X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

অধঃপতিত বাঙালির অনন্য বৈশিষ্ট্য

মো. জাকির হোসেন
০১ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:৪২আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:৪৪

বাঙালি দক্ষিণ এশিয়ার ইন্দো-আর্য জাতিগোষ্ঠী। ধর্মীয় অনুষঙ্গ ও অন্যান্য দিক থেকে বাঙালি একটি বৈচিত্র্যময় জাতিগোষ্ঠী। প্রাচীন সভ্যতার ধারক ও বাহক বাঙালি। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বৃহত্তর বাংলা অঞ্চলে ৪ হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন তাম্রযুগের সভ্যতা আবিষ্কার করেছেন। আবিষ্কৃত প্রত্নবস্তুগুলো থেকে বোঝা যায়, নরসিংদীতে অবস্থিত উয়ারী-বটেশ্বর সভ্যতা খ্রিষ্টপূর্ব ২ হাজার সাল পুরনো। নদী তীরবর্তী এই শহরটি প্রাচীন রোম, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্যে যুক্ত ছিল বলে মনে করা হয়। এটিকে বাংলার এবং সমগ্র উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলের প্রাচীনতম শহর বলে মনে করা হয়।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বীরত্ব-গৌরবগাথা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। নোবেল জয়সহ বৈশ্বিক নানা আবিষ্কার ও উদ্ভাবনে বাঙালির কৃতিত্ব গৌরবোজ্জ্বল। কিন্তু কিছু অধঃপতিত বাঙালির আচরণ, কর্মকাণ্ড বাঙালির গৌরব, বীরত্ব ও কৃতিত্বকে লজ্জাজনকভাবে ম্লান করে দেয়। পৃথিবীর অন্য কোনও জাতি-গোষ্ঠীর সঙ্গে এমন আচরণ ভীষণরকমভাবে বৈসাদৃশ্য ও অসঙ্গতিপূর্ণ।

কয়েকটি আচরণ প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করছি–

এক. ধর্মীয় উৎসব-পার্বণে ব্যবসায়ীরা বিশ্বব্যাপী মূল্যছাড় দিয়ে থাকেন। মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে ব্যবসায়ীরা রমজান উপলক্ষে কয়েক হাজার পণ্যে ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ বাংলাদেশের অসৎ ব্যবসায়ীরা রমজানে পণ্যমূল্য কয়েকগুণ থেকে কয়েকশ’গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

দুই. সব দেশেই ঘুষ-দুর্নীতি আছে। কোনও দেশই দুর্নীতিমুক্ত নয়।

মূলত, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদরা ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু ঘুষের বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনও দেশে হয় বলে শুনিনি। কোনও কোনও উপাচার্যের ঘুষের টাকা সংগ্রহের জন্য ক্যাশিয়ার থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ এখন ধর্ষক, যৌন উৎপীড়ক।

আমি এমন কিছু দুর্জন, কুচক্রী, ষড়যন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক কাছে থেকে দেখেছি, তাদের কর্মকাণ্ড প্রকাশিত হলে সভ্যতা, নীতি-নৈতিকতা লজ্জা পাবে।

তিন. বাঙালি মুসলমান ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর ভয়ে গোপনেও খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করে না। অথচ সেই বাঙালি মুসলমানই ঘুষ, দুর্নীতি, মজুতদারি ও লাগামহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে ভোক্তাদের ওপর জুলুম করতে, রোজাদারকে কষ্ট দিতে আল্লাহকে ভয় করে না।

চার. চলন্ত ট্রেন মেট্রোরেলে পাথর নিক্ষেপ করে যাত্রী, চালককে হতাহত করার ঘটনা বিশ্বে বিরল।

পাঁচ. রাস্তার প্রশস্ততা বাড়িয়ে সড়ক বিভাজক দেওয়া হয়েছে। পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্য ফুট ওভারব্রিজ করে দেওয়া হয়েছে। কোনও কোনও জায়গায় চলন্ত সিঁড়িও স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ পথচারী ফুট ওভারব্রিজ, এমনকি চলন্ত সিঁড়ি ব্যবহার না করে দৌড়ে-লাফিয়ে সড়ক বিভাজক পার হন।

এ জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে সড়ক বিভাজকের ওপর কাঁটাতারের বেড়া কিংবা স্টিলের উঁচু বেষ্টনী দিতে হয়েছে। এরপরও দেখা যায় একদল মানুষ কাঁটাতারের বেড়া টেনে ফাঁক করে তার ভেতরে কষ্ট করে দেহ গলিয়ে দিয়ে কিংবা স্টিলের বেষ্টনী বেয়ে ওপরে উঠে রাস্তা পারাপার হচ্ছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে দেখলাম অতি ব্যস্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মাত্র দুই ফিট দূরত্বে অবস্থিত ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে দৌড়ে সড়ক বিভাজক পার হতে।

ছয়. পৃথিবীর বহু দেশেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে মতবিরোধ, বিদ্বেষ দেখতে পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে রাজনৈতিক সংঘর্ষে নেতাকর্মী হতাহত হয়। কিন্তু রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সন্ত্রাসী ভাড়া করে বাসে-ট্রেনে আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা, ট্রেনলাইন কেটে কিংবা ফিশপ্লেট, নাট-বল্টু খুলে পরিকল্পিত দুর্ঘটনার মাধ্যমে মানুষ হত্যার এমন নৃশংস অপরাধমূলক রাজনীতি কদাচিৎ সভ্য জগতে খুঁজে পাওয়া যাবে। সরকারের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বিরোধী দল এমনকি অস্ত্র হাতে তুলে নেয়, যুদ্ধ করে।  

তবু নিজ দেশের মানুষের কথা ভেবে দেশের প্রধান রফতানি পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে অন্য রাষ্ট্র, সংস্থাকে চিঠি প্রদান কিংবা লবিস্ট নিয়োগ করে না। আল্লাহর নবী সুলাইমান (আ.) তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন একটি পিপীলিকা স্বজাতির অন্যদের সাবধান করে বলে, দ্রুত সবাই ঘরে প্রবেশ কর। অন্যথায় পদপিষ্ট হয়ে যেতে পারো। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, “অতঃপর যখন তারা একটি পিপীলিকা অধ্যুষিত এলাকায় উপনীত হলো, তখন এক পিপীলিকা বললো, হে পিপীলিকা দল! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদের পিষ্ট করে ফেলবে” (সুরা নামল: ১৮)।

ক্ষুদ্র পিপীলিকার স্বজাতির প্রতি যে ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ রয়েছে, কিছু বাঙালির সেটুকুও নেই। রবীন্দ্রনাথ যথার্থই বলেছেন, ‘রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি’।

সাত. কিছু বাঙালি শুধু নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থে অন্যদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, চার রাস্তার মোড়ে যে গাড়িগুলো ডানে কিংবা সোজা যাবে সে গাড়িগুলোও বামদিকের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে এমনভাবে দাঁড়ায়, বামদিকে যে গাড়িগুলো যাবে সেগুলোও আটকা পড়ে থাকতে হবে।

আত্মঘাতী বাঙালি শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল-জলাধারগুলোই কেবল ভরাট করছে তা নয়। ডাবের পানি পান করে শক্ত খোসা ড্রেনে ফেলে ব্লক করে দিচ্ছে। চিপস, বিস্কিট খেয়ে অপচনশীল প্যাকেট কিংবা পলিথিন ব্যাগ যত্রতত্র ফেলে পরিবেশ নোংরা করছে, পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দিচ্ছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে জনজীবনে মারাত্মক দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ নিজেদের এই অপরিণামদর্শিতাকে সংশ্লিষ্ট মেয়র ও সরকারের ঘাড়ে অবলীলায় দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে। নাগরিকদের এতটা দায়িত্বহীনতা ও আইনের প্রতি এতটা অশ্রদ্ধা পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, শতভাগ আইন মানা মানুষ অচ্ছুত দলভুক্ত। তার সম্পর্কে  বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সাধারণ অনুভূতি, উনি বেশি বাড়াবাড়ি করেন। এত কড়াকড়ি করে, আইন মেনে সমাজ চলবে?

আট. তদবির ও ম্যানেজ সংস্কৃতি আমাদের নৈমিত্তিক জীবনের অপরিহার্য অংশ। এটি এখন প্রচলিত হয়ে গিয়েছে, ‘তদবিরে তকদির ফিরে’। তদবির ছাড়া যেন কিছুই হয় না। এই তদবিরের একটি আবশ্যিক অনুষঙ্গ ‘ম্যানেজ করা’। দুর্ঘটনার পরই জানা যায় ‘চালকের লাইসেন্স ছিল না’, না হয় সেটা মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল অথবা হালকা যানের লাইসেন্সে ওই চালক চালাচ্ছিলেন ভারী যান।

বাস বা লঞ্চের যেকোনও দুর্ঘটনার পর জানা যায় ফিটনেস নেই। আগুন লাগার পর জানা যায় ভবনের অনুমোদন নেই। সনদ নিয়ে বিতর্ক হলে কিংবা অবহেলায় রোগী মারা যাওয়ার পর জানা যায় ওই বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা হাসপাতাল-ক্লিনিকের অনুমোদন ছিল না। সব তদবির আর ম্যানেজের কারসাজি।

নয়. বাঙালির আরেক অনন্য বৈশিষ্ট্য পাবলিক টয়লেটের অনুসন্ধান না করে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদন। ‘এখানে প্রস্রাব করিবেন না’ কিংবা ‘এখানে প্রস্রাব করা নিষেধ’, সেই সঙ্গে ৫০ থেকে ১০০ টাকা জরিমানা এমন কথা পৃথিবীর আর কোনও শহরের দেয়ালে লিখে রাখতে হয় কিনা আমার জানা নেই। এই সতর্কবাণী কিংবা জরিমানার ভয় দেখিয়েও কাউকে দমিয়ে রাখা যায় না।

অনেক ফুটপাথের পাশে মূত্রের দুর্গন্ধে হাঁটাই কঠিন হয়ে পড়ে। এসব লেখার পরও প্রকাশ্যে মূত্রত্যাগ বন্ধ না হওয়ায় ওই সব জায়গায় আরবি হরফে দেয়াল লিখনের একটি উদ্যোগ লক্ষ করা গিয়েছে, যাতে আরবির প্রতি শ্রদ্ধাবোধের ধর্মীয় অনুভূতির কারণে এটি বন্ধ করা যায়। বিবিসি নিউজ বাংলা এ বিষয়ে সংবাদ প্রতিবেদনে লিখেছিল, ‘বাংলাদেশে প্রকাশ্য স্থানে মূত্রত্যাগ ঠেকাতে রাজধানী ঢাকার দেয়ালে আরবি ভাষা ব্যবহারের এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন’।

তবে এটিও অনস্বীকার্য যে শহরে শৌচাগারেরও অভাব রয়েছে।

দশ. খাদ্যদ্রব্যে ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে হোটেল-রেস্তোঁরা ব্যবসায়ীরা এমন কেমিক্যাল মিশ্রণ করে যা নিশ্চিতভাবেই গ্রহীতাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দেখা যায়, কেমিক্যাল মিশ্রিত যে পানীয় রেস্তোরাঁয় আগত ভোক্তাদের পরিবেশন করা হচ্ছে সেই একই পানীয় গ্রহণ করতে রেস্তোরাঁর কর্মচারীরা অনীহা প্রকাশ করছেন। জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করা হলে মিশ্রণকারী কর্মচারীকে এমনও বলতে শোনা গেছে, এটা খেলে সে মারা যাবে।

জেনে-বুঝে খাদ্যে বিষ মেশানোর এমন ঘটনা পৃথিবীর দ্বিতীয় আর কোনও দেশে ঘটে বলে আমার জানা নেই। ওজন বাড়িয়ে অধিক মুনাফা করতে চিংড়িতে জেলি, অন্য মাছে সিরিঞ্জ দিয়ে পানি ঢুকানো, মুরগির খাবারের সাথে কংকর মেশানো বাঙালি ছাড়া আর কোনও জাতি করে বলে শুনেছেন কখনও?

এগারো. বাঙালিদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস তলানিতে। কেবল রাজনৈতিক দলের মধ্যে নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও একই অবস্থা বিরাজমান। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে চায় না। উদাহরণস্বরূপ, বাজারে গিয়ে পণ্য কিনে ক্রেতার অনুভূতি হলো ভালো জিনিসটা দেয়নি কিংবা ওজনে সঠিক দেয়নি। মাছ কিনে কাটাতে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, না হলে দু’চার টুকরা সরিয়ে ফেলবে বলে ক্রেতা মনে করেন।

বারো. বিশ্বের অন্তত ৭০টি দেশের জাতির পিতা আছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, বাঙালি জাতির জনক। কোনও কোনও জাতির পিতার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তার নিজ দেশে বিতর্ক আছে। কিন্তু সেজন্য কোনও জনগোষ্ঠী তার জাতির পিতাকে অস্বীকার-অসম্মান করে না। কিন্তু কিছু অকৃতজ্ঞ বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা স্বীকার করা দূরে থাক, স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর অবদানকেও অস্বীকার করে। কুতর্ক জুড়ে দিয়ে বলেন, ‘তখন তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন।’ নেলসন ম্যান্ডেলা অস্ত্র হাতে রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করেননি, দশকের পর দশক কারাবন্দি ছিলেন। অথচ তিনি কেবল দক্ষিণ আফ্রিকা নয়, সারা বিশ্বে নন্দিত। নেলসন ম্যান্ডেলাকে অভিহিত করা হয় ‘South Africa’s Liberator as Prisoner’। অনেক মানুষ একসঙ্গে কাজ করেন, কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ একজন তার নেতৃত্ব, ত্যাগ, মেধা, দূরদর্শিতার কারণে অন্য সবাইকে উতরে ভিন্ন উচ্চতায় পৌঁছে যান। জাতির কাছে তিন নমস্য হন। বঙ্গবন্ধু সেই দলভুক্ত।

বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করতে এসব অকৃতজ্ঞ বাঙালি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মসনদ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকেও অস্বীকার করে।

মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন, বাঙালির এমন বৈশিষ্ট্য কেন যা বিশ্ব চরাচরে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বাঙালি জাতি সম্পর্কে নৃবিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি একটি মিশ্রিত তথা সংকর জাতি। পৃথিবীর বহু জাতি বাংলায় অনুপ্রবেশ করেছে। জাতিতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর চারটি প্রধান নরগোষ্ঠী তথা নিগ্রীয়, মঙ্গোলীয়, ককেশীয় ও অস্ট্রেলীয় প্রতিটির কোনও না কোনও শাখার আগমন ঘটেছে বাংলায়। অনেকে চলেও গেছে। কিন্তু বাঙালির চরিত্র ও জীবনাচারে রেখে গেছে তাদের আগমনের প্রভাব। ফলে শারীরিক গঠন, ভাষা, সভ্যতা-সংস্কৃতিতে মিল সত্ত্বেও বাঙালির চিন্তা-চেতনা-মননে জড়বাদ, বস্তুবাদ, ভাববাদ, আধ্যাত্মবাদ, নিরীশ্বরবাদ, ধর্ম প্রভাবিত দর্শন, মুক্তচিন্তাসহ নানা দর্শনের মেলবন্ধন ঘটেছে। বাঙালির রক্তে মিশ্রিত বহু এবং বিচিত্র সব নরগোষ্ঠীর অস্তিত্ব। বাঙালি সমাজে তাই ধর্মীয় দ্বিধাদ্বন্দ্ব, সামাজিক কুসংস্কার, সংকট, লোভ, দাসত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা, অসহিষ্ণুতা, পরশ্রীকাতরতা, সাম্প্রদায়িকতা, তোষণ-তৈলমর্দন, নিজের দোষকে এড়িয়ে কেবল অন্যের দোষ ধরা, অন্যের মতামতকে অবজ্ঞা করা, চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র, নিজের অযৌক্তিক মতকে প্রতিষ্ঠা করতে অবিবেচক বনে যাওয়া, ধর্মীয় উন্মাদনা অধঃপতিত বাঙালির অনন্য বৈশিষ্ট্য।

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ই-মেইল: [email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে ক্যাশলেস লেনদেন চালু
খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে ক্যাশলেস লেনদেন চালু
ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার, নদীতে ঝাঁপিয়ে পালালো পাচারকারীরা
ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার, নদীতে ঝাঁপিয়ে পালালো পাচারকারীরা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ