X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রক্তাক্ত খুশির ঈদ

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৬ জুলাই ২০১৬, ১২:৫০আপডেট : ০৬ জুলাই ২০১৬, ১৩:০১

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা তুরস্কের ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর, ঢাকা, বাগদাদ। রেশ কাটতে না কাটতেই সৌদি আরবের মদিনায় মুসলমানদের সবচয়ে প্রিয় স্থান মসজিদে নববীর কাছে আত্মঘাতি বোমা হামলা। সব মিলিয়ে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু।
রমজান শেষ হয়ে আসছে, এখন ঈদের পালা। এ লেখা যেদিন প্রকাশিত হচ্ছে, তখন সৌদি আরবসহ বেশকিছু দেশে ঈদ উদযাপন শুরু হয়ে গেছে, বাংলাদেশে হবে পরদিন। ঈদ মানে খুশি বা আনন্দ। কিন্তু ঢাকা, বাগদাদ, ইস্তাম্বুল কিংবা মদিনা, কোথাও ঈদের আনন্দ নেই। সবখানে নিরীহ, নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু। আর যারা মারছে, তারা কারা? জেহাদি জঙ্গি? নাকি সন্ত্রাসবাদি? ‘আল্লাহু আকবর’ বলে যারা নিরপরাধ মানুষের মাথা কেটে নেয়, তারা কতটা ইসলাম প্র্রিয় সেই বিশ্লেষণ করছেন চিন্তাবিদরা।
বাংলাদেশের সংঘাতময় রাজনীতির কথা উঠে আসছে অনেক আলোচনায়। তার কথা থাক। কিন্তু পৃথিবীর কোন দেশ এখন নিরাপদ? আমেরিকা, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, মধ্যপ্রাচ্য, উপসাগর, ইউরোপ সবখানেই জঙ্গি হানা আর আইসিসের দায় স্বীকার।
বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল  চরিত্রের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে চূড়ান্ত মৌলবাদী ও হিংসাত্মক শক্তি। প্রথমে খুন করা হলো মুক্তমনা মানুষদের, স্বাধীন চিন্তার বাহক ব্লগারদের, অধ্যাপকদের। তারপর খুন করা হলো পুরোহিতদের। নৃশংস মৌলবাদীদের হাতে খুন হয়েছেন খ্রিস্টান যাজক, বৌদ্ধ সন্ন্যাসীও। আর ১ জুলাই গুলশানে গণহত্যা। হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র, তবু কুপিয়ে খুন!‌ কতটা হিংস্র আর অসুস্থ মানসিকতা!‌ এমন একটি জায়গায় হামলা, যেখানে বিদেশিদের পাওয়া যাবে, খুন করা যাবে, পৃথিবী জুড়ে প্রচার পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন আছে অনেক উত্তর নেই। তিরিশটিরও বেশি দূতাবাস যেখানে সেখানে নিরাপত্তা বলয় নিশ্চয়ই ক্ষুদ্র নয়। সেই কড়া প্রহরা পেরিয়ে এতজন সশস্ত্র ঘাতক হোলি আর্টিজান বেকারি পর্যন্ত কী করে পৌঁছে গেল? কে দেবে এই প্রশ্নের উত্তর?

আইসিস দায় স্বীকার করছে, গুলশানের খুনিদের ছবি প্রকাশ করে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে এদেশের মাটিতে তাদের অবস্থানের কথা, বিদেশিরা বলছে, তবুও সরকার মানছে না যে বাংলাদেশে আইসিস আছে। আইসিস নেই, কিন্তু খুন আছে। আইসিস আছে আর নেই নিয়ে বিতর্ক চললেও বিতর্ক নেই যে, বাংলাদেশ  জঙ্গিদের মুক্ত বিচরণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এই গোষ্ঠী মানুষের মুক্তচিন্তার প্রসারকে আটকে দিয়ে দেশকে মৌলবাদের মৃগয়াক্ষেত্র করে তুলতে চায়।  

এই গণহত্যা সারা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে, যেমনটা করে থাকে। আইএস জঙ্গিদের হত্যালীলা থেকে বাদ যাচ্ছে না কোনও দেশের মানুষই। আইসিস বলছে তারা খেলাফত কায়েম করতে চায়। খেলাফত মানে খলিফার রাজত্ব। যে মানচিত্র প্রকাশ পেয়েছে এই খেলাফতের সেখানে বাংলাদেশ আছে। এই রাজত্ব কায়েম করতে গেলে যুদ্ধ অনিবার্য, সেটাই আইসিস করছে বিশ্বজুড়ে। সারা পৃথিবী থেকে যোদ্ধাদের ডাকা হচ্ছে, প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, খুনের তালিম দেওয়া হচ্ছে। কেউ নিজেকে খলিফা ঘোষণা করতেই পারে, কিন্তু কে তাদের বোঝাবে যে, বিংশ শতাব্দির গোড়াতেই খেলাফত ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটেছে, তার সঙ্গে ইসলামের আর কোনও সম্পর্ক নেই। 

আর এমন হিংসা, রক্তক্ষয় দিয়ে কি ইসলাম সত্যিই কায়েম হবে? বিশ্বজুড়ে এই উৎপাত শুরু হয়েছিল ওসামা বিন লাদেন নামের একজনকে দিয়ে, যিনি এবং যার নেতৃত্বে তালেবান আর আল কায়েদা গড়ে উঠেছিল মার্কিন মদদেই। শেষ পর্যন্ত বিন লাদেনকে পাকিস্তানে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র, দুর্বল হয়ে আসে আল কায়দা, জন্ম নেয় নতুন শক্তি আইসিস। এদের গড়ে ওঠার পেছনেও কতটা তেল আর অস্ত্র বাণিজ্য আর কতটা সত্যিকারের ইসলাম কায়েমের আকাঙ্ক্ষা তা এখন বিশ্বমুসলিম টের পাচ্ছে।

বাংলাদেশ জামায়াতুল মুজাহিদিন আর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামটিই বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। আর হচ্ছে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরের নাম। কিন্তু দীর্ঘ প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর সমর্থন আর সাহস ছাড়া তাদের জন্য এতটা এগুনো সম্ভব নয়। পরিকল্পিতভাবে দেশকে অশান্ত করতে যারা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় আছেন আনেকদিন তাদের সঙ্গে এদের সখ্যতা যে আছে তা অনুমেয়।  

ধর্ম যখন সন্ত্রাসের হাতিয়ার হয় তখন এর মোকাবেলা করা খুব কঠিন। রমজানের মাসে নামাজ না পড়ে যারা মানুষ খুন করতে ব্যস্ত হয়, তারা কেমন মুসলিম, প্রশ্ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুরোধ করেছেন, ছেলেমেয়েরা ধর্মের নামে কী শিক্ষা পাচ্ছে বাড়ির লোকরা যেন তা দেখেন। প্রধানমন্ত্রীর কথায় গুরুত্ব আছে, আছে গভীর করে ভাবনার বিষয়। গুলশানের ঘটনায় মারা যাওয়া জঙ্গিদের একজন বাদে সবাই ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। পরিবার থেকে নিঁখোজ হয়ে গিয়ে একদিন জঙ্গি হয়ে ফিরছে। পরিবার যদি প্রতিষ্ঠান হয় সন্তানের জন্য তাহলে প্রয়োজন নজরদারির।

দেশের ১ লাখ ২০ হাজার আলেম–‌উলেমা সম্প্রতি বিবৃতি দিয়েছেন, ইসলামের সঙ্গে এই হত্যানীতির কোনও সম্পর্ক নেই। এই পথ ইসলাম–‌বিরোধী। গুলশানের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক আবেদন-‌ অভিভাবকরা খেয়াল রাখুন, ছেলেরা যেন ভয়ঙ্কর বিপথে চলে না যায়। আজ তিনি লড়ছেন, বাংলাদেশ লড়ছে। অগ্নিপরীক্ষা আজ সবার, কোনও ব্যক্তি বিশেষের নয়। ‌‌

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি

আরও খবর: গুলশানে হামলাকারীদের প্রশংসায় আইএস-এর ভিডিওবার্তা: বাংলাদেশে আরও হামলার হুমকি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আপাতত গরমেই খেলতে হচ্ছে সাবিনা-সানজিদাদের
আপাতত গরমেই খেলতে হচ্ছে সাবিনা-সানজিদাদের
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর যুবরাজ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর যুবরাজ
অবশেষে মুক্তির বার্তা
অবশেষে মুক্তির বার্তা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ