে কি ভালোবাসায় ঘাটতি দেখা দেয়? বড় কঠিন প্রশ্ন নাকি এটি। কারণ দেশে এখনও প্রচুর মেয়েদের বিয়ে হয় প্রবাসীদের সঙ্গে। এরপর স্বামী প্রবাসে চলে গেলে ছড়া কাটা হয় এভাবে- ‘স্বামী বিদাশ/মন উদাস!’

তবে স্বামী অন্য কারণেও ‘বিদাশ’ যেতে পারেন। প্রিয় পাঠক নিচের গল্পটা খেয়াল করুন-

মন উদাস করে বসে আছেন এক তরুণী। তার কাছে জানতে চাওয়া হলো আপনার স্বামী কি বিদেশে? কতদিন ধরে আছেন? তরুণী জানালেন– জি। তবে বিদেশ গেছে মাত্র সাতদিন। ভালোবাসা দিবসে ওর অফিসে গিয়ে দেখি ওর হাঁটুর ওপর বসে আছে ওর পিএস। সব রাগ গিয়ে পড়লো ওর হাঁটুর ওপর। দিলাম গুঁড়াইয়া। হাঁটু জোড়া লাগাতে সে এখন বিদেশের হাসপাতালে আছে!

দেবদাসের বড়শি দিয়ে পার্বতীকে মারার মতো ভালোবাসা কখনও-সখনও মারমুখো হয়। তবু সব যুগে সবকালেই আলোচিত ছিল ভালোবাসা, ভবিষ্যতেও থাকবে। যুগ জিজ্ঞাসা বা কত অজানার স্টাইলে আমরা কিছু প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে ভালোবাসার ভেতরে যাই।

এক. ভালোবাসার ভেতর বাহির কি এক?

-কখনোই না। ভালোবাসার বাইরের দিক হচ্ছে ফেসবুকে আপ করা ছবি। আর ভেতরের দিকটা হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবির মতো, যেখানে নিজেকেই চেনা যায় না। ভালোবাসার বাইরের দিকটা হচ্ছে বাসার সাজানো ড্রয়িং রুম। মনে রাখতে হবে বাসার ভেতরে টয়লেটও থাকে!

দুই. ভালোবাসার সবচেয়ে আলোচিত সংজ্ঞা কী?

-ভালোবাসার এক কোটি সংজ্ঞা আছে। আলোচিত একটা এমন- ভালোবাসা দুই নির্বোধের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছাড়া আর কিছু না! নাথিং বাট দ্য মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং বিটুইন টু ইডিয়টস!

তিন. ভালোবাসার আসল উদ্দেশ্য কী?

- সরাসরি বলা যাবে না। হায় হায় রব উঠতে পারে। তার চেয়ে প্রশ্ন করুন ভালোবাসার ব্যাপ্তি কতখানি। উত্তর হচ্ছে, প্রথম দেখা থেকে শুরু করে বাসর পর্যন্ত। আমরা পজিটিভলি ভাবি। প্রথম দেখা হোক, এরপর প্রেম বিয়েতে গড়াক। বিয়েতে বাসরটা গুরুত্বপূর্ণ!

চার. বিবাহ কী?

- বিশেষ বাসরে হরণ!

পাঁচ. ভালোবাসার পর দীর্ঘ চুমু খাবার উপায়টা কী?

-কষ্ট করে বিউগল বাজানোটা শিখুন!

ছয়. চুমুকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয় এমন কবিতা আছে নাকি?

-জি, আছে।

‘যারা চুমু খায় তারা সবাই জানে না/কেউ কেউ শুধু জানে/ অমলিন শূন্যতা ওঁত পেতে থাকে/দু-ঠোঁটের মাঝখানে!

প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার পর প্রেমিকার কাছে রেখে আসা চুম্বনগুলোকে কারও কারও কাছে ‘নোনতা অপচয়’ মনে হতে পারে! যদিও কবি শহীদ কাদরী তার চুম্বনগুলোকে প্রেমিকার কাছে পৌঁছে দিতে বলেছিলেন!

সাত. চাকরি ক্ষেত্রের ভালোবাসা কেমন?

- এই ভালোবাসার পুরোটাই অফিসের বস-কেন্দ্রিক। ধরুন আপনি ও আপনার প্রেমিকা একই অফিসে কাজ করেন। তো প্রমোশনের জন্য ভাইবা হচ্ছে। আপনার পারফরম্যান্স ভালো, কিন্তু প্রমোশন হলো না। আপনার প্রেমিকার হলো। কারণ কী? কারণ হচ্ছে সে যখন বসের সামনে হাজির হয়েছিল তখন তার বুকের একটা বোতাম খোলা ছিল!

আট. এবার অর্থাৎ ২০২৪ সালে পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস একদিনে করার কারণ কী?

- কারণ বিবিধ। ফাল্গুনের ড্রেস কিনলে ভালোবাসার ড্রেস কিনতে হবে না, আবার ভালোবাসার পোশাক কিনলে ফাল্গুনের পোশাক না কিনলেও চলবে। তবে আসল কারণ হচ্ছে ক্যালেন্ডারের পরিবর্তন। ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, একুশে ফেব্রুয়ারির ইংরেজি ও বাংলা দিন যেন সবসময় এক হয় সে কারণে এই পরিবর্তন!

অবশ্যই প্রচুর লোক আসবে নেমে রাস্তায় এবং বলা হবে জনগণ এই পরিবর্তন মেনে নিয়েছেন!

নয়. ভালোবাসা দিবসের কৌতুক কেমন হওয়া উচিত?

অবশ্যই ভালোবাসা-কেন্দ্রিক। যেমন- এক প্রেমিক গেলো তার প্রেমিকার বাড়িতে, প্রেমিকার বাবার সঙ্গে কথা বলতে। প্রেমিকার বাবা জানতে চাইলেন- কী বিষয়। প্রেমিক বললো, আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি। প্রেমিকার বাবা বললেন- তো তোমার বাবা মা কী করেন? প্রেমিক খুব গর্ব নিয়ে বললো– শুধু এসবই করে। বাবা মাকে ভালোবাসে আর মা বাবাকে!

দশ. ভালোবাসার কোন সূচক কখনও পরিবর্তিত হয় না?

- ভালো বাসার সূচক। ভালোবাসার জন্য ভালো বাসা আবশ্যক। আর দরকার টাকা! টাকা না থাকলে ভালোবাসা নাকি জানালা দিয়ে পালায়!

তো প্রশ্ন আর উত্তরে ভালোবাসার ভেতর বাহির সম্পর্কে কতটা জানলেন? ভালোবাসা আসলে এক বিচিত্র জিনিস। প্রেম হলে নাকি খাওয়া-দাওয়া কমে যায়, ঘুম আসতে চায় না। মোবাইল কোম্পানির ব্যবসা বাড়ে। বাড়ে ফুল, কার্ড আর উপহারের ব্যবসা।

নিজেকে কবি কবি মনে হয়। প্রেমে মিলনের চেয়ে বিচ্ছেদই নাকি ভালো। জীবনে আপনাকে কবি বা দার্শনিক বানিয়ে দেবে। তাই কথা আর না বাড়িয়ে দুটো গল্প শুনে বিদায় নিই।

এক. দুই বন্ধু গল্প করছে।

- দোস্ত তুই যে কবি হয়েছিস তোর প্রেমিকা কি সেটা জানে?

-খুব ভালো করে জানে।

-কীভাবে জানালি?

-পর পর দুটো কবিতার বই পাঠিয়েছি!

- সে কি পড়েছে?

- তা জানি না দোস্ত। শুধু জানি গরম লাগলে সে তার স্বামী বা সন্তানকে ওই বই দিয়ে বাতাস করে!

দুই. দেবদাসের গল্প এখন পুরনো হয়ে গেছে। মানুষ দেবদাসের কাণ্ড নিয়ে এখন হাসাহাসি করে। তবু এক ছেলে প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় একদিন মদ খেয়ে তার শ্বশুরবাড়ির সামনে এসে হাজির হলো। প্রেমিকাকে সে টেলিফোন করে বললো- একটু জানালায় আসো। তোমাকে এক নজর দেখে চলে যাবো। প্রেমিকা এলো না। প্রেমিক অভিমানে আত্মহত্যা করলো। এরপর কে একজন থানায় টেলিফোন দিয়ে বললো, ভাই আমাদের পাশের বাড়ির সামনে একটা গাধা মরে পড়ে আছে। দয়া করে তার মৃতদেহটা উদ্ধার করে নিয়ে যান!

প্রেমের মড়া নাকি জলে ডোবে না। কিন্তু প্রেমের কারণে যারা আত্মহত্যা করে তারা কি কাপুরুষ? নাকি প্রেমের পথের মহান শহীদ?

লেখক: রম্যলেখক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ